Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

অর্ণবের পথ চেয়ে অনীশা, হর্তাকর্তারাও

অর্ণব যে উধাও হয়ে গিয়েছেন, তা জানার পর থেকেই জেলায় নির্বাচন সংক্রান্ত কাজকর্ম এক রকম শিকেয় উঠেছে। প্রথম দিকে কেউই সে ভাবে গুরুত্ব দেননি। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে, ততই আশঙ্কার মেঘ ঘন হয়েছে।

স্বামী নিখোঁজ। কৃষ্ণনগরে জেলাশাসকের দফতরে অনীশা যশ। শুক্রবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

স্বামী নিখোঁজ। কৃষ্ণনগরে জেলাশাসকের দফতরে অনীশা যশ। শুক্রবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৯ ০২:২১
Share: Save:

রাত যত গভীর হয়েছে, ততই থমথমে হয়েছে কর্তাদের মুখ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ইভিএম ও ভিভিপ্যাট যন্ত্রের দায়িত্বে থাকা অফিসার অর্ণব রায়ের বেপাত্তা খবর জানাজানি হওয়ার পর থেকেই দুশ্চিন্তা গভীর হয়েছে। মাঝরাতে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে কোতয়ালি থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছেন অর্ণবের স্ত্রী অনীশা যশ। বারবার কেঁদেও ফেলছেন তিনি।

অর্ণব যে উধাও হয়ে গিয়েছেন, তা জানার পর থেকেই জেলায় নির্বাচন সংক্রান্ত কাজকর্ম এক রকম শিকেয় উঠেছে। প্রথম দিকে কেউই সে ভাবে গুরুত্ব দেননি। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে, ততই আশঙ্কার মেঘ ঘন হয়েছে। এরই মধ্যে শোনা যায়, দফতরের এক আধিকারিককে অর্ণব সমস্ত চাবি দিয়ে গিয়েছেন। অনীশা কান্নাকাটি শুরু করে দেন। তিনি তো বটেই, বহু অফিসার ও সহকর্মী বারবার তাঁর মোবাইলে ফোন করতে থাকেন। সেই যে পৌনে ২টো নাগাদ শেষ বার কথা বলেছিলেন অনীশা, তার পর থেকে প্রতি বারই শোনা গিয়েছে ‘সুইচড অফ’। যা-ও বা দুপুর ২টো নাগাদ শান্তিপুর স্টেশনের কাছে তাঁর মোবাইলের ‘টাওয়ার লোকেশন’ পাওয়া গিয়েছিল, তার পর সব বন্ধ।

এমনিতে জেলায় একশো দিনের কাজের প্রকল্পের নোডাল অফিসার অর্ণব শান্ত স্বভাবের মিতভাষী সংবেদনশীল মানুষ হিসেবেই সহকর্মীদের কাছে পরিচিত। কর্মক্ষেত্রে আন্তরিক এবং পরিশ্রমীও। দিন তিনেক আগে কোনও একটি কারণে জেলাশাসক তাঁকে ভর্ৎসনা করেন বলে প্রশাসনিক ভবনের একটি সূত্রের দাবি। যদিও জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত তা অস্বীকার করেছেন। সহকর্মীদের একাংশের দাবি, তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে এমন কানাঘুষো শুনে মুষড়ে পড়েছিলেন তিনি। যদিও জেলাশাসক জানান, তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরানো হয়নি।

খবর জানাজানি হতেই জেলা প্রশাসনিক ভবনে চলে আসেন জেলা পুলিশের কর্তারা। রানাঘাট মহকুমার পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা শান্তিপুর পুরসভায় গিয়ে রাস্তায় লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখেন। কিন্তু তেমন কিছুই পাওয়া যায় না। নির্বাচনের কাজ কার্যত শিকেয় ওঠে। শুক্রবারও জেলাশাসকের ঘরে একাধিক বার বৈঠকে বসেন অতিরিক্ত জেলাশাসক ও আধিকারিকেরা। এরই মধ্যে নির্বাচন সংক্রান্ত বৈঠকও সেরে নেওয়া হয়। জেলাশাসককে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, তিনি যথেষ্ট দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। একশো দিনের প্রকল্পে কিছুটা পিছিয়ে পড়ার পরে কতটা পরিশ্রম করে ভাল জায়গায় তুলে এনেছেন অর্ণব, তা-ও বারবার বলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘কাজের ক্ষেত্রে অনেক সময়েই ছোটখাটো সমস্যা হয়েই থাকে। এ ক্ষেত্রে তেমন কিছুও ঘটেনি। বৃহস্পতিবারও সকলের সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলেছে। আচরণে কোনও অস্বাভাবিকতা ছিল না। আমরা সবাই অবাক।”

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

জেলার পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কৃষ্ণনগর শহরে তিনটি জায়গায় ইভিএম রাখা আছে। কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজ, সিএমএস স্কুল এবং বিপিসিআইটি কলেজ। সকাল ৮টা নাগাদ বাড়ি থেকে বের হয়ে গভর্নমেন্ট কলেজ এবং সিএমএস স্কুল ঘুরে অর্ণব আসেব বাড়িতে ফিরেছিলেন। স্নান-খাওয়া সেরে সাড়ে ১১টা নাগাদ আবার বেরিয়ে পড়েন। জেলা প্রশাসনিক ভবনে কিছু ক্ষণ থেকে সাড়ে ১২টা নাগাদ তিনি চলে যান বিপিসিআইটি কলেজে। সেখানে তাঁকে টিফিন খেতেও দেখেছেন বলেও দাবি কারও-কারও। তার কিছপক্ষণ পর থেকেই তিনি বেপাত্তা।

দুপুরে জেলাশাসকের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে কেঁদে ফেলেন অনীশা। শুধু বলেন, “সবাই মিলে চেষ্টা করছেন। আমি চাই, ও যেন তাড়াতাড়ি ফিরে আসে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Returning Officer Nadia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE