Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Mamata Banerjee

ভোটের কথা ভেবেই জবাব দিন, দলকে বার্তা মমতার

ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে এ দিন তৃণমূলের দীর্ঘ বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী দলের করণীয় এবং অতিমারি ও দুর্যোগ মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা ব্যাখ্যা করেছেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২০ ০৪:৩৩
Share: Save:

আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য তৃণমূলের অন্দরে প্রস্তুতির ঘণ্টা বাজিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের বাছাই করা নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় শুক্রবার তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, করোনা ও ‘আমপান’-এর ক্ষয়ক্ষতিকে কেন্দ্র করেই এই নির্বাচন আবর্তিত হতে চলেছে। তাই বিরোধীদের ‘মিথ্যা’ প্রচারের জোরদার জবাব শাসক দলের নেতা-কর্মীদের এখন থেকেই দিতে হবে।

ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে এ দিন তৃণমূলের দীর্ঘ বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী দলের করণীয় এবং অতিমারি ও দুর্যোগ মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর আক্রমণের মূল নিশানা ছিল বিজেপির দিকেই। তবে এই সূত্রে অন্য বিরোধীদেরও বিঁধেছেন তিনি। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে এ দিনই হরিশ পার্কে এক অনুষ্ঠানেও মুখ্যমন্ত্রীর তির ছিল বিরোধীদের দিকে। যার জবাবে বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেস শাসক দলের দিকে পাল্টা আঙুল তুলেছে।

তৃণমূল সূত্রের খবর, দলীয় বৈঠকে মমতা বলেছেন এই গভীর সঙ্কটের সময়ে বিজেপির মতো বিরোধীদের লক্ষ্য শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতা। সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করে তারা রাজ্য সরকার ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘ব্যাপক ভাবে মিথ্যা প্রচার’ চালাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, বিজেপির এই প্রচারের জবাবে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের একেবারে ব্লক স্তর পর্যন্ত পাল্টা প্রচার করতে হবে। তিনি জানিয়ে দেন, এক বছরের মধ্যে বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে এখন থেকেই বিজেপি-সহ বিরোধী দলগুলির ‘মিথ্যা প্রচারে’র জবাব দিতে হবে তৃণমূলকে। করোনা ও ‘আমপান’ মোকাবিলায় সরকারের ‘সাফল্যে’র কথা অবশ্য ইতিমধ্যেই বিধানসভা ধরে ধরে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলতে শুরু করেছে শাসক দল। বন্দরের বিধায়ক তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম যেমন এ দিনই বিজেপি-সহ বিরোধীদের এক হাত নিয়ে অভিযোগ করেছেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় তারা কেউ কোনও সহায়তা করেনি।

বিরোধী প্রচারের জবাব দেওয়ার পাশাপাশি এ দিনের বৈঠকে দলের নেতা-কর্মীদেরও সতর্ক করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। ত্রাণ বিলির সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ কোন দলের, তা না দেখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তাঁর বার্তা, ত্রাণ নিয়ে কোনও অনিয়ম বা অন্যায় বরদাস্ত করা হবে না। জেলার ভারপ্রাপ্ত নেতাদের কাছ থেকে সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবরও নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সূত্রেই তিনি বলেছেন, রোগ-দুর্যোগে রাজ্য যে পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে, তা মোকাবিলায় সকলকে একসঙ্গে নামতে হবে। কেউ একা এত বড় কাজ করতে পারবে না।

আরও পড়ুন: করোনায় আক্রান্ত সাফাইকর্মী, আতঙ্ক বিমানবন্দরে

ওই বৈঠকের আগে হরিশ পার্কের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘পরিযায়ীদের জন্য অনেকে চিৎকার করছে! কিন্তু কেন্দ্র এক পয়সাও দিচ্ছে না। আমরা ২০০ কোটি টাকা খরচ করছি। ট্রেনের ভাড়া, বাসের খরচ অনেক। ১০ লক্ষ এসেছেন। আরও আসবেন। তার জন্য রোগটাও ছড়িয়ে যাচ্ছে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের জবাবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘সব রাজ্যেই পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফিরছেন। কিন্তু অন্য কেউ তো রোজ রোজ ওঁদের জন্য রোগ বেড়ে যাচ্ছে বলে হইচই করছে না!’’ বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘লকডাউনের শুরুতেই শ্রমিকদের ফেরানো উচিত ছিল। সেটা কেন্দ্রের ব্যর্থতা। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে, জেলায় জেলায় কোয়রান্টিন সেন্টারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও খাবারের অভাবের জন্য বিক্ষোভ হচ্ছে। ওই সেন্টারে থেকেও সংক্রমণ হচ্ছে অনেকের।’’

মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ফের বলেছেন, ‘‘দুর্যোগ এলে রাজনীতি না করে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করতে হয়। এখানে কেউ কেউ আমাদের তাড়াতে চাইছে! আমি তো বলতে পারতাম, নরেন্দ্র মোদীকে তাড়াও। তা তো বলিনি! এখন রাজনীতির সময় নয়।’’ বিরোধীরা অবশ্য প্রশ্ন তুলছে, কোনও দলকে ত্রাণ দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে আবার সহায়তা না করার অভিযোগ কেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE