Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

৬৫-তে অবসর কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ে, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবসরের বয়স ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ বছর এবং উপাচার্যদের অবসরের বয়স ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৭০ বছর করার কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৫৭
Share: Save:

বয়স মানুষকে অভিজ্ঞ করে তোলে। পরিণত করে তোলে। এই ভাবনা থেকেই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবসরের বয়স ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ বছর এবং উপাচার্যদের অবসরের বয়স ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৭০ বছর করার কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

‘‘৬০ বছরেই কাজ ফুরিয়ে গেল, এটা আমি মানতে রাজি নই। এখন তো মানুষের গড় আয়ু ৮৫ হয়ে গিয়েছে,’’ সোমবার নজরুল মঞ্চে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

যন্ত্রের থেকে মানুষ কোথায় আলাদা, সেটা বোঝানোর চেষ্টা করেন মমতা। বলেন, ‘‘একটা মেশিনকে দিয়ে কাজ করান আর মানুষকে দিয়ে কাজ করান। দু’‌টোর মধ্যে পার্থক্য আছে। মানুষের ভাবনা অভিজ্ঞতা দিয়ে গড়ে ওঠে। তাই আমরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবসরের বয়স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। আরও বেশি অভিজ্ঞতা নিয়ে আরও বেশি পরিণত হয়ে আরও ভাল করে কাজ করতে পারবেন তাঁরা।’’

বয়স্কদের অনেকেরই বয়সের যে হিসেব ঠিক নেই, সেই প্রসঙ্গে নিজের কথা তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘‘আমরা যারা আগে জন্মেছি, তাদের জন্মদিন অনেক ক্ষেত্রে খাতায়-কলমে ঠিক নেই। গত পরশু আমার জন্মদিন পালন করা হল। কিন্তু সেটা আমার আসল জন্মদিন নয়। মা এটাকে আমার জন্মদিন বলেছেন, সেই জন্য তা পালন করা হচ্ছে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর মতে, আগেকার দিনে মানুষের বয়স নিয়ে এই ধরনের সমস্যা হত। অটলবিহারী বাজপেয়ীরও এই সমস্যা হয়েছিল।

নতুন প্রজন্মকে আশ্বাস দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানান, নতুনদেরও চিন্তার কিছু নেই। তৃণমূলের আমলে ২৩টা নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। আরও ১১টা হতে যাচ্ছে। কয়েক হাজার নতুন স্কুল তৈরি হতে যাচ্ছে। তাঁর সরকার ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমিয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, উপাচার্যদের অনেকে চলে যেতে চান। অনেকে থাকতে চান। মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে একটা বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়া হবে। তারা দেখবে, কারা ৭০ বছর পর্যন্ত কাজ করতে চান।

উচ্চশিক্ষা সংসদের একটি বৈঠকে উপাচার্যদের অবসরের বয়স বাড়ানোর প্রসঙ্গ উঠেছিল। ৬৫ বছরের পরে উপাচার্যদের রাখলে মেডিক্যাল টেস্টেরও প্রয়োজন আছে বলে আলোচনা হয়েছিল সেখানে। কিছু দিনের মধ্যেই রাজ্যের তিন জন উপাচার্যের বয়স ৬৫ বছর হয়ে যাবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মেধা আমরা পাচ্ছি কি? আমরা প্রফেসর চাই। আমরা সেই ধরনের প্রফেসর পাচ্ছি না।’’ একই সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়ে দেন, স্কুলশিক্ষকদের অবসরের বয়স বাড়ানোর পরিকল্পনা এখনই নেই।

উচ্চশিক্ষায় শিক্ষক ও উপাচার্যদের কার্যকাল বাড়ানোর সিদ্ধান্তে বিরোধী রাজনৈতিক মনোভাবাপন্ন শিক্ষক সংগঠনও খুশি। বাম নেতৃত্বাধীন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ওয়েবকুটা-র সাধারণ সম্পাদক কেশব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা এই ঘোষণাকে স্বাগত জানাচ্ছি। তবে দেখতে হবে, নতুন শিক্ষকও যেন নিয়োগ করা হয়।’’

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন জুটা-র সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় অবসরের বয়ঃসীমা বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘‘ইউজিসি নির্দেশিত বেতনক্রমের দাবি কিন্তু বহাল থাকছে।’’ আবুটা-র সভাপতি তরুণ নস্কর বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার আমাদের দাবিকে মান্যতা দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE