লাইনে দাঁড়িয়ে ভোটাররা।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষ প্রতিবন্ধকতা যুক্ত, বয়স্ক, মহিলা-সহ সব ভোটারকে বুথমুখী করতে নানা ব্যবস্থা নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। ব্যতিক্রম হয়নি পশ্চিমবঙ্গেও। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে ভোটের শতাংশের হার কমেছে। যদিও দু’দিন আগে ভোট শেষ হলেও কমিশনের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে শতাংশের হিসেব দেওয়া হয়নি এখনও।
কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে ভোটের হার ছিল ৮২.২০ শতাংশ। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের গড় ছিল ৮২.৮০ শতাংশ। চলতি বছরের নির্বাচনে কমিশনের দেওয়া বিভিন্ন লোকসভা কেন্দ্রের ভোটের হিসেব অনুযায়ী রাজ্যের গড় ৮১.৫৮ শতাংশ। যদিও কমিশনের বক্তব্য, ‘ভ্যালিডেশন’ কাজ চলছে। তাই এখনও সম্পূর্ণ বলা সম্ভব নয়।
অন্যান্য কেন্দ্রকে পিছনে ফেলে চলতি লোকসভা নির্বাচনে বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে ৮৭.৩৯ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। যা রাজ্যের মধ্যে সব থেকে বেশি। ভোট বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ করেছিল কলকাতা উত্তর জেলা নির্বাচন দফতর। তা সত্ত্বেও রাজ্যে ভোটের হারের নিরিখে কলকাতা উত্তরই পিছিয়ে রয়েছে। সেখানে ৬৫.৭৪ শতাংশ ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। কলকাতা দক্ষিণে ভোট পড়েছে ৬৯.৬৫ শতাংশ। ২০১৪ সালে তা ছিল ৬৯.৪১ শতাংশ। ওই বছর কলকাতা উত্তরে ভোটের হার ছিল ৬৬.৬৭ শতাংশ।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
২০১৪ সালের নিরিখে চলতি লোকসভা নির্বাচনে ব্যারাকপুর এবং দমদম ভোটের হারের হেরফের চোখে পড়ার মতো। ২০১৪ সালে ব্যারাকপুরে ভোট পড়েছিল ৮১.৬৩ শতাংশ। এ বার ৭৬.৮১ শতাংশ। ব্যারাকপুরের মতো পাঁচ শতাংশ না-হলেও দমদমে সাড়ে তিন শতাংশ ভোটার গত বারের তুলনায় ভোট কম দিয়েছেন। ২০১৪ সালে দমদমে ৮০.২৩ শতাংশ ভোট পড়লেও এ বার তা কমে হয়েছে ৭৬.৮৮ শতাংশ। অন্যান্য বারের তুলনায় চলতি লোকসভা নির্বাচনে ব্যারাকপুরে গোলমাল কার্যত ছিলই না। শুধু ভোটের সকালে একটি জায়গায় ধাক্কাধাক্কিতে বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংহের ঠোঁট ফাটে। অন্য একটি ক্ষেত্রে দৌড়তে গিয়ে পড়ে যান বিজেপি প্রার্থী। ওই কেন্দ্রের অন্তর্গত আমডাঙায় সংবাদমাধ্যমের গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। তাছাড়া অশান্তি ছিল না। তার পরেও ব্যারাকপুরে ভোট কম পড়ল কেন, তা নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু করেছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। ভোটের দিন দমদমেও অশান্তি ছিল না। তার পরেও সেখানে ভোটদানের হার হ্রাস পেয়েছে।
২০১৪ সালের নিরিখে জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, শ্রীরামপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, জয়নগর, যাদবপুর, জঙ্গিপুর, মুর্শিদাবাদে ভোটের হার বেড়েছে। তার মধ্যে জলপাইগুড়িতে ২০১৪ সালে ভোট পড়েছিল ৮৪.৮৪ শতাংশ। চলতি বছরে তা হয়েছে ৮৬.৪৪ শতাংশ। কোচবিহারে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৮২.৪৮ শতাংশ। আর চলতি বছরে তা বেড়ে হয়েছে, ৮৩.৮৮ শতাংশ। বাকি সব ক্ষেত্রেই এক শতাংশের সামান্য কমবেশি ভোট বেড়েছে। বঙ্গের ওই ১২টি আসনে ভোট বাড়লেও বাকি ৩০টি কেন্দ্রে তা কমেছে। সেই হ্রাসের হার কমবেশি এক-দেড় শতাংশ।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ভোটারদের বুথমুখী করতে কমিশন নানা পদক্ষেপ করেছে। তবে আদতে আমজনতাই স্থির করে, তারা বুথমুখী হবে কি না। ফলে ভোটের হারের হ্রাস-বৃদ্ধি নিয়ে কমিশনের দিকে আঙুল তোলা অর্থহীন। তাঁদের বক্তব্য, দু’চারটি ক্ষেত্রে ভোটের হারের হ্রাস-বৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো হলেও বাকিগুলিই খুবই কম। ফলে এর মধ্যে অন্য কোনও তাৎপর্য খোঁজা অর্থহীন। এই ধরনের ছোটখাটো ভোটের হার পরিবর্তন হয়েই থাকে। যদিও একটি অংশের মতে, কিছু কিছু আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বিগড়ে গিয়েছিল। ভোটের হারে তার ছাপ পড়ে থাকতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy