Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Lok Sabha Election 2019

বিজেপির প্রতি জনসমর্থন দেখে ভয় পেয়েছেন দিদি, কোচবিহারের সভায় দাবি মোদীর

সিপি-এসপি বদলি নিয়ে শনিবার নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লেখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কোচবিহারের সভায় নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

কোচবিহারের সভায় নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৯ ১৪:২৮
Share: Save:

বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। রবিবার কোচবিহারের রাসমেলা মাঠে নির্বাচনী সভা করেন তিনি। সেখানে সারদা, নারদ এবং রোজভ্যালি কাণ্ড নিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলার উন্নয়নের পথে ‘স্পিড ব্রেকার’ বলে উল্লেখ করেন। পিসি-ভাইপোর রাজত্বে বাংলা অনুপ্রবেশকারীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে বলেও দাবি করেন মোদী।

এ দিন নরেন্দ্র মোদী অভিযোগ তোলেন, ‘‘সাধারণ মানুষকে সভায় আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও মানুষ যে ভালবাসা দেখিয়েছেন তাতে আমি অভিভূত। মঞ্চের জন্য রাজ্য প্রশাসন যে জায়গা দিয়েছে, তাতে বেশি লোক ধরবে না। এ ভাবে বাচ্চাদের মতো আচরণ করে নির্বাচন জেতা যায় না। বরং বাধা সত্ত্বেও এত মানুষ যে ভিড় জমিয়েছেন, এটাই দিদির পরাজয়ের পরিচয়।’’

সিপি-এসপি বদলি নিয়ে শনিবার নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লেখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ তোলেন। এমনকি বিজেপির নির্দেশেই এমন পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানান। তা নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে কটাক্ষ করেন মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘আমার প্রতি সাধারণ মানুষের এমন ভালবাসায় স্পিড ব্রেকার দিদির ঘুম উড়ে গিয়েছে। তাই নিজের অফিসারদের উপর রাগ দেখাচ্ছেন। ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন নির্বাচন কমিশনের উপর। জনসমর্থন চলে গেলে কী হয়, তা দিদির আচরণ দেখে বোঝা যাচ্ছে। বিজেপির পক্ষে এই জনসমর্থন দিদিকে আয়না দেখিয়েছে। তাতে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছে উনি। তাই আমাকে কুকথা বলে বেড়াচ্ছেন।’’

কোচবিহারের মোদী যা বললেন

আরও পড়ুন: বারাণসীর গঙ্গা পরিষ্কার করতে পেরেছেন? বাংলার দিকে তাকাচ্ছেন? ময়নাগুড়িতে মোদীকে তোপ মমতার​

সভায় হাজির সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করে মোদী বলেন, ‘‘গরিবের ঘরে গ্যাসে রান্না হচ্ছে আগে ভাবা যেত না, কিন্তু এখন তা সম্ভব হয়েছে। বাড়িতে ঢুকে সন্ত্রাসবাদীদের খতম করা অসম্ভব বলে মনে হত আগে, কিন্তু এখন তাও সম্ভব হয়েছে। আপনারা বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন বলেই জঙ্গিদের বাড়িতে ঢুকে মারা গিয়েছে। অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখানো গিয়েছে আপনাদের সমর্থনের জন্যই। ২০১৪-র আগে প্রায়শই সন্ত্রাসী হামলা হত। জঙ্গিরা কোথা থেকে আসছে, আগের সরকার তা ভাল করেই জানত। তা সত্ত্বেও কোনও পদক্ষেপ করা যায়নি। মুখবুজে পাকিস্তানের হুমকি সহ্য করত। কিন্তু দিল্লিতে আপনারা চৌকিদারকে ক্ষমতায় আনার পর সব হিসাব পাল্টে গিয়েছে। এখন ঘরে ঢুকে সন্ত্রাসবাদীদের নিকেশ করা সম্ভব হয়েছে । এতকিছু সহ্য হচ্ছে না দিদির। তাই মোদী হটাও স্লোগান দিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষ যখন মোদীর রক্ষাকবচ, তখন তাঁকে সরানো কি এতই সহজ?’’

যে মা-মাটি-মানুষ স্লোগান দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল সরকার বাংলায় ক্ষমতা এসেছিল, তা নিয়েও কটাক্ষ করেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘মা-মাটি-মানুষ স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন মমতা। এখন তিনি ‘টুকড়ে টুকড়ে’ গ্যাংয়ের সমর্থক। এতে ভারত মায়ের অবমাননা হয়েছে। রাজনৈতিক ফায়দার জন্য ঘুষখোর দের আড়াল করে মাটির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন দিদি। তৃণমূলের গুন্ডাদের লেলিয়ে দিয়ে মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন উনি।’’ বিজেপি বিরোধী জোটের ওমর আবদুল্লা সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের জন্য আলাদা প্রধানমন্ত্রীর দাবি তোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। তা নিয়েও মমতার বিরুদ্ধে তোপ দাগেন মোদী।

আরও পড়ুন: ভোর থেকে কমল নাথ ঘনিষ্ঠদের বাড়িতে আয়কর দফতরের তল্লাশি, উদ্ধার বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা​

পিসি-ভাইপোর জুটি বাংলাকে ঘুষখোর, গুন্ডা, তোলাবাজ এবং অনুপ্রবেশকারীদের স্বর্গরাজ্য করে তুলেছেন বলেও অভিযোগ করেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘বাংলার উন্নয়নের পথে স্পিড ব্রেকার হয়ে দাঁড়িয়েছেন দিদি। ইচ্ছাকৃত ভাবে কেন্দ্রীয় যোজনাগুলি আটকে দিয়ে রাজ্যের মানুষকে প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছেন।রাজ্যের এক কোটি মানুষকে ৫ লক্ষ টাকা করে চিকিত্সার সুবিধা দিতে চেয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পোঁছে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু দিদি তাতে বাধা দিয়েছেন। একা হাতে রাজ্যবাসীর জীবন নষ্ট করে দিয়েছেন দিদি।’’

রাজ্যের একাধিক দুর্নীতি প্রসঙ্গ টেনে মোদী বলেন, ‘‘গোটা দেশ মা সারদার পুজো করে। কিন্তু দিদি বাংলাকে সারদা কেলেঙ্কারি দিয়েছেন। নারদ মুনি ত্রিলোকে পরিচিত। বাংলায় ওঁর পরিচয় কেলেঙ্কারির মাধ্যমে। ইংরেজিতে রোজ বললে গোলাপ ফুলের কথা মনে পড়ে, কিন্তু এখানে তা কাঁটা হয়ে বিঁধে রয়েছে মানুষের মনে। আপনারা নিশ্চিত থাকুন, চিটফান্ডের টাকা যারই পকেটে গিয়ে থাকুক না কেন, এই চৌকিদার তা বের করে আনবে। চৌকিদার সরকারে এলে তোলাবাজি, গুন্ডাগিরি বন্ধ হয়ে যাবে।’’ নাগরিক সংশোধনী বিলের বাস্তবায়নেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাধা দিচ্ছেন বলে দাবি করেন নরেন্দ্র মোদী।

(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE