Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

মমতার মঞ্চে বড় মা, সভায় উপচে পড়া ভিড়

মাসখানেক আগে ঠাকুরনগরে মতুয়াদের নিয়ে সভা করেছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তৃণমূল তখনই চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর সভায় তারা এর ‘জবাব’ দেবে। বৃহস্পতিবার ছিল সেই ‘প্রমাণ’এর পালা।

মধ্যমণি: বড় মা বীণাপাণি দেবীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। বৃহস্পতিবার ঠাকুরনগরে বীণাপাণি দেবীর বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

মধ্যমণি: বড় মা বীণাপাণি দেবীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। বৃহস্পতিবার ঠাকুরনগরে বীণাপাণি দেবীর বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:২০
Share: Save:

মাসখানেক আগে ঠাকুরনগরে মতুয়াদের নিয়ে সভা করেছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তৃণমূল তখনই চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর সভায় তারা এর ‘জবাব’ দেবে। বৃহস্পতিবার ছিল সেই ‘প্রমাণ’এর পালা।

ঠাকুরনগরে মন্দির সংলগ্ন মাঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় ভিড় এতটাই বেশি হয় যে বহু লোক শেষ পর্যন্ত মাঠে পৌঁছতেই পারেননি। বক্তৃতা সেরে মুখ্যমন্ত্রীর কপ্টার উড়ে যাওয়ার পরেও দলে দলে লোক ঢোল-করতাল-সহ সভাস্থলের দিকে চলেছেন। অনেকেরই হতাশ মন্তব্য, ‘‘প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে বাস থেকে নেমে পড়তে হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা শোনা হল না।’’

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা ছিল সংক্ষিপ্ত। প্রথমেই মঞ্চে ‘বড় মা’ বীণাপানি দেবীকে ‘বিশেষ বঙ্গবিভূষণ’ পুরস্কারে ভূষিত করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের সর্বোচ্চ সম্মান বড়মাকে দিয়ে গেলাম। মাকে সম্মান জানানোর মধ্য দিয়ে মতুয়া সঙ্ঘকে সম্মান জানানো হল। এর থেকে বড় কিছু আর হয়তো আমার হাতে নেই। সবটাই দিয়ে গেলাম।’’

রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, এ দিন বড় মা’কে মঞ্চে এনে একটি রাজনৈতিক বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ২০১১ সালে বড় মা’র ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরকে প্রার্থী করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী। কিন্তু পরবর্তীকালে মঞ্জুল দল ছাড়েন। তাঁর ছোট ছেলে শান্তনু ঠাকুর এখন সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি। তাঁর উদ্যোগেই গোপালনগরে সভা করেছিল বিজেপি। সেখানে ভিড়ও হয়েছিল। তবে সাধারণ ধারণায় মতুয়াদের মধ্যে এখনও বীণাপানি দেবীর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত। তাই বড় মা’কে মঞ্চে এনে মমতা তাই দেখাতে পারলেন মতুয়াদের ‘মূলস্রোত’ তাঁর দিকেই।

এ দিন মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, ঠাকুরনগরের অনতি দূরে চাঁদপাড়ায় সরকার একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করবে। ইতিমধ্যেই জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আগে পি আর ঠাকুরের নামে এখানে কলেজ তৈরি করে দিয়েছি। বড় মা’র শতবর্ষে এবার হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করব। মতুয়া সঙ্ঘ বিকাশ পরিষদও তৈরি করে দিয়েছি। আমরা চাই, মতুয়াদের উন্নতি হোক।’’ পর্যটন দফতরকে তাঁর নির্দেশ, দ্রুত মন্দিরে দু’টি ফটক তৈরি করে দেওয়া হোক। চারিদিক আলো দিয়ে সাজিয়ে দেওয়া হোক।

রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘ভোটের দিকে তাকিয়ে ২ বছর আগেই বড় মা’র জন্মদিন পালন করতে হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীকে। আমাদের কাছে নথি আছে, বড় মা’র জন্ম ১৯২০ সালে। এ ভাবে মতুয়াদের মন পাওয়া যাবে না। ভোটেই দেখা যাবে, মতুয়া ভোট কাদের দিকে।’’

তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের অবশ্য দাবি, ‘‘ভোটার কার্ডে অনেক সময় গোলমাল হয়। বড় মা ও-পার বাংলায় জন্মেছেন। তখন ওঁর বয়সের কোনও নথি ছিল না। উনি আমাদের বলেছেন, ১৯১৯ সালে অষ্টমী তিথিতে জন্মেছিলেন। ওঁর মুখের কথাই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’’

এ দিনের সভায় অসম এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জির প্রসঙ্গও উত্থাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী। নাম না করে বিজেপিকে আক্রমণ করে তিনি ফের বলেন, ‘‘অসমে এনআরসি’র নামে বাঙালি খেদাও চলছে। কিছু লোক চক্রান্ত করে ওখানকার মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন। বিভেদ তৈরির চেষ্টা করছেন। আমরা বিভেদ নয়, ঐক্য চাই। বাংলাদেশ থেকে যাঁরা এখানে এসেছেন, যাঁদের ভোটার কার্ড আছে, তাঁদের তাড়ানো যাবে না। আমরা হতে দেব না।’’ একই সঙ্গে কাস্ট সার্টিফিকেটের প্রসঙ্গ তুলে তিনি জানান, মহারাষ্ট্র থেকে আগত মতুয়াদের অনেকেই তাঁর কাছে অভিযোগ করেছেন, ওই রাজ্যে কাস্ট সার্টিফিকেট পেতে তাঁদের বহু সময় লাগছে। সভা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে ওয়াকিবহাল মহলে কথা বলার আশ্বাস দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE