Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

যুযুধান দুই প্রার্থীর স্ত্রী

বিষ্ণুপুরের বিদায়ী সাংসদ সৌমিত্র খাঁ তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে এ বার বিজেপির প্রার্থী। তবে কয়েকটি মামলায় জড়িয়ে যাওয়ায় হাইকোর্টের নির্দেশে সৌমিত্র বাঁকুড়া জেলায় ঢুকতে পারছিলেন না।

পথে-পথে: সুজাতা খাঁ ও  প্রীতিকণা সাঁতরা। ছবি: শুভ্র মিত্র

পথে-পথে: সুজাতা খাঁ ও প্রীতিকণা সাঁতরা। ছবি: শুভ্র মিত্র

অভিজিৎ অধিকারী 
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৯ ০১:৩৩
Share: Save:

হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞায় বিজেপি প্রার্থী জেলায় ঢুকতে পারছিলেন না। তাই স্কুল থেকে শিক্ষকতার কাজে ছুটি নিয়ে স্বামীর হয়ে ভোটের প্রচারে নেমে পড়েছিলেন স্ত্রী। অন্যজনের স্বামী তৃণমূল প্রার্থী অবশ্য মাস দুয়েক ধরে প্রচারে চষে বেড়াচ্ছেন। তবুও প্রচারে কোনও ফাঁক থেকে যাচ্ছে না তো— সে কথা ভেবে ঘরকন্না থেকে ছুটি নিয়ে প্রচারে নামেন স্ত্রীও। প্রথম জন বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁয়ের স্ত্রী সুজাতা খাঁ। দ্বিতীয় জন তৃণমূল প্রার্থী শ্যামল সাঁতরার স্ত্রী প্রীতিকণা সাঁতরা। স্বামীদের ছাপিয়ে দুই স্ত্রীর ‘মল্লযুদ্ধে’ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে ‘মল্লভূম’ বলে পরিচিত বিষ্ণুপুর।

বিষ্ণুপুরের বিদায়ী সাংসদ সৌমিত্র খাঁ তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে এ বার বিজেপির প্রার্থী। তবে কয়েকটি মামলায় জড়িয়ে যাওয়ায় হাইকোর্টের নির্দেশে সৌমিত্র বাঁকুড়া জেলায় ঢুকতে পারছিলেন না। তাঁর প্রচার বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের অধীন পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ বিধানসভা এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তাই স্বামীর হয়ে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের বাকি ছ’টি বিধানসভায় প্রচারে নামেন স্ত্রী সুজাতা। তিনি স্কুল শিক্ষিকা। প্রচারের জন্য স্কুল থেকে লম্বা ছুটি নিয়ে ঠা ঠা রোদের মধ্যে এ গ্রামে, সে গ্রামে বিজেপি কর্মীদের নিয়ে চষে বেড়াচ্ছিলেন। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ পর্যন্ত সভা করতে এসে তাঁর এই লড়াইকে স্বীকৃতি দিয়ে গিয়েছেন।

সুজাতা বলেন, ‘‘বেহুলা লখীন্দরের জন্য লড়াই করেছিলেন। আর এখানে আমার স্বামীর সম্মান রক্ষার লড়াই। তৃণমূল ছাড়ার পর থেকেই স্বামীকে অনেক অপমান সহ্য করতে হচ্ছে। ঘরে বসে থেকে এর জবাব দেওয়া যাবে না বলেই প্রচারে নেমেছি।’’ তিনি জানান, প্রচারের কৌশল শিখিয়ে দিচ্ছেন স্বামী ও দলের নেতারা।

তাঁর মতোই কলেজ জীবনে সক্রিয় ভাবে রাজনীতি করেননি তৃণমূল প্রার্থীর স্ত্রী প্রীতিকণাও। আপনার স্বামী তো দিনভর প্রচার চালাচ্ছেন। তারপরেও কেন প্রচারে নামলেন? তাঁর দাবি, ‘‘বিষ্ণুপুর লোকসভা কি কম বড়? স্বামী একা কত দূর যাবেন? মহিলা তৃণমূল কর্মীদের নিয়ে আমিও তাই প্রচারে নেমে পড়েছি।’’

একসময় সৌমিত্র কোতুলপুরের বিধায়ক ছিলেন। তিনি সাংসদ হওয়ায় ওই কেন্দ্রে উপনির্বাচনে জিতে আসেন শ্যামল। পরের বার তিনি রাজ্যের মন্ত্রী হন। সেই সুবাদে দুই নেতার স্ত্রীর মধ্যে কুশল বিনিময়ের সম্পর্ক ছিল। এখন অবশ্য সেই রেশ আর নেই।

প্রচারে বেরিয়ে একে অন্যকে ছেড়ে কথাও বলছিলেন না তাঁরা। সুজাতা দাবি করেন, ‘‘শাসকদল আমার প্রচারে ভয় পেয়ে তাঁদের ঘরের বৌকে প্রচারে নামিয়েছেন। কিন্তু তিনি ‘ফ্লপ’। সব কিছু তো অনুকরণ করা যায় না।’’ প্রীতিকণা সংযমী। তিনি বলেন, ‘‘বিরোধীদের কুকথার জবাব দেব না। সংসারের কাজ সামলে স্বামীর পাশে থেকে স্ত্রীর ধর্ম পালন করছি। এতেই আমি খুশি।’’

স্বামীদের ছায়া যেন ছাড়িয়ে যাচ্ছেন দুই স্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 BJP TMC Election Campaign
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE