এখনও খেত থেকে আলু পুরো ওঠেনি। তবু, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ বার রাজ্যে ব্যাপক আলুর ফলনের ইঙ্গিত দিচ্ছে সব মহলই। কিন্তু অতিরিক্ত ফলনের জন্য দাম মিলবে কিনা, তা নিয়ে এখন থেকেই সংশয়ে রাজ্যের আলুচাষিরা। সেই সংশয় দূর করতে রাজ্যবাসীকে বেশি করে আলু খাওয়ার পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি তরফে ১০ লক্ষ টন আলু কেনার কথাও ঘোষণা করলেন তিনি।
রাজ্যের অন্যতম আলু উৎপাদক এলাকা তারকেশ্বর। এখানকার বালিগোড়িতে শুক্রবার পরিষেবা প্রদান সভা থেকে ওই ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আপনারা বেশি করে আলু খান। এ বার রাজ্যে আলু বেশি উৎপাদন হবে। আপনারা বেশি আলু খেলে চাষিদের সুবিধা হবে। আলুভাজা, মাছের ঝোলে আলু, আলুর দম খান। তবে চাষিদের ভয় নেই। রাজ্য সরকার চাষিদের থেকে দশ লক্ষ টন আলু কিনবে। আলু মিড-ডে মিল, আইসিডিএসের জন্যেও কেনা হবে। এই খাতে সরকারের বাড়তি সাড়ে ছ’শো কোটি টাকা খরচ হবে।’’ অবশ্য বিকল্প চাষের গুরুত্বের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
কৃষি দফতর এবং আলু ব্যবসায়ীদের ধারণা, এ বার রাজ্যে ১ কোটি ১০ লক্ষ টন আলু উৎপাদন হতে পারে। তাতে আলুর দর পড়ে যেতে পারে। ইতিমধ্যেই আলু ব্যবসায়ী সমিতিগুলির তরফে রাজ্য সরকারের কাছে আলু কেনার আবেদন করা হয়। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী সেই আবেদনে সাড়া দেওয়ায় ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ খুশি।
‘রাজ্য আলু ব্যবসায়ী সমিতি’র সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত। আলু ফলিয়েও ভাল দাম না-পেলে চাষির ক্ষতি হবে। রাজ্য আলু কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমরা খুশি।’’ কিন্তু বিরোধীদের অনেকেই মনে করছেন, সামনে লোকসভা ভোট। আলুর দাম না-পেলে চাষিরা বেঁকে বসতে পারেন। বিষয়টি অনুধাবন করেই মুখ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণা। এর পরেও বিরোধীরা মনে করছেন, সরকার আলু কিনলেও সমস্যার পুরো সমাধান হবে না।
আলু ব্যবসায়ীদের একটি সূত্রের দাবি, রাজ্যে প্রতি মরসুমে ৯০-৯৫ লক্ষ টন আলু ফলে। হিমঘরে মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭০ লক্ষ টন আলু রাখা যায়। জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত রাজ্যবাসীর খেতে লাগে আরও ২০ লক্ষ টন। এই সময়ে খেত থেকে আলু সরাসরি বাজারে যায়। কিন্তু এ বার ১ কোটি ১০ লক্ষ টন আলু ফললে বাড়তি আলু নিয়ে সমস্যা হবেই। ভিন্ রাজ্যেও বেশি আলু এ রাজ্যের আলু পাঠানো যাবে না।
দাম না-মেলায় এ দিনই পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা রোডে আলু ফেলে বিক্ষোভ দেখায় সিপিএমের কৃষক সংগঠন। বহু চাষি তাতে যোগ দেন। কুইন্টালপ্রতি ন্যূনতম ৯০০ টাকা দরে আলু কেনার দাবি ওঠে। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কৃষক ও খেতমজুর সংগঠনের নেতা নারায়ণচন্দ্র নায়েকের দাবি, ‘‘সরকার এর আগেও আলু কিনেছিল। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা ভাল নয়। আলুর দাম না-থাকলে লোকসান হবেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy