সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সিবিআই নোটিস পাঠিয়েছে খবর পেয়েই দলের এই প্রবীণ সাংসদকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ওঁদের দফতরে যাওয়া তো দূর, নোটিসের জবাবও দিতে হবে না! নেত্রীর পরামর্শে সুদীপ সে দিন তাই করেছিলেন। কিন্তু চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সিবিআই ফের তাঁকে নোটিস পাঠালে আর স্নায়ুর চাপ রাখতে পারেননি লোকসভায় তৃণমূল দলনেতা। তিনি সিবিআই দফতরে যান, এবং প্রথম দিনেই তাঁকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় এই তদন্ত সংস্থা।
তৃণমূল শীর্ষ সূত্রের খবর, সুদীপের এই পরিণতি দেখার পর দলীয় স্তরে মমতা এ বার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এর পর সিবিআই কাউকে নোটিস পাঠালে তার জবাব দেওয়ার আর প্রয়োজন নেই। সিবিআই দফতরে যাওয়ার প্রশ্নও ওঠে না। ওদের যদি কাউকে গ্রেফতার করতেই হয়, তা হলে বাড়িতে এসে গ্রেফতার করে নিয়ে যাক!
তৃণমূল নেত্রীর এই সিদ্ধান্তের কথা ব্যাখ্যা করে দলের মমতা ঘনিষ্ঠ এক নেতা বৃহস্পতিবার বলেন, ওঁর বক্তব্য পরিষ্কার। দিল্লির রাজনৈতিক প্রভুর নির্দেশে সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ করছে সিবিআই। ওদের লক্ষ্য হল, বেছে বেছে তৃণমূলের কিছু নেতাকে গ্রেফতার করা। আর তার মাধ্যমে তৃণমূলকে রাজনৈতিক ভাবে দুর্বল করে দেওয়া। যাতে নোট বাতিল থেকে শুরু করে একাধিক বিষয়ে কেন্দ্র-বিরোধিতার অবস্থান থেকে পিছু হটে তৃণমূল। ফলে জিজ্ঞাসাবাদের ছুতো দেখিয়ে নোটিস পাঠানো একেবারেই নাটক। তাই এর পর দলের কোনও নেতাকে এ ধরনের নোটিস পাঠানো হলে তার কোনও জবাব দেওয়ারই দরকার বোধ করছেন না নেত্রী। নেত্রী বলেছেন, কাউকে গ্রেফতার করার হলে সিবিআই বা ইডি সরিসরি এসে তাঁকে গ্রেফতার করুক।
প্রসঙ্গত, নেত্রীর পরামর্শে সুদীপবাবু যখন সিবিআইয়ের নোটিস শুরুতে অগ্রাহ্য করেছিলেন তখনই প্রশ্ন উঠেছিল, এর আইনি পরিণাম কী হতে পারে? তার উত্তরে সিবিআইয়ের এক শীর্ষ কর্তা ফৌজদারি দণ্ডবিধি উল্লেখ করে জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার তলব কেউ বার বার এড়িয়ে গেলে তাঁকে আইনত অভিযুক্ত হিসাবে ধরে নেওয়া যায়। তখন চাইলে সিবিআই তাঁর নামে পরোয়ানা বার করে সরাসরি গ্রেফতার করতে পারে।
প্রশ্ন হল, সেই সম্ভাবনা জেনেও দলের নেতাদের কেন এমন পরামর্শ দিলেন মমতা? নেপথ্যে তাঁর রাজনৈতিক কৌশল কী?
দলের একাধিক শীর্ষ নেতার মতে, কেন্দ্রে বিজেপি যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে, সেই কথাটা মানুষের মনে গেঁথে দিতে চাইছেন মমতা। সুদীপ গ্রেফতারের পর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সমর্থকদের মধ্যে কেন্দ্র-বিরোধী যে প্রতিক্রিয়া হচ্ছে তাতে পরিষ্কার যে নেত্রীর ওই কৌশল ফল দিচ্ছে। তা ছাড়া কংগ্রেস, আম আদমি পার্টির মতো কিছু সহমর্মী রাজনৈতিক দলও এ ঘটনায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগ করছেন। আহমেদ পটেল ফোন করেছিলেন মমতাকে। অধীর চৌধুরীকেও বলতে হয়েছে, সুদীপের গ্রেফতারে কেন্দ্রের প্রতিহিংসা দেখছেন তাঁরা। সুতরাং, এই কৌশল নেওয়ায় মমতার রাজনৈতিক অবস্থান মজবুত হচ্ছে। সিবিআইয়ের তলব উপেক্ষা করে দলের কোনও নেতা এর পর তাদের দফতরে না-গেলে সন্দেহাতীত ভাবেই কেন্দ্রীয় এই তদন্ত সংস্থাকে চিন্তায় পড়তে হবে। তা ছাড়া দলের কোনও নেতাকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করতে গেলে তার প্রতিবাদ হবে। গণ প্রতিরোধও হতে পারে। জনসমক্ষে এমন ঘটনা ঘটলে বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনীতি নিয়ে মানুষের ধারণা বদ্ধমূল হবে বলে মনে করছেন নেত্রী।
এর পরেও একটি কৌতূহল থেকে যায়। সিবিআইয়ের তৎপরতার মোকাবিলায় মমতার মনোভাব যদি এমনই হয়, তা হলে কি তিনি আশঙ্কা করছেন যে দলের আরও কিছু নেতাকে তলব করতে পারে তারা? জবাবে দলের এক নেতা বলেন, সেই সম্ভাবনা তো আছেই। সুদীপ গ্রেফতার হওয়ার পর মমতা নিজেই বলেছেন, ‘‘মোদী প্রতিহিংসার রাজনীতি করছেন। সিবিআইকে উনি বলেছেন, মুঝে অভিষেক চাহিয়ে, ববি চাহিয়ে, শুভেন্দু চাহিয়ে, মলয় চাহিয়ে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy