Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

জনজাতির মন জয়ে মমতার ত্রিমুখী কর্মসূচি, কমিটির আহ্বায়ক ঋতব্রত!

নবান্নের খবর, মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জনজাতি সমাজের জন্য একটি ‘কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট কমিটি’ গড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, সিপিএমের বহিষ্কৃত তথা রাজ্যসভার বর্তমান সদস্য ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে সেই কমিটির আহ্বায়ক করা হলেও শাসক দলের কোনও মন্ত্রী, সাংসদ বা বিধায়ক তাতে জায়গা পাননি।

ব্রত-কথা: ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা অনুব্রত মণ্ডলের। শুক্রবার নবান্নে। —নিজস্ব চিত্র।

ব্রত-কথা: ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা অনুব্রত মণ্ডলের। শুক্রবার নবান্নে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৮ ০৩:৪৪
Share: Save:

আপাতদৃষ্টিতে প্রশাসনিক পদক্ষেপ। কিন্তু নবান্ন সভাঘরে জনজাতি প্রতিনিধিদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুক্রবারের বৈঠকের ভিন্ন রাজনৈতিক তাৎপর্য দেখছে প্রশাসনিক মহল। জনজাতি সমাজের জন্য তিনটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। পঞ্চায়েত ভোটে জঙ্গলমহলে শাসক দলের প্রভাব হ্রাসের ক্ষত সারানোর উদ্দেশ্য সেই ত্রিমুখী কর্মসূচিতে স্পষ্ট বলে মনে করছেন অনেক কর্তা।

নবান্নের খবর, মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জনজাতি সমাজের জন্য একটি ‘কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট কমিটি’ গড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, সিপিএমের বহিষ্কৃত তথা রাজ্যসভার বর্তমান সদস্য ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে সেই কমিটির আহ্বায়ক করা হলেও শাসক দলের কোনও মন্ত্রী, সাংসদ বা বিধায়ক তাতে জায়গা পাননি। কমিটির সদস্য হবেন এলাকা-ভিত্তিক জনজাতি প্রতিনিধিরা। কমিটি আপাতত কাজ করবে জনজাতি অধ্যুষিত ১৫০ ব্লকে। বাসিন্দাদের অভাব-অভিযোগ শোনা, আরও উন্নয়ন প্রকল্প করা, চালু প্রকল্পগুলির সুবিধা তৃণমূল স্তর পর্যন্ত পৌঁছচ্ছে কি না, তার দেখভাল, সরকার ও জনজাতি সমন্বয়ের কাজ করবে কমিটি। ‘‘বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের নির্যাস, উন্নয়নের সমবণ্টন হতে হবে,’’ বলেন এক মন্ত্রী।

শাসক-নেতাদের একটি অংশের ধারণা, ভেবেচিন্তেই ওই কমিটিতে পরিচিত তৃণমূল নেতাদের রাখেননি মমতা। তাঁদের যুক্তি, জঙ্গলমহল, বিশেষত জনজাতি এলাকার ভোটে ফল যে আশানুরূপ হয়নি, তার জন্য অনেকাংশে দায়ী সেখানকার নেতাদের একাংশের ভাবমূর্তি। তাঁদের আচরণ, জনসংযোগ ঠিকঠাক ছিল না। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা তৃণমূল স্তরে না-পৌঁছনোয় ক্ষোভ বেড়েছে। একেবারে নতুন মুখ নিয়ে গঠিত কমিটি জনজাতি সমাজের মুখ ফেরানো অংশের মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে আশা করছেন মন্ত্রীদের অনেকেই।

দ্বিতীয়ত, নবান্ন সব জেলা প্রশাসনকে লিখিত নির্দেশ দিয়েছে, জনজাতি সমাজের কারও জমি কেনা বা তার চরিত্র বদল করা যাবে না। প্রশাসনের একাংশের অনুমান, জনজাতির মধ্যে ক্ষোভ বাড়ার অন্যতম কারণ জমির হাতবদল। এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত জনজাতি-প্রতিনিধিদের এই বিষয়টি পৃথক ভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তৃতীয়ত, বৈঠকে প্রায় ৮০০ প্রতিনিধিকে স্মার্টফোন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জনজাতি সমাজে প্রচলিত সব ভাষায় তৈরি একটি অ্যাপ থাকবে তাতে। সরকারি পদক্ষেপ, প্রকল্পের কথা জানা যাবে তার মাধ্যমে। প্রতিনিধিরা সেই অনুযায়ী প্রচার করবেন। তথ্য আদানপ্রদানের জন্য তৈরি হবে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। গোটা কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের জন্য অবসরপ্রাপ্ত এক আইপিএস-কে ‘নোডাল অফিসার’ হিসেবে নিয়োগ করবে রাজ্য।

সব থানা এলাকা থেকে ৫-৬ জন করে জনজাতি প্রতিনিধি বৈঠকে যোগ দেন। পুলিশের গাড়িতে তাঁদের আনা হয়, ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী ফেসবুকে জানান, ‘আমাদের সরকার সব সম্প্রদায়ের মানুষের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অনেক কাজ হয়েছে। আগামী দিনে তা আরও ছড়িয়ে দিতে চাই আমরা।’

ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্ত ঋতব্রতকে কমিটির আহ্বায়ক করায় তীব্র কটাক্ষ করেছেন ডিওয়াইএফ নেতা শতরূপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আবার প্রমাণ করলেন, ধর্ষণের ঘটনায় উনি ধর্ষিতার পক্ষে নন, অভিযুক্তের পক্ষে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ritabrata Bhattacharya Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE