Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বড়মা নেই, শোরগোল উধাও ঠাকুরবাড়ি থেকে

এ বার অবশ্য ছবিটা একেবারে আলাদা। কারণ, মার্চ মাসে মারা গিয়েছেন মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপাণি দেবী (বড়মা)। তিনি না থাকায় এ বার ভোটে ঠাকুরবাড়ির ছবিটাই যেন আমূল বদলে গিয়েছে।

ভোট দেখতে বেরোনোর আগে বড়মার মূর্তিতে প্রণাম তৃণমূল প্রার্থী মমতা ঠাকুর

ভোট দেখতে বেরোনোর আগে বড়মার মূর্তিতে প্রণাম তৃণমূল প্রার্থী মমতা ঠাকুর

সীমান্ত মৈত্র
ঠাকুরনগর শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৯ ০০:৪৯
Share: Save:

মতুয়াদের ঠাকুরবাড়ি বহু দিন ধরেই ভোটের রাজনীতিতে আলোচনার বিষয়। ভোটের দিনও ঠাকুরবাড়ির হাল-হকিকতের দিকে নজর থাকে সব মহলের। ২০১৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের দিন মতুয়াদের বড়মাকে তৃণমূল ‘হাইজ্যাক’ করেছিল বলে অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধী শিবিরের মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর। তা নিয়ে সকাল থেকে চলেছিল বিস্তর চাপান-উতোর। মতুয়া বাড়ির বড়মা কোন পক্ষে আছেন, তা প্রমাণের জন্য মরিয়া চেষ্টা দেখা গিয়েছিল। অন্য বার ভোটের দিনে নেতা-নেত্রীরা ঠাকুরবাড়িতে ভিড় করতেন সকাল থেকে। মতুয়া ভক্তদের ভিড়ও চোখে পড়ত।

এ বার অবশ্য ছবিটা একেবারে আলাদা। কারণ, মার্চ মাসে মারা গিয়েছেন মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপাণি দেবী (বড়মা)। তিনি না থাকায় এ বার ভোটে ঠাকুরবাড়ির ছবিটাই যেন আমূল বদলে গিয়েছে। সেই উৎসাহ, টানটান উত্তেজনা, ভক্তদের ভিড়, রাজনৈতিক নেতাদের আনাগোনা— সব কিছু থেকেই এ বার অনেক দূরে ঠাকুরবাড়ি।

অথচ, এই বাড়িরই দুই সদস্য এ বার ভোটের লড়াইয়ে মুখোমুখি। বড়মার বড় বৌমা মমতা ঠাকুর তৃণমূলের টিকিটে লড়ছেন। উল্টো দিকে, বিজেপির প্রার্থী বড়মার নাতি শান্তনু। গত উপনির্বাচনে তাঁর দাদা সুব্রত ছিলেন বিজেপির প্রার্থী। সে বার বড়মাকে নিয়ে যে টানাপড়েন চলেছিল দু’পক্ষের— তা এখনও মনে রেখেছেন মতুয়া ভক্তেরা।

কী হয়েছিল সে বার?

শ্রদ্ধা: ভোট দেখতে বেরোনোর আগে বড়মার মূর্তিতে প্রণাম বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুরের।

ঠাকুরবাড়ির একটি সূত্র জানাচ্ছে, ভোটের দিন সকাল থেকেই নিরুদ্দেশ হয়ে যান বড়মা। জানা যায়, ভোরের দিকে নীল-সাদা একটি ট্যাক্সিতে উর্দিধারী কয়েক জন পুলিশকর্মী এসে নিয়ে যান বড়মাকে।

সকাল ৮টা নাগাদ বিষয়টি জানাজানি হয়। বড়মার ঘরে এসে তাঁর ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ দেখেন, মা নেই। মঞ্জুলের ছেলেই সুব্রত আবার সে বারের বিজেপি প্রার্থী। মাকে না দেখে চিৎকার শুরু করেন মঞ্জুল। দু’তরফেই লোকজন জড়ো হয়ে যায়। মঞ্জুল অভিযোগ তোলেন, তৃণমূলের লোকজন বড়মাকে ‘হাইজ্যাক’ করেছে।

সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ বড়মা অবশ্য হাজির হন বাড়িতে। তার আগেই ভোট দেওয়া হয়ে গিয়েছে তাঁর। বড়মা বিষয়টি নিয়ে নিজে কিছু বলেননি। তবে তৃণমূল শিবির থেকে দাবি করা হয়, প্রতি দিনই প্রাতর্ভ্রমণে বেরোন বড়মা। ভোটের দিনেও বেরিয়েছিলেন।

এ দিন অবশ্য তেমন কোনও উত্তেজনা চোখে পড়ল না ঠাকুরবাড়িতে। সকালে বড়মার মূর্তিতে প্রণাম সেরে ভোট দিতে বেরিয়েছিলেন মমতা ঠাকুর। মমতা ও শান্তনু, দু’জনকে বুথে দু’টি পৃথক লাইনে আগে-পরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। তবে কেউ কারও সঙ্গে কথা বলেননি।

ভোট দেওয়ার পরে মমতা বাড়িতে ঢুকে যান। শান্তনুও আসেন বাড়িতে। গাড়ি দুর্ঘটনার জেরে মাথায় এখনও ব্যান্ডেজ। গলায় ‘কলার’ পরা। শান্তনু জানান, শরীর অসুস্থ থাকলেও বেরোতে হয়েছে নানা দিকে।

মমতার কথায়, ‘‘অন্য বার বড়মাকে নিয়ে আমিই যেতাম বুথে। এ বার ওঁর কথা খুব মনে পড়ছে।’’ ঠাকুরবাড়িতে দেখা হয়ে গেল মঞ্জুলকৃষ্ণের সঙ্গেও। তিনিও জানালেন, মায়ের কথা এ দিন মনে পড়ছে।

তবে ঠাকুরবাড়িতে এ দিন কর্মী-সমর্থক বা মতুয়া ভক্তদের ভিড় তেমন চোখে পড়েনি। বড়মার ঘরের সামনে বারান্দায় শুধু দুই মহিলাকে বসে থাকতে দেখা গেল।

যাঁকে নিয়ে এত দিনের টানাপড়েন, সেই মানুষটার অনুপস্থিতিতে অনেকটাই যেন জৌলুস হারিয়েছে মতুয়াদের ঠাকুরবাড়ি।

ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE