Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
State News

বামেদের নিষ্প্রভ হরতাল, মোদীকে তুলোধনা মমতার, মিছিল-মিটিঙে ধ্বস্ত শহর

আপাতদৃষ্টিতে প্রভাব ফেলল না বামেদের ডাকা হরতাল। বাংলা জুড়ে জনজীবন প্রায় স্বাভাবিক ছিল। গাড়িঘোড়া চললেও যাত্রী সংখ্যা ছিল কিছুটা কম।

পুলিশের হ্যান্ডমাইক হাতে মমতা। ছবি: সুমন বল্লভ।

পুলিশের হ্যান্ডমাইক হাতে মমতা। ছবি: সুমন বল্লভ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ১৮:১৯
Share: Save:

আপাতদৃষ্টিতে প্রভাব ফেলল না বামেদের ডাকা হরতাল। বাংলা জুড়ে জনজীবন প্রায় স্বাভাবিক ছিল। গাড়িঘোড়া চললেও যাত্রী সংখ্যা ছিল কিছুটা কম। অন্য দিকে, নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিছিলে বিপুল সাড়া দেখা গেল। পথে নামলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। ফলে নোট বিতর্কে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদের লড়াইয়ে তৃণমূল বামেদের পিছনে ফেলে দিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।

বামেরা অবশ্য জনপ্রভাবের নিরিখে হরতালকে মাপছে না। সংগঠিত ভাবে হরতাল সফল করার শক্তি যে তাদের এখন আর তাঁদের নেই, সে কথা বাম নেতারাও জানতেন। এ রাজ্যে তাঁদের হরতালের ডাক দেওয়ার পিছনে ছিল আসলে মমতার থেকে নিজেদের আলাদা করে দেখানোর রাজনীতি। মোদীর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে যা কিছু করার শুধু তৃণমূল নেত্রীই করছেন— এই ধারণা ভাঙতে চেয়ে হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছিল। হরতালের বিরোধিতা যে মমতা করবেন, তাও বাম নেতারা জানতেন। তাঁদের যুক্তি, তৃণমূল তথা রাজ্য সরকার হরতালের বিরোধিতা করায়, তাদের ‘রাজনৈতিক মুখোশ’ খুলে গিয়েছে।

মমতা সোমবার পথে নেমে মোদীকে কার্যত তুলোধনা করেছেন। ‘স্বৈরাচারী’ থেকে ‘ফেসলেস মোদী’— প্রধানমন্ত্রীকে বিদ্ধ করেছেন বিভিন্ন ‘উপমা’য়। মোদীর কারণেই চাষিদের ঘরে খাবার নেই। শ্রমিকের ঘরও খাদ্যশূন্য। গোটা দেশকে রসাতলে পাঠিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী মজায় ঘুমাচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন মমতা। অভিযোগ করেছেন, কেউ প্রতিবাদ করলে মোদী ভয় দেখাচ্ছেন। নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত যে ভাবে হঠাত্ নেওয়া হয়েছে, তাকে তিনি ‘উঠল বাই, তো স্বর্গে যাই’ বলে কটাক্ষ করেছেন। ডোরিনা ক্রসিং-এ দাঁড়িয়ে এ দিন মমতা বলেন, ‘‘মোদীর হঠাত্ করে ভগবান হওয়ার ইচ্ছে হয়েছে। উনি ক্যাশলেস সমাজ নিয়ে আসবেন নাকি! অথচ গ্রামে ব্যাঙ্ক নেই। নোটও নেই।’’ সিপিএমকে হরতালের পথে না হেঁটে রাস্তায় নেমে স্লোগান দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। নোট বাতিলের পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূলের এই পথে নামা নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এটা তৃণমূলের একার নয়, মানুষের আন্দোলন।’’

মোদী সরকারের নোট বাতিলের বিরুদ্ধে এ দিন কলেজ স্কোয়্যার থেকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত মিছিল করে তৃণমূল। মূলত কলকাতা এবং সংলগ্ন জেলা থেকে প্রচুর কর্মী ও সমর্থক মিছিলে অংশ নেন। এই ইস্যুতে তৃণমূল, কংগ্রেস-সহ মোদী-বিরোধী দলগুলি আগেই দিল্লিতে ঠিক করে, সোমবার আক্রোশ দিবস পালন করবে। সেই মতো তৃণমূলের তরফে এই মিছিলের ডাক দেওয়া হয়। পাশাপাশি বামফ্রন্ট হরতাল ডাকে। তৃণমূলের মিছিলের প্রথম দিকে দেখা যায় টলিউডের একঝাঁক তারকা সহ লেখক ও বিদ্বজ্জনদের। ছিলেন দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, দেব, মানালি, অনীক ধর, মনোময় ভট্টাচার্য, অন্তরা চৌধুরী, রুদ্রনীল ঘোষ সহ অনেকেই।। অনেকটা পিছনে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশের হ্যান্ডমাইক হাতে নিয়ে মমতাকে মিছিল নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়। ‘তানাশাহি নেহি চলেগা’, ‘মোদী সরকার হায় হায়’— স্লোগান দিতে দিতে মিছিল এগিয়ে যায় কলেজ স্কোয়্যার থেকে নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট, হিন্দ সিনেমার সামনে দিয়ে গনেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ হয়ে ডোরিনা ক্রসিং-এর দিকে। মিছিলে মমতার পাশে একমাত্র অরূপ বিশ্বাস ছাড়া আর কোনও চেনা তৃণমূল নেতাকে দেখতে পাওয়া যায়নি। মমতার মতে ‘ক্যাশলেস’ আসলে ‘বেসলেস’। আর সেই ‘বেসলেস’ কাজ করতে মোদী নাকি কোনও কোনও রাজনৈতিক দলকে হাত করে নিয়েছেন। কিন্তু, তৃণমূলকে কোনও ভাবেই হাতে আনা সম্ভব নয়। মোদীর রাজনৈতিক অস্তিত্ব নির্মূল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়ার পাশাপাশি মমতা এ দিন আভাস দিয়েছেন, মোদীর বাসভবনের সামনে তিনি ধর্নায় বসবেন।

বামেরাও এ দিন মৌলালি থেকে মিছিল করে মল্লিকবাজার পর্যন্ত যায়। সেই মিছিলে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, সিপিআইয়ের মনোজ ভট্টাচার্য-সহ অন্য নেতারা ছিলেন। মল্লিকবাজারে পুলিশের একটি কিয়স্কের উপর দাঁড়িয়ে সূর্যবাবু বলেন, ‘‘আমরা কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলিনি। নতুন টাকা দ্রুত সরবরাহের ব্যবস্থা করার কথা বলেছি। প্রশ্ন তুলেছি, টাকা ট্রান্সফার হয়ে কী ভাবে বিদেশে এত টাকা চলে যাচ্ছে? আসলে মোদী সাধারণ মানুষের স্বার্থে কোনও কাজ করছেন না।’’ তৃণমূলের আন্দোলন যে লোক দেখানো, সেই অভিযোগও এ দিন করেন বাম নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, মমতা যদি মোদীর বিরোধী হতেন তবে হরতালের বিরোধিতা করতেন না। বাম কর্মী-সমর্থকদেরও আটকানো হত না। কিন্তু তা না করে যে ভাবে তৃণমূল এ দিন হরতালের বিরোধিতা করেছে, তাতে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয় রয়েছে, মন্তব্য বাম নেতাদের।

তবে এ দিনের হরতাল যে সফল হয়নি তা মেনে নিয়েছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। এ দিন বিকেলে তিনি বলেন, ‘‘হরতাল সফল না হওয়ার কারণ, প্রচারে সময় পাওয়া যায়নি। ২৫ তারিখ আমরা সিদ্ধান্ত নিই হরতালের। মাঝে ২৬ এবং ২৭ সে ভাবে প্রচার করা যায়নি। ২০টি জেলায় সমায়াভাবে প্রচার হয়নি। এর থেকে আগামী দিনে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।’’

আরও পড়ুন

‘প্রতিবাদ করলেই ভয় দেখাচ্ছেন মোদী’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE