Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মমতার তির ফিরল সিপিএম-কংগ্রেসেও

কাটমানি (বখরা) কাণ্ড, শিক্ষক ও সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনে মদত দেওয়া বা বিজেপির দলে নাম লিখিয়ে ‘হার্মাদ’দের ‘ওস্তাদ’ হয়ে উঠে গুন্ডামি করা— নানা অভিযোগেই রবিবার সিপিএমের বিরুদ্ধে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৯ ০২:২০
Share: Save:

লোকসভা ভোটের আগে তাঁর নিশানার কেন্দ্রে ছিল বিজেপি। ভোটের পরে প্রথম ২১শে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে বিজেপির পাশাপাশি সিপিএমের দিকে আবার আক্রমণের তির ফেরালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিঁধলেন কংগ্রেসকেও।

কাটমানি (বখরা) কাণ্ড, শিক্ষক ও সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনে মদত দেওয়া বা বিজেপির দলে নাম লিখিয়ে ‘হার্মাদ’দের ‘ওস্তাদ’ হয়ে উঠে গুন্ডামি করা— নানা অভিযোগেই রবিবার সিপিএমের বিরুদ্ধে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী। কংগ্রেস এবং সিপিএম থেকে লোক ভাঙিয়েই বিজেপি ‘পরগাছা’ হয়ে উঠছে, এমনই অভিযোগ তাঁর। বিজেপির বৃদ্ধি রোখার লক্ষ্য থেকেই এ দিন ‘শহিদ দিবসে’র মঞ্চ থেকে মমতার আহ্বান, ‘‘সিপিএম, কংগ্রেসকে বলব, যে ডালে বসে আছো, সেই ডালটা কেটে ফেলে দিও না! বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ো। আমাকে সমর্থন করার দরকার নেই। তোমাদের সাইনবোর্ড তো বিজেপি নিয়ে নিয়েছে।’’

কিছু দিন আগেই বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেস ও বামেদের পাশে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সিপিএম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব অবশ্য পত্রপাঠ সেই প্রস্তাব খারিজ করেছিলেন। পরের দিনই বিধানসভায় রাজ্য সরকারের তরফে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রী বাম ও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করার কথা বলেননি। ধর্মতলার মঞ্চ থেকে এ দিন স্বয়ং মমতাই স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি কংগ্রেস ও বামকে তৃণমূলকে সমর্থন করার জন্য বলছেন না। তাঁর লক্ষ্য, রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে বিরোধী পরিসর যাতে পুরোপুরি বিজেপির দখলে না চলে যায়।

সিপিএমের দুর্বৃত্ত বাহিনী রং বদলে এখন গেরুয়া শিবিরের হয়ে পেশি প্রদর্শন করছে বলে বেশ কিছু দিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। ধর্মতলার মঞ্চেও তাঁর মন্তব্য, ‘‘সিপিএমকে বলিহারি! হার্মাদেরা এখন বিজেপির ওস্তাদ। খেজুরি, কেশপুর, গুড়াপে তারাই গণ্ডগোল করছে। নতুন বোতলে পুরনো মদ। বিজেপি একটা পরগাছা। নিজের কিছু নেই। এক বার সিপিএম, এক বার কংগ্রেসের কানে কানে গিয়ে বলছে।’’ এই ঘটনা বন্ধ করার জন্য এ বার মুখ্যমন্ত্রীর দাওয়াই— ‘‘সিপিএমে থাকার সময়ে যে সব কাণ্ড-কারখানা করেছে, সেই সব অভিযোগ কিন্তু এখনও আছে। আমি আপনাদের বলছি, সেই সব পুরনো মামলা আবার নতুন করে তুলুন। বিজেপিতে গিয়েছে বলে যেন কেউ পার না পায়!’’

এমনকি, বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন এমনও বলেছেন, ‘‘বিজেপি ১৮টা আসন পেয়েই আমাদের অফিস দখল করছে। আমাদের আছে ২৪টা।’’ ঘটনা হল, বিজেপির ১৮টি বাদ দিলে তৃণমূল পেয়েছে ২২টি আসন, বাকি দু’টি কংগ্রেসের। যে কারণে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র তাঁকে ‘সংশোধন’ করে দিয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘‘আমরা দু’টো আসন জিতেছি বিজেপি ও তৃণমূল, উভয়কে পরাজিত করেই। আপনার দয়ায় কোনও আসন জিতিনি!’’

তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রতি বছরই ২১শে-র মঞ্চে বাম ও কংগ্রেস শিবির থেকে নেতা-বিধায়কদের শাসক দলে যোগদানের একটা পর্ব থাকত। দীর্ঘ দিন পরে এ বার ২১শে-র সভা হল কোনও যোগদান ছাড়াই। বিজেপিকে ঠেকানোর জন্যই তৃণমূলের এমন কৌশল পরিবর্তন বলে রাজনৈতিক শিবিরের মত। তৃণমূল নেত্রী অবশ্য এ দিন বলেছেন, ‘‘আমি কি সব দখল করে নিয়েছি? ত্রিপুরায় পঞ্চায়েতে ৮৬% আসন তো বিজেপি বিনা প্রতিন্দ্বন্দ্বিতায় দখল করেছে। তৃণমূল করলে খবর এক পাতা! আর অন্য কেউ করলে ছোঁয়া পাতা?’’

বিরোধী বাম ও কংগ্রেস অবশ্য ফের অভিযোগ করেছে, তাদের ঘর বারবার ভেঙে বিজেপির সুবিধা করে দিয়েছেন মমতাই। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর অযাচিত পরামর্শ ছাড়াই বিজেপির বিরুদ্ধে আমরা লড়ছি এবং লড়ব। দল ভাঙিয়ে এবং বিরোধীশূন্য করার ডাক দিয়ে উনিই বরং বিজেপির সুবিধা করে দিয়েছেন।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেনবাবুর বক্তব্য, ‘‘আপনার কাছ থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই শিখব না। বিজেপি লোকসভা এবং সারা দেশে গণতন্ত্র ভুলিয়ে দিচ্ছে, সত্যি কথা। কিন্তু বিধানসভায় যখন স্বরাষ্ট্র বাজেটকে গিলোটিনে যায়, তখন আপনার গণতন্ত্র কোথায় থাকে?’’ বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের মন্তব্য, ‘‘বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে হলে মুখ্যমন্ত্রী বরং কংগ্রেসে যোগ দিন! বিজেপি-আরএসএসের মদত থাকা পতাকা নিয়ে ওই কাজ হবে না।’’

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আবার মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে পাল্টা বলেছেন, ‘‘সিপিএম, কংগ্রেস কি তৃণমূলের ডালে বসে আছে? ডাল না কাটার মানে কী? উনি সিপিএম, কংগ্রেসকে সঙ্গে চাইছেন কিন্তু ওরা যাচ্ছে না বলে হতাশায় এ সব বলছেন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Congress CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE