Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশের হাতে শান্তি, পুলিশকে নিয়েই প্রশ্ন

গত শনিবার বিকেলে পঞ্চম দফার ভোট নিয়ে উপ নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈনের উপস্থিতিতে একটি ভিডিয়ো-সম্মেলন হয়। সেই বৈঠকে বিভিন্ন লোকসভা কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক ও পুলিশ পর্যবেক্ষকেরা রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৯ ০৩:৪১
Share: Save:

কেন্দ্রীয় বাহিনী নয়। আজ, সোমবার পঞ্চম দফায় ভোট কতটা নির্বিঘ্নে হবে, তার অনেকটাই রাজ্য পুলিশের উপরে নির্ভর করবে বলে মনে করছেন বঙ্গের বিভিন্ন লোকসভা কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক ও পুলিশ পর্যবেক্ষকেরা।

গত শনিবার বিকেলে পঞ্চম দফার ভোট নিয়ে উপ নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈনের উপস্থিতিতে একটি ভিডিয়ো-সম্মেলন হয়। সেই বৈঠকে বিভিন্ন লোকসভা কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক ও পুলিশ পর্যবেক্ষকেরা রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁরা বৈঠকে বলেন, ‘‘অভিযোগ এলে রাজ্য পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিলে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু রাজ্য পুলিশ অনেক ক্ষেত্রে গোলমালের জায়গায় পৌঁছতে এত ঢিলেমি করছে যে, ভোটের দিন পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে।’’ উপ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘‘এমন ঘটনা ঘটলে রিপোর্ট দেবেন। সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে।’’ রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত অবশ্য বলেন, ‘‘এই ধরনের ভাবনার কোনও ভিত্তি নেই। পুলিশ সুপারেরা নিচু তলার অফিসারদের নির্দেশ দেবেন। পুলিশ তৎপর হয়েই কাজ করবে।’’

শনিবারের ভিডিয়ো-সম্মেলনে বিশেষ পর্যবেক্ষক অজয় নায়েক বলেন, ‘‘চতুর্থ দফায় রাজ্যে সে-ভাবে কোনও হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু বুথের বাইরে গোলমালের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ জমায়েত হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে তা দেখানোর ফলে ভোট পরিচালনা প্রক্রিয়া প্রশ্নের মুখে পডেছে। এ বার প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত কুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি) থাকছে। ফলে অশান্তি হওয়ার কথা নয়।’’ তবে এই দফায় বহিরাগত দুষ্কৃতীরা ঢুকে অশান্তি বাধাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিশেষ পর্যবেক্ষক।

উপ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘‘ভোট পরিচালনার কাজে কমিশনের যে চেষ্টার কোনও ত্রুটি নেই, সেটা রাজনৈতিক দল ও সংবাদমাধ্যমকে বোঝানো জরুরি। পর্যবেক্ষকদের যে‌ন ফোনে পাওয়া যায়।’’ সেই সময় হুগলির পুলিশ পর্যবেক্ষক পিভি কৃষ্ণপ্রসাদ বলেন, ‘‘এই জেলার দু’টি লোকসভা আসনে সব রকম ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভোটের দিন পুলিশ নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে, ঢিলে হয়ে গেলে সব ভেস্তে যাবে। পুলিশের ভূমিকা মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়।’’ এ কথা শুনে উপ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘‘এমন ঘটনা ঘটলে কমিশনে রিপোর্ট পাঠান। তার পরে যা করার করা হবে।’’ সব পর্যবেক্ষককেই তিনি এই নির্দেশ দেন।

এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) সকলকে আশ্বস্ত করে জানান, চন্দননগরে ২৫০০ এবং জেলায় পাঁচ হাজারের বেশি পুলিশ আছে। পুলিশ তৎপর থাকবে। পুলিশকে নিয়ে চিন্তা করার কোনও কারণ নেই। হাওড়ার পুলিশ পর্যবেক্ষক রাহুল রাজ জানান, এখানে ৩৮০৫ জন ভোট-দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরেও আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভোটের দিন বহিরাগতেরা এসে গোলমাল পাকাতে পারে। উলুবেড়িয়ার পর্যবেক্ষক সতীশ সিংহ বলেন, ‘‘প্রায় ৪০ কিলোমিটার বিস্তৃত লোকসভা এলাকায় দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবের আশঙ্কা রয়েছে। এখানেই পুলিশের ভূমিকায় সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।’’ ব্যারাকপুরের পর্যবেক্ষক অঞ্জন মানিক জানান, ৩৭টি কিউআরটি কাজ করবে। অন্তত ৩০০ জন জওয়ান শুধু হোটেল, গেস্ট হাউস পরীক্ষা করছেন। তা সত্ত্বেও বহিরাগতেরাই গোলমাল পাকাতে পারে। বুথের বাইরে গোলমাল রোখার ক্ষেত্রে পুলিশের সহযোগিতা জরুরি। বনগাঁর পর্যবেক্ষক কেশব হিঙ্গোনিয়া জানান, বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা এ-পারে এসে গোলমাল করতে পারে বলে খবর পেয়েছেন তিনি। যা শুনে সুদীপ জৈন সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এবং পুলিশকে সতর্ক করে দিয়েছেন। বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে জানান, তিনি ব্যারাকপুরেই সব চেয়ে বেশি অশান্তির আশঙ্কা করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE