Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মমতা গুরুত্ব দিচ্ছেন না মুকুলকে, তবু কড়া পার্থ

কোন কৌশলে দলের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের মোকাবিলা করা হবে, সেই প্রশ্নে বিভ্রান্তি বহাল তৃণমূলে! স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করছেন, মুকুলকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। অথচ তাঁর দলেরই নেতাদের মনোভাব সব সময় সে কথা বলছে না!

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৫ ০৩:২৭
Share: Save:

কোন কৌশলে দলের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের মোকাবিলা করা হবে, সেই প্রশ্নে বিভ্রান্তি বহাল তৃণমূলে! স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করছেন, মুকুলকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। অথচ তাঁর দলেরই নেতাদের মনোভাব সব সময় সে কথা বলছে না! সোমবারই যেমন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় নাম না করে কড়া আক্রমণ করেছেন মুকুলকে। মমতার এক সময়ের বিশ্বস্ত সেনাপতি মুকুল অবশ্য এই পরিস্থিতি উপভোগই করছেন!

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জেআইএস-এর সঙ্গে ব্যাঙ্ককের একটি প্রতিষ্ঠানের সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের শেষে এ দিন মুকুলকে নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মুখ খোলেন শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থবাবু। নন্দীগ্রামে দলেরই একাংশের হাতে বাধা পেয়ে ফিরে আসার পরে মুকুল বলেছিলেন, বামফ্রন্ট আমলের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। একটি রাজনৈতিক দলের অবক্ষয়ের ইঙ্গিতই ওই ঘটনায় ধরা পড়ছে। এরই প্রতিক্রিয়ায় পার্থবাবু এ দিন বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে আক্রমণ, মিথ্যাচার বিরোধীরা করছে। দলের মধ্য থেকেও এখন যদি বিরোধীদের মতো কেউ কথা বলেন, তা হলে বলব যে, তাঁর বিবেক এবং মানসিক ভারসাম্য নিশ্চয়ই তিনি হারিয়েছেন!” মুকুল দলীয় সৈনিক হিসাবে অনুশাসন মানছেন না বলেও নাম না করে অভিযোগ করেছেন পার্থবাবু।

মহাসচিবের এমন কটাক্ষের জবাবে মুকুল নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে শুধু বলেছেন, “পার্থদা আমাকে পাগল বলেছেন তো? এই নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।” তৃণমূলের একাংশের মতে, কী নিয়ে আক্রমণ হচ্ছে জেনেও পাল্টা মন্তব্য করতে না চেয়ে মুকুল আসলে কৌশলে বুঝিয়ে দিয়েছেন, পার্থবাবুর অভিযোগ ঠিক নয়! তিনি দলের সৈনিক হিসাবে অনুশাসন ভাঙছেন না!

তৃণমূল নেত্রী ইতিমধ্যেই ঘনিষ্ঠ মহলে বুঝিয়ে দিয়েছেন, মুকুলকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ার কোনও প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করছেন না। কারণ, দলের মধ্যে থেকে কাউকেই প্রায় সঙ্গে পাচ্ছেন না এক সময়ের ‘নাম্বার টু’। দলনেত্রী যখন এই মনোভাব নিয়ে এগোনোর কথা বলছেন, তৃণমূলের আচরণ কিন্তু সব ক্ষেত্রে তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হচ্ছে না। যে ভাবে মুকুলকে নন্দীগ্রামে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে, তাতে তাঁকে সেই ‘গুরুত্ব’ই দেওয়া হয়েছে বলে শাসক দলের একাংশের মত। দলের এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, “মুকুল নন্দীগ্রামে গিয়ে ঘুরে চলে এলে কোনও হইচই হতো না। বাধা দিয়ে বরং ওকে শহিদ সাজার সুযোগ করে দেওয়া হল!” একই ভাবে কখনও সাধন পাণ্ডে বা কখনও অন্য কোনও নেতা মুকুলকে আক্রমণের পথে গিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, রাজ্যসভার এই সাংসদকে মোকাবিলা করা নিয়ে তাঁদের ভিতরে ভিতরে উদ্বেগ আছেই! যেমন পার্থবাবু এ দিন কড়া মন্তব্যই করেছেন।

দীর্ঘ দিন দলনেত্রীর বিশ্বস্ত নেতা থাকার কারণে মুকুল তৃণমূলের অন্দরের অনেক কিছুই জানেন। এখন কি তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করছেন? পার্থবাবু অবশ্য জবাব দিয়েছেন, “এটা বলব না। অনেকেই অনেক কিছু ছিল। কমিউনিস্ট পার্টিও দু’ভাগ হয়েছিল। তাতে কী হল?” মহাসচিবের আরও সংযোজন, “আমি এখনও মনে করি, সে তো এখনও বলেনি যে, দল থেকে বেরিয়ে গিয়েছে! দলের মধ্যেই আছে। দলের মধ্যে থাকতে গেলে যে অনুশাসন দরকার, তা সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।” তাঁরা বাংলার উন্নয়নের কাজে মন দিতে চান। শুধু এক ‘ব্যক্তি’কে নিয়ে আলোচনা করে সময় নষ্ট করতে চান না বলেও বুঝিয়ে দিয়েছেন পার্থবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE