Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

প্রতিবাদে পথে নামছেন মমতা, আহ্বান শান্তিরও

আগামী সপ্তাহে পরপর তিনদিন সিএবি’র প্রতিবাদে  মিছিল করবে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, প্রতিবাদ করুন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে।

ছবি: এএফপি।

ছবি: এএফপি।

কেশব মান্না
দিঘা শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:৪০
Share: Save:

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় দলের কর্মসূচিতে পথে নামছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। আগামী সপ্তাহে পরপর তিনদিন সিএবি’র প্রতিবাদে মিছিল করবে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, প্রতিবাদ করুন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে।

একইসঙ্গে বিজেপিকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলায় কোনও অবস্থায় সিএবি এবং এনআরসি চালু করতে দেব না। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে রাষ্ট্রপতি সই করার পর তা আইনে পরিণত হয়েছে ঠিক। কিন্তু সেই আইন রাজ্য সরকার কার্যকর করবে না। এখানে কোনও ডিটেনশন ক্যাম্প করতে দেব না। আমরা চাই সব জাতি, সব ধর্ম ও বর্ণের লোকেরা একসঙ্গে মিলেমিশে থাকুক।’’

শিল্প ও বাণিজ্য সম্মেলন শেষ করে শুক্রবার দিঘা থেকে কলকাতা রওনা হওয়ার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, বিজেপি নিজের পকেট ও পার্টিকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য গায়ের জোরে দেশে সিএবি এবং এনআরসি লাগু করার চেষ্টা করছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘জিএসটি এবং নোট বাতিলের সময় কেন্দ্রীয় সরকারকে বারবার নিষেধ করেছিলাম। গোটা দেশে অর্থনীতি এখন কালো মেঘে ছেয়ে গিয়েছে। সিএবি এবং এনআরসি নিয়েও গোড়া থেকে সংসদের ভেতরে এবং বাইরে আমরা বলে আসছি। যা অবস্থা তাতে নোট বাতিলের মতনই অন্ধকারের দিকে ঝুঁকছে গোটা দেশ।’’

আরও পড়ুন: পথে বাম-কংগ্রেস, ইস্তফার তরজায় বিজেপি-তৃণমূল

ওই আইনের বিরোধিতায় আগামী সোমবার উত্তর কলকাতায় বি আর আম্বেদকর মূর্তির পাদদেশে থেকে জোড়াসাঁকো পর্যন্ত মিছিল করার কথা ঘোষণা করেন মমতা। তাতে নিজেও থাকবেন। পরের দিন অর্থাৎ আগামী মঙ্গলবার যাদবপুর ৮ বি বাসস্ট্যান্ড থেকে একই রকম প্রতিবাদ মিছিল হবে যদুবাবুর বাজার পর্যন্ত। বুধবার হাওড়া ময়দান থেকে ডোরিনা ক্রসিং। তারপর আগামী রবিবার রাজ্যের প্রত্যেকটি জেলার সদর শহর এবং আগামী সোমবার প্রতিটি ব্লকে সব ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায়ের লোকেদের নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল করার নির্দেশ দেন মমতা।

মমতার কথায়, ‘‘বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি কেন্দ্রকে। দেশের প্রত্যেকটি রাজ্যের আলাদা আলাদা আবেগ রয়েছে। সেই আবেগে আঘাত হানবেন না। তাতে আগুন জ্বলবে। আর সেই আগুনের হাত থেকে কেউ রেহাই পাবেন না।’’

গোটা দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বিজেপিকে ‘ওয়াশিং মেশিন’ বলেও কটাক্ষ করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘জিএসটি চালু হওয়ার পরে বিজেপি ওয়াশিং মেশিন হয়ে গিয়েছে। যে কোনও দুর্নীতি করে বিজেপি থেকে যারা গিয়েছেন, তাঁরাই দুর্নীতিমুক্ত হয়ে গিয়েছেন। এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে আমাদের অবস্থানকে স্বাগত জানিয়ে যে সব বিরোধী দল আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাদেরকে ধন্যবাদ জানাব। ইতিমধ্যে পঞ্জাব, কেরলে রাজ্য সরকার সিএবি এবং এনআরসি চালু করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। তারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর জন্য আমাদের জেলে পাঠাতে পারে। আরও অনেক বেশি অত্যাচার করতে পারে আমাদের। কিন্তু তার জন্য আমরা প্রস্তুত। কোন অবস্থাতেই দেশকে দ্বিখণ্ডিত-ত্রিখণ্ডিত হতে দেব না।’’

পরপর কয়েক দিনে প্রতিবেশী বাংলাদেশ এবং জাপানের রাষ্ট্র নেতৃত্ব যেভাবে ভারতে আসবেন না বলে জানিয়েছেন, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক বরাবরের। কিন্তু একটা দল ক্ষমতায় এসে দেশের স্থায়িত্বকে নষ্ট করে দিচ্ছে।’’

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের এবং নাগরিক পঞ্জি নিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে সওয়াল করলেও বিজেপির ‘সাম্প্রদায়িক’ রাজনীতি নিয়ে অত্যন্ত সতর্ক মমতা। তাঁর দাবি, ‘‘বিজেপি সাম্প্রদায়িক ভাবে খেলছে। কিন্তু আমরা সাম্প্রদায়িক তাস খেলব না। আমরা চাই সব সম্প্রদায়ের লোকেরা মাথা ঠান্ডা রেখে গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করুক।’’

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে উত্তাল পরিস্থিতির জন্য আগামী ১৭ ডিসেম্বর দিল্লি সফর বাতিল করার কথা এ দিন ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Citizenship Amendment Act TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE