প্রচারে পার্থ। নিজস্ব চিত্র
‘‘কী, হয়েছে কী এখানে শুনি তো। চেঁচাচ্ছে কে?’’
বাঁ হাতের তর্জনী দিয়ে কপালে গড়ানো ঘাম সরিয়ে ভিড়ের দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি। তা দেখে ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেলেন মঞ্চে উঠতে চেয়ে ভিড় করে থাকা মেজ-ছোট নেতারা ।
মে মাসের দুপুরে বেলপাহাড়ির মোরাম-মাঠে তখন হাওয়ায়ও ছ্যাঁকা লাগছিল। সেই গরমেও বকাঝকার পরেই হেসে ফেললেন ‘পার্থ স্যার’।
হ্যাঁ, পরিচয় হওয়ার পর থেকে তৃণমূলের মহাসচিবকে এই নামে সম্বোধনই করছেন ঝাড়গ্রামের তৃণমূল প্রার্থী বীরবাহা সরেন। সাঁকরাইলের স্কুল শিক্ষিকার সঙ্গে শিক্ষা দফতরের মন্ত্রীর সম্পর্ক এই রকম হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু নিজের রাজনৈতিক বিদ্যাবুদ্ধিতে তৃণমূলের মহাসচিব এখন এই আসনে দলের নেতা-কর্মীদের শিক্ষক। ঝাড়গ্রামে তিনিই তৃণমূলের শতছিন্ন আশায় একমাত্র সূত্রধর। জঙ্গলমহলের ‘কোর এরিয়া’ হিসেবে পরিচিত এলাকায় দল ও সরকারের সম্মান রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁকে। জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির চেয়ারম্যান সুকুমার হাঁসদার কথায়, ‘‘ভালবেসে দায়িত্ব নিয়েছেন। বেশ কয়েক মাস হল তিনি এখানে অভিভাবকের মতোই আছেন।’’
রাজনীতিতে এই ভালবাসার মূল্যায়ন হবে ভোটের ফলে। ফলে কঠিন পরীক্ষা স্যারেরও। প্রায় সব দিক থেকেই এলোমেলো হয়ে থাকা ঝাড়গ্রামের জনমতকে কতটা ম্যানেজ করতে পারবেন অ্যান্ড্রু ইউলের প্রাক্তন ম্যানেজমেন্ট কর্তা, সেই প্রশ্ন থাকছেই। কলকাতা-ঝাড়গ্রামের ‘ডেলি প্যাসেঞ্জার’ পার্থবাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘পঞ্চায়েতের যে ফলের ভিত্তিতে তৃণমূলকে দুর্বল মনে হচ্ছে, তা তলায় তলায় বদলে গেছে। ওই ধারাটা গত কয়েক মাসে আমাদের সঙ্গে চলে এসেছে।’’ তার সঙ্গে তৃণমূলের নেতারা একটা সহজ রাস্তা দেখছেন। পঞ্চায়েতে সিপিএম বা বামেরা প্রার্থী দিতে পারেনি। তাই বিরোধী ভোট এক জায়গায় গিয়েছে। লোকসভায় ভোট বিভাজনের সুবিধা তৃণমূল পাবে বলেই মনে করছেন তাঁরা।
তার পরেও ঝাড়গ্রাম ‘পুনরুদ্ধার’ যে কতটা কঠিন, পার্থবাবু তা জানেন। আবার কাজটা করতে পারলে তাঁর নির্ভরযোগ্যতা যে বাড়বে, সেটাও তাঁর অজানা নয়। তাই নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর বা সাঁকরইলের রোদে দিনভর ভাজাভাজা হয়েও রাতে স্থানীয় নেতাদের দ্বন্দ্ব মেটাতে বৈঠকে বসছেন নিজের অস্থায়ী আস্তানায়। প্রচারের শেষ পর্বে মুখ্যমন্ত্রীর সফরের সময় তো পর পর তিন দিন সকালে স্নান হয়নি। রাতে ফিরে গা ধুয়েছেন।
আপনার ‘স্যার’ কি খুব কড়া? গোপীবল্লভপুরে জনসভায় মুখ্যমন্ত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে বীরবাহা বলেন, ‘‘মাঝে মাঝে খুব রেগে যান। আসলে খুব গরম তো।’’
ভারী চেহারায় কষ্ট যে বেশিই হচ্ছে, তা স্পষ্ট। তবে স্বীকার করছেন না ষাট পেরনো পার্থবাবু। কলকাতায় হাঁটার সময় কখনও দেখা হয়ে গেলেও মুখ্যমন্ত্রী যাঁকে ছাড় দেন, সেই তিনি জনসভার মঞ্চে একেবারে স্থানীয় নেতাদের মতো পাড়ার সুরেই স্লোগান দিচ্ছেন। মাইক হাতে ঘোষণা করছেন, ‘‘বসে পড়ুন। বসে পড়ুন।’’ দলের কেউ গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করলে সঙ্গে সঙ্গে বলছেন, ‘‘কোনও নালিশ না। ও সব ভোটের পরে।’’
জনসভায় তাঁকে দেখিয়ে ভিড়ের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলে এসেছেন, ‘‘পার্থদা থাকবেন। আপনাদের সব কিছু দেখবেন।’’ দলের দেওয়া এ হেন গুরুদায়িত্বের জেরে মন্ত্রী কি কাহিল? ঘরোয়া আড্ডায় ‘স্যার’ বলছেন, ‘‘দল থাকলে, মন্ত্রিত্ব থাকবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy