জ্ঞানবন্ত সিংহ
বামফ্রন্টের জমানায় রাজ্য তোলপাড় করা দু’টি মামলায় অভিযুক্ত হয়েছিলেন তাঁরা। এন রমেশবাবু আর জ্ঞানবন্ত সিংহ। এ বারের রদবদলে দু’জনকেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দু’টি পদে বসালেন মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত পুলিশকর্তা হিসেবে রমেশবাবুকে কাঠগড়ায় তুলেছিল তখনকার বিরোধী দল তৃণমূল। সেই রমেশবাবুকেই উত্তরবঙ্গের আইজি-র দায়িত্ব দিল মমতার সরকার। এখন তিনি রেল পুলিশের আইজি।
রমেশবাবুর অনেক সহকর্মীর বক্তব্য, রেলের নিরাপত্তা সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ-সহ প্রায় সব দায়িত্বই এখন আরপিএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে কমে আসছে রেল পুলিশের কাজ। এই অবস্থায় রেলের আইজি-র চেয়ে গোটা উত্তরবঙ্গের পুলিশ-প্রশাসনের দায়িত্ব অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রমেশবাবুকে সেই পদেই বসালেন মুখ্যমন্ত্রী।
নবান্নের খবর, নন্দীগ্রাম-কাণ্ডের সময় রমেশবাবু ছিলেন মেদিনীপুর রেঞ্জের ডিআইজি। সিবিআই সেই মামলায় যে-চার্জশিট পেশ করেছিল, রমেশবাবু-সহ তিন আইপিএসের নাম তাতে ছিল না। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জেলা জুড়ে আন্দোলনের হুমকি দেন পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল নেতৃত্ব। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকারও সেই চার্জশিট মানতে চায়নি। নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে অন্য যে-ক’জন পুলিশ অফিসারকে অভিযুক্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা শুরুর অনুমতি চেয়েছিল সিবিআই, রাজ্য সরকার এখনও তা দেয়নি।
রমেশবাবু যাঁর কাছ থেকে উত্তরবঙ্গ পুলিশের দায়িত্ব নিচ্ছেন, সেই জ্ঞানবন্ত সিংহের নাম জড়িয়ে গিয়েছিল রিজওয়ানুর রহমানের অপমৃত্যুর মামলায়। তার জেরে ওই পুলিশকর্তার পদোন্নতি আটকে দিয়েছিল তৎকালীন বাম সরকার। সেই ঘটনায় জ্ঞানবন্তের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে কেন্দ্র করেও কলকাতা জুড়ে আন্দোলনে নেমেছিল তৃণমূল। বছর দেড়েক আগে সেই তৃণমূলেরই শাসনকালে পদোন্নতি হয় জ্ঞানবন্তের। খুব কম সময়ের মধ্যে প্রথমে ডিআইজি এবং পরে আইজি হিসেবে তাঁর পদোন্নতিতে ছাড়পত্র দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। মাস আটেক আগে জ্ঞানবন্তকে আইজি করে পাঠানো হয় উত্তরবঙ্গে। সেখান থেকে এ বার একই রকম গুরুত্বপূর্ণ পদে আনা হল তাঁকে। এ দফার রদবদলে জ্ঞানবন্তকে পশ্চিমাঞ্চলের আইজি করা হয়েছে।
পশ্চিমাঞ্চলের আইজি সিদ্ধিনাথ গুপ্তকে পাঠানো হল আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব দিয়ে। ওই পদে ছিলেন অজয় নন্দা। তাঁকে কাউন্টার ইনসার্জেন্সি ফোর্স (সিআইএফ)-এর আইজি করা হয়েছে। তৃণমূলের শাসনকালের গোড়ায় এই অজয়কেই আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব দিয়েছিলেন মমতা। শাসক দলের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে বছর দেড়েকের মধ্যেই তাঁকে আসানসোল থেকে সরিয়ে মেদিনীপুর রেঞ্জের ডিআইজি করা হয়। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটে পাঠানো হয় বিনীত গোয়েলকে। কিন্তু সারদা-কাণ্ডের তদন্তভার সিআইডি-র হাতে তুলে দেওয়ার সময় রাজ্য সরকার বিনীতকে নিয়ে আসে ওই গোয়েন্দা সংস্থায়। অজয়কে ফের পাঠানো হয় আসানসোল-দুর্গাপুরে। কিন্তু অজয়কে কেন দু’-দু’বার আসানসোল-দুর্গাপুরে কমিশনারের দায়িত্ব দেওয়া হল, কেনই বা সেখান থেকে সরিয়ে তুলনায় কম গুরুত্বের আইজি (সিআইএফ)-পদে বসানো হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নবান্নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy