Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal News

অমিত প্রার্থী বাংলা থেকে, ওড়িশায় মোদী? সভাপতির জন্য ভাবনায় ৩ আসন, জোর জল্পনা

বিজেপি নেতারা বলেন, উত্তরপ্রদেশে ৮০টার মধ্যে ৭৩টা আসন জিতে নেওয়ার অন্যতম কারণ ছিল বারাণসী থেকে নরেন্দ্র মোদীর প্রার্থী হওয়া এবং গোটা রাজ্যে ভোট সামলানোর দায়িত্ব অমিত শাহের হাতে যাওয়া।

বাংলা থেকে প্রার্থী হতে পারেন অমিত শাহ, ওড়িশায় দাঁড়ানোর সম্ভাবনা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

বাংলা থেকে প্রার্থী হতে পারেন অমিত শাহ, ওড়িশায় দাঁড়ানোর সম্ভাবনা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৮ ১৮:১৭
Share: Save:

ঝড়টা এ বার তুলতে হবে দেশের পূর্বাঞ্চলে। কারণ গোবলয়ে আর ঝড় সম্ভব নয়। অন্তত ২০১৯-এর নির্বাচনে। মুখে না বললেও, বিজেপি নেতৃত্বের উপলব্ধি এই রকমই। তাই জোর জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে নরেন্দ্র মোদী আর অমিত শাহের আসন নিয়ে। ওড়িশা থেকে লড়বেন নরেন্দ্র মোদী। পশ্চিমবঙ্গ থেকে অমিত শাহ। বিজেপির অন্দরে জোরদার হচ্ছে এই জল্পনা।

মোদী-শাহকে পূর্বাঞ্চলে পাঠালে ঠিক কী ধরনের লাভ হতে পারে বিজেপির? এ প্রশ্নের উত্তরে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এবং বিজেপির নেতাদের একাংশ উত্তরপ্রদেশে দলের উত্থান-পতনের লেখচিত্র তুলে ধরছেন।

পিছু হঠতে হঠতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার দশা। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের ৮০টা লোকসভা আসনের মধ্যে মাত্র ৮টায় জয়। রামজন্মভূমির রাজ্যে বিজেপি চতুর্থ স্থানে। কংগ্রেসেরও পিছনে।

ঠিক পাঁচ বছর পরে মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো ফল। বিজেপির ঝুলি উপচে দিল উত্তরপ্রদেশ। ৮০টার মধ্যে ৭৩টা আসন বিজেপির।

সে নির্বাচনের আগে দেশজোড়া মোদী ঝড় ছিল ঠিকই। গুজরাত, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়েও সিংহ ভাগ আসন বিজেপি কব্জা করে নিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু জাতপাতের সমীকরণ, রাজ্যের এক একটা অঞ্চলের এক এক রকম রাজনীতি আর নিত্যনতুন সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর জটিল আবর্তে নিয়ত ঘুরপাক খায় যে উত্তরপ্রদেশে, সেই রাজ্যে ওই রকম ফলাফলের সঙ্গে অন্য কোনও রাজ্যের পরিস্থিতি তুলনীয় নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এ বিষয়ে একমত।

বিজেপি নেতারা বলেন, উত্তরপ্রদেশে ৮০টার মধ্যে ৭৩টা আসন জিতে নেওয়ার অন্যতম কারণ ছিল বারাণসী থেকে নরেন্দ্র মোদীর প্রার্থী হওয়া এবং গোটা রাজ্যে ভোট সামলানোর দায়িত্ব অমিত শাহের হাতে যাওয়া। নরেন্দ্র মোদী তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না। কিন্তু বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষিত হয়ে গিয়েছিলেন। অমিত শাহও তখন বিজেপি সভাপতি ছিলেন না, ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু মোদীর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী তথা অন্যতম সেরা কট্টরবাদী মুখ হিসেবে পরিচিতি তৈরি হয়ে গিয়েছিল তাঁর।

২০১৯ লোকসভা ভোটে ওড়িশা থেকে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নরেন্দ্র মোদীর।

এ বার কিন্তু উত্তরপ্রদেশের পরিস্থিতি আলাদা। ২০১৭ সালেই রাজ্যে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় চলে এসেছে বিজেপির সরকার। তার পরে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে ‘অ্যান্টি-ইনকামবেন্সি’র হাওয়াও উঠতে শুরু করে দিয়েছে। সপা-বসপা-কংগ্রেস-আরএলডির মধ্যে সমঝোতার আবহে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপনির্বাচনে বিজেপির পরাজয়ও হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। বিজেপি এমনিতেই জানত যে, উত্তরপ্রদেশে আর নতুন করে আসন বাড়ার জায়গা নেই। গত বছরখানেকে তারা এ-ও বুঝে গিয়েছে যে, উত্তরপ্রদেশে বড় সংখ্যায় আসন কমার আশঙ্কা রয়েছে। সেই ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেওয়া যেতে পারে দেশের পূর্বাঞ্চল থেকে, মনে করছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আর সেই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই এ বার নরেন্দ্র মোদীর জন্য বেছে নেওয়া হতে পারে দেশের পূর্বাঞ্চলের কোনও কেন্দ্র। বিজেপির অন্দরে কান পাতলে এমনই শোনা যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে যে, অমিত শাহও লড়বেন লোকসভায় এবং লড়বেন বাংলার কোনও আসন থেকে।

আরও পড়ুন: রাম মন্দির গড়ার বিকল্প পথ আছে, প্রয়োজনে সে পথেই হাঁটব, বললেন যোগী

ওড়িশায় ২১টা লোকসভা আসন। গত বার বিজেপি জিতেছিল ১টায়। বাংলায় ৪২টা লোকসভা আসন। গত বার বিজেপি জিতেছিল ২টোয়। কিন্তু গত তিন-চার বছরে পরিস্থিতি অনেকটা বদলে গিয়েছে পূর্বাঞ্চলের এই দুই রাজ্যেই। বাংলায় তৃণমূলের এবং ওড়িশায় বিজু জনতা দলের (বিজেডি) মূল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে বিজেপি। তাই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে এই দুই রাজ্যে মোদী-শাহের প্রত্যক্ষ উপস্থিতির আবহ তৈরি করতে বিজেপি নেতৃত্ব এখন তৎপর।

কী শোনা যাচ্ছে মোদী-শাহের প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে?

শোনা যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদী প্রার্থী হবেন ওড়িশার পুরী লোকসভা কেন্দ্রে। অর্থাৎ হিন্দুর এক তীর্থক্ষেত্র থেকে আর এক তীর্থক্ষেত্রে।​

আরও পড়ুন: ‘বিজেপিতে এত দুর্নীতি যে গুলিয়ে ফেলেছিলাম’ শিবরাজের মামলার হুমকিতে বললেন রাহুল

আর শোনা যাচ্ছে অমিত শাহ প্রার্থী হবেন পশ্চিমবঙ্গের উত্তর কলকাতা বা আসানসোল আসনে। বাংলায় এখনও পর্যন্ত যেটুকু হাওয়া নিজেদের পালে টানতে পেরেছে বিজেপি, দলের সর্বভারতীয় সভাপতি বাংলা থেকে ভোটে লড়লে সেই হাওয়া কয়েক গুণ তীব্র হতে পারে বলে বাংলা এবং দিল্লির বিজেপি নেতারা মনে করছেন।

বাংলা থেকে লোকসভা ভোটে লড়তে পারেন অমিত শাহ।

কেন উত্তর কলকাতার নাম শোনা যাচ্ছে অমিত শাহের জন্য? গত লোকসভা নির্বাচনে উত্তর কলকাতায় বিজেপি জেতেনি ঠিকই। কিন্তু রাহুল সিংহ বিজেপির প্রার্থী হয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিলেন ওই কেন্দ্রে। পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন কংগ্রেসের সোমেন মিত্র বা সিপিএমের রূপা বাগচির মতো বাঘা বাঘা প্রার্থীদের। বিজেপি বলছে, এ বারের পরিস্থিতি গত বারের চেয়েও ভাল। উত্তর কলকাতায় অবাঙালি ভোটও প্রচুর। আর সর্বোপরি কলকাতার মতো আদ্যন্ত শহুরে এলাকায় অমিত শাহের মতো কেউ প্রার্থী হলে সব হিসেবই বদলে যায়।

আরও পড়ুন: মালেগাঁও বিস্ফোরণ কাণ্ডে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করল আদালত

কেন শোনা যাচ্ছে আসানসোলের নাম? গত লোকসভা নির্বাচনে আসানসোলে বিজেপি-রই জয় হয়েছিল। আসানসোলেও অবাঙালি ভোট বিপুল সংখ্যায়। আর কয়েক মাস আগে যে সাম্প্রদায়িক হিংসার মুখ দেখেছে আসানসোল, তাতে ওই কেন্দ্রে মেরুকরণও এখন তীব্র।

অমিত শাহের জন্য হাওড়া আসনের কথাও ভাবে হচ্ছে বলে রাজ্য বিজেপি সূত্রের খবর। হিসেব অনেকটা একই রকম। শহুরে এলাকা এবং বড় সংখ্যায় অবাঙালি ভোট।

৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেনে কান পাতলে অবশ্য আরও বেশ কিছু আসনে বিজেপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম শোনা যাচ্ছে। কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি বলে খবর। দক্ষিণ বসিরহাটের প্রাক্তন বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য কৃষ্ণনগর থেকে লড়তে চেয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। কৃষ্ণনগর থেকে লড়তে চান জয়প্রকাশ মজুমদারও। আবার এক রাজ্য নেতা জানালেন, কৃষ্ণনগরের প্রাক্তন সাংসদ সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় যাঁকে চাইবেন, তাঁকেই প্রার্থী করা হবে। সেটা সত্যব্রত নিজেও হতে পারেন। হতে পারেন তাঁর ছেলে গোপাল মুখোপাধ্যায়ও। খবর তেমনই। তবে মুকুল রায়কে যদি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ভোটে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেয়, তা হলে মুকুল রায়কেই ওই আসনে টিকিট দেওয়া হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে।

রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ মেদিনীপুর থেকে লড়বেন, এ প্রায় নিশ্চিত। অমিত শাহ উত্তর কলকাতায় না লড়লে সেখানে ফের টিকিট দেওয়া হতে পারে রাহুল সিংহকে। না হলে রাহুল উত্তরবঙ্গের কোনও আসনে লড়তে পারেন বলে খবর।

উত্তর কলকাতা কেন্দ্রে প্রার্থী হতে পারেন রাহুল সিনহা।

অমিত শাহ যদি আসানসোলে লড়েন, তা হলে সেখানকার বর্তমান সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়কে পাশের কেন্দ্র বর্ধমান-দুর্গাপুরে টিকিট দেওয়া হতে পারে। আর অমিত আসানসোলে না গেলে সেখানে এ বারও প্রার্থী হবেন বাবুলই।

সায়ন্তন বসু পর্যবেক্ষক হিসেবে পুরুলিয়ার দায়িত্বে থাকাকালীনই পঞ্চায়েত ভোট হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটে পুরুলিয়ায় চমকে দেওয়া ফল করেছে বিজেপি। তাই সায়ন্তনকে পুরুলিয়ায় টিকিট দেওয়া হতে পারে বলে একটা জল্পনা রয়েছে। কিন্তু কয়েক দশক ধরে পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্র মাহাতোদের হাতে। প্রথমে কংগ্রেসের দেবেন মাহাতো। তার পরে ফরওয়ার্ড ব্লকের বীরসিং মাহাতো এবং নরহরি মাহাতো। এখন তৃণমূলের মৃগাঙ্ক মাহাতো। তাই পুরুলিয়ায় কোনও মাহাতোকেই প্রার্থী করার কথা বিজেপি ভাবছে বলেও শোনা যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সায়ন্তনকে বারাসতে প্রার্থী করা হতে পারে।

শমীক ভট্টাচার্যকে যদি কৃষ্ণনগর আসনটা না দেওয়া হয়, তা হলে দমদমে প্রার্থী করা হতে পারে। আবার দমদমের জন্য রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও শোনা যাচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে টিকিট পেতে পারেন প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ বিক্রম সরকার। ২০০০ সালে পাঁশকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সিপিআই-এর গুরুদাস দাশগুপ্তকে হারিয়ে জিতেছিলেন বিক্রম সরকার। ডিলিমিটেশনের পরে কিছু অদল-বদল করে সেই পাঁশকুড়া কেন্দ্রই এখন ঘাটাল হয়েছে। তাই বর্তমানে বিজেপি-তে থাকা বিক্রম সরকারের নাম সেখানে শোনা যাচ্ছে। বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে লড়তে পারেন মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়।

রাজ্য বিজেপি নেতারা কে কোন কেন্দ্রে প্রার্থী হবেন, তা নিয়েও জোর জল্পনা।

উত্তরবঙ্গের বালুরঘাটকে সম্ভাবনাময় আসন হিসেবে ধরছে বিজেপি। সেখানে টিকিট দেওয়া হতে পারে দেবশ্রী চৌধুরীকে। বালুরঘাট বিধানসভা কেন্দ্রে ২০০১ সালে আরএসপি নেতা তথা তদানীন্তন কারা মন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরীর সঙ্গে দেবশ্রী জোর টক্কর নিয়েছিলেন। আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করা হতে পারে মাদারিহাটের বিধায়ক মনোজ টিগ্গাকে।

রাজ্য বিজেপি অবশ্য মুখ খুলতে নারাজ প্রার্থী তালিকা নিয়ে। বাংলা থেকে অমিত শাহ লড়বেন কি না, সে বিষয়েও কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না বিজেপি নেতৃত্ব। তবে সম্ভাবনাকে উড়িয়েও দিচ্ছেন না তাঁরা। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র সায়ন্তন বসু বললেন, ‘‘এমন কোনও সম্ভাবনাই নেই, এ রকম কিছু বলছি না। তবে অমিত শাহ বাংলায় লড়বেন বা মোদীজি ওড়িশায়, এমন কোনও আলোচনা এখনও হয়নি।’’ সায়ন্তনের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘যদি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আমাদের কাছে জানতে চায়, আমরা অবশ্যই আগ্রহ দেখাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE