Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মাহেশে নামছে ছ’শো বছরের রথ

এই দীর্ঘ সময়ে পাল্টে গিয়েছে মেলার অনেক অনুসঙ্গই। কিন্তু পাল্টায়নি মেলাকে কেন্দ্র করে লক্ষ মানুষের সেই উন্মাদনার ছবিটা।

প্রস্তুতি: আজ রথযাত্রা। তৈরি মাহেশের রথ। বুধবার। ছবি: দীপঙ্কর দে

প্রস্তুতি: আজ রথযাত্রা। তৈরি মাহেশের রথ। বুধবার। ছবি: দীপঙ্কর দে

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৯ ০৩:২১
Share: Save:

সময়টা নিতান্ত কম নয়। ৬২৩ বছরের ইতিহাস সঙ্গে নিয়ে আজ, বৃহস্পতিবার পথে নামছে হুগলির মাহেশের রথ।

এই দীর্ঘ সময়ে পাল্টে গিয়েছে মেলার অনেক অনুসঙ্গই। কিন্তু পাল্টায়নি মেলাকে কেন্দ্র করে লক্ষ মানুষের সেই উন্মাদনার ছবিটা।

অসুস্থ মায়ের পথ্য কেনার জন্য বনফুলের মালা গেঁথে মাহেশের মে‌লায় এসেছিল রাধারানী। কিন্তু রথের টান অর্ধেক হতে না হতেই ঝড়বৃষ্টিতে লোক ভেঙে গে‌ল। মালা বিক্রি হল না। রাধারানী ভেবেছিল, বৃষ্টি থামলে লোক জমবে। তাই সে বৃষ্টিতে ভিজল। কিন্তু বৃষ্টি থামল না। ক্রমে রাত হল। গাঢ় অন্ধকারে রাধারানী কাঁদতে লাগল।

মাহেশের রথের মেলার এই বর্ণনা রয়েছে সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘রাধারানী’ উপন্যাসে। এখন হারিয়ে গিয়েছেন ফুলমালা বিক্রেতারা। কাটলেট-আইসক্রিমের কামড় বসিয়ে নয়া প্রজন্ম উপভোগ করছে মেলার আনন্দ। রয়েছেআধুনিক নাগরদোলা-টয়ট্রেন। পাল্টেছে অনেক কিছুই, কিন্তু পাল্টায়নি রথ ঘিরে থাকা কালো মাথার সারি। এখনও বিকোচ্ছে ছোট্ট উনুনে ভাজা পাঁপড়, বাদাম আর মুচমুচে জিলিপিও।

দূর-দূরান্ত থেকে এখনও বহু মানুষ আসেন। রথের টানে আত্মীয়ের বাড়িতে চলে আসেন অনেকে। পুলিশের হিসেব বলছে, রথের দিন লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয় এখানে। পূণ্যার্থীদের জন্য রাস্তার ধারে জলসত্রের আয়োজন করে ক্লাব-সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলি। ভিড় সামাল দিতে হিমসিম খেতে হয় পুলিশকে। গত কয়েক বছর ধরে সিসিটিভি, ড্রোনের মতো প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হচ্ছে নিরাপত্তায়। সব মিলিয়ে এ বারেও এক হাজার আটশো পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হবে বলে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট সূত্রের খবর।

জগন্নাথ মন্দিরের প্রধান সেবাইত সৌমেন অধিকারীর কথায়, ‘‘মেলার দিক থেকে দেখতে গেলে এর আমূল পরিবর্তন হয়েছে। তবে প্রভু জগন্নাথের টানে এখনও অসংখ্য মানুষ আসেন। মাহেশের ঐতিহ্য তাই এখনও অটুট।’’

প্রাচীনতা এবং ঐতিহ্যের দিক থেকে পুরীর রথযাত্রার পরেই মাহেশের স্থান। পুরীতে যাওয়ার পথে চৈতন্যদেব এখানের জগন্নাথ মন্দিরে এসেছিলেন। চৈতন্যদেব মাহেশকে ‘নব নীলাচল’ আখ্যা দেন। এখান‌ের রথের মেলায় পা পড়েছিল শ্রীরামকৃষ্ণেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE