Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কাজলের জন্য রইল সতর্কবার্তা

বিঁধে থাকা কাজল-কাঁটা নিয়ে খচখচানি সেই কবেকার। জেলার সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সেই প্রসঙ্গ উসকে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই।

প্রশ্নোত্তর: তখন বোলপুরের গীতাঞ্জলি মঞ্চে সপার্ষদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলার কাজের খতিয়ান জেনে নিচ্ছেন নিজেই। ছবি:বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

প্রশ্নোত্তর: তখন বোলপুরের গীতাঞ্জলি মঞ্চে সপার্ষদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলার কাজের খতিয়ান জেনে নিচ্ছেন নিজেই। ছবি:বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
নানুর শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৭ ০৩:১০
Share: Save:

বিঁধে থাকা কাজল-কাঁটা নিয়ে খচখচানি সেই কবেকার। জেলার সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সেই প্রসঙ্গ উসকে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই।

নানুরের প্রাক্তন যুব নেতা কাজল শেখের ভাই তথা কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজের উদ্দেশে সোমবারের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ওকে (কাজলকে) বলে দেবে যেন কোনও সমস্যা না করে (নট্ টু ক্রিয়েট এনি প্রবলেম)। তোমার ভাইয়ের নামে অনেকগুলো মামলা আছে। ওকে বলে দেবে আর কোনও সমস্যা তৈরি যেন না করে (ফারদার নট টু ডু এনিথিং)।’’ একটু থেমে যোগ করেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত আমরা কিছুই করিনি। ওকে খুঁজছি। কিন্তু, জানি ও গ্রামেই আছে।’’

কয়েক মাস আগে নাম না করে তাঁরই খাসতালুকে দাঁড়িয়ে কাজলকে ‘ক্রিমিনাল’ বলে দেগেছিলেন বীরভূমের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ফিরহাদ হাকিম। কাজলকে তৃণমূলেরই কেউ নন বলে বারবার দাবি করে এসেছেন দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলও। তারপরে খোদ দলনেত্রীর এমন হুঁশিয়ারি সেই বাতাবরণে নতুন মাত্রা যোগ করল। জেলা রাজনীতির কারবারিদের মতে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই বার্তা গুরুত্বপূর্ণ।

কেননা, বিধানসভা ভোটে গোটা রাজ্যে শাসকদল যেখানে হই হই করে জিতেছে, সেখানে নানুরের জেতা আসনে সিপিএমের শ্যামলী প্রধানের হারতে হয়েছে গদাধর হাজরাকে। তৃণমূলেরই একটি অংশের এখনও বিশ্বাস, কাজল পরোক্ষে সিপিএম প্রার্থীকে সাহায্য করায় হারতে হয়েছে গদাধরকে।

মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে কাজলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর এক অনুগামী বলেন, ‘‘আমাদের দাদা প্রথম থেকেই দলে ছিলেন। দলেই আছেন। আগামী দিনেও তৃণমূলেই থাকবেন। অনুব্রত মণ্ডল যেমনটা বলবেন, তেমনই মেনে নেওয়া হবে।’’ ঘটনা হল, গত বছরের অগস্টে বোলপুরে গীতাঞ্জলি হলেও প্রশাসনিক বৈঠক থেকে নাম না করে কাজল শেখের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, এ বার মুখ্যমন্ত্রীর সুর ছিল অনেকটাই চড়া।

এ দিনের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে পুলিশের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ: ‘‘সেভ ড্রাইভ, সেভ লাইফ নিয়ে আরও শক্ত হতে হবে। পরিকাঠামো, ম্যান পাওয়ার যা লাগবে তা করে দেব। কিন্তু বেপরোয়া গাড়ি চালানো সহ্য করব না।’’

এরপরেই জেলার নানা প্রান্ত থেকে বোমা উদ্ধার হওয়ায় পুলিশ, প্রশাসনকে সতর্ক করেন মুখ্যমন্ত্রী। গত ছ’মাসে লাভপুর, নানুরের মতো এলাকা থেকেই কয়েক’শো বোমা উদ্ধার হয়েছে। পুলিশের একটি সূত্রের মতে, প্রতিটির নেপথ্যে রয়েছে বালির ঘাটের দখল কিংবা এলাকায় কর্তৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব। তৃণমূলের দু’গোষ্ঠীর লড়াইয়ে গত ২১ এপ্রিল লাভপুরের দরবারপুরে বোমা বাঁধতে গিয়ে বিস্ফোরণে ন’জনের মৃত্যু হয়।

সে প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, ‘‘পাড়ুই বলুন আর নানুর বলুন, আমি শুনেছি গুন্ডারা মুঙ্গের থেকে আর্মস নিয়ে আসছে। এটা বরদাস্ত করব না। পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ডিএসপি, আইজি ডিজি সকলকেই বলছি চোখ-কান খুলে রাখুন। কোনও বোমার কারখানা এখানে চলবে না। আর্মস রেসকিউ করুন।’’

একটু থেমে যোগ করেন, ‘‘গুন্ডাগিরি, বদমাইসি চলবে না। গায়ের জোরে তরোয়াল দিয়ে এলাকা দখলও চলবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE