Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ধর্ম দেখি না, মুসলিমদের দেখবই: মমতা

মমতার কথায়, ‘‘উল্টো পাল্টা ছবি দেখিয়ে বলা হচ্ছে, আমি নাকি মুসলিমদের তোষণ করি।”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৯
Share: Save:

নির্বাচিত সরকারের ভিত্তি হল জনগণ। জনগণের উন্নয়নই সরকারের আসল ধর্ম। কিন্তু এখন দেশে ধর্মের ভিত্তিতেই সরকার চালাচ্ছে একটি দল। বুধবার এই অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তৃণমূল নেত্রীর আরও আক্ষেপ, ‘‘সবার কথা বলতে গেলেই তাঁর উপর মুসলিম তোষণের তকমা চাপিয়ে দেওয়া হয়।’’ যার জবাবে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন পাল্টা তোপ দেগে বলেন,‘‘হ্যাঁ, আমি তোষণ করব। কোটি বার করব। এ রাজ্যে ৩১.৯ % মানুষ মুসলিম। আমি না দেখলে তাদের কে দেখবে?’’বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে তৃণমূল এ দিন সংহতি দিবসের সমাবেশের ডাক দিয়েছিল। সেখানেই হাজির ছিলেন মমতা। কেন্দ্রকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘‘মানুষই নির্বাচিত সরকারের ভিত্তি। কিন্তু মানুষের দুর্দশা, উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে নির্দিষ্ট একটি ধর্মের ভিত্তিতে দিল্লির সরকার চলছে। শুধুমাত্র একটা ধর্ম নিয়ে সরকার চলতে পারে না।’’ কেন্দ্রের এই ‘সাম্প্রদায়িকতা’র জবাব যে তিনি রাজনৈতিক ভাবেই দিতে চান,তা ফের বুঝিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।

আরও পড়ুন: নারদের টাকা ‘ভোটের চাঁদা’, মন্তব্য মমতার

মমতার কথায়, ‘‘উল্টো পাল্টা ছবি দেখিয়ে বলা হচ্ছে, আমি নাকি মুসলিমদের তোষণ করি। রাজ্যে ৩১.৯% মুসলিম রয়েছেন। যদি বলেন আমি তোষণ করছি, বলব তাঁদের কোটি বার তোষণ করব। শুধু মুসলিম নয়, রাজ্যের ২৩.৯% তফসিলিদের ভালবাসি। তফসিলি-আদিবাসীদেরও তোষণ করব। রাজ্যে একজনও অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ থাকলে, তাঁকে সুরক্ষা দেওয়া আমার কাজ।’’

মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যে পাল্টা রাজনীতিই দেখছেন অনেকে। সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। সেই ভোটে গ্রামাঞ্চলে নির্ণায়ক শক্তি হতে চলেছে সংখ্যালঘু, তফসিলি ও আদিবাসী ভোট ব্যাঙ্ক। বিরোধী পরিসরে দ্রুত জায়গা করে নেওয়া বিজেপি তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে বরাবর মুসলিম তোষণের অভিযোগ তুলেছে। সেই অভিযোগ খণ্ডনের পরিবর্তে মমতা সোজাসাপ্টা তা স্বীকার করে নিয়ে আসলে মুসলিম সমাজকে তাঁর দিকে টেনে আনার কাজই করছেন বলে রাজনীতিকদের একাংশের মত।

আর সেই কারণেই তোষণের তত্ত্ব ঠেকাতে মমতা ঢাল করেছেন সংবিধানকে। তাঁর কথায়, ‘‘সংবিধান প্রজাতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেছে। এখানে কেউ কাউকে আঘাত করবে না। তা হলে কেন এত ভাগাভাগি, কেন এত অসহিষ্ণুতা?’’

শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ধর্মের ভিত্তিতে জনগণকে উপেক্ষাই নয়, দেশের কৃষক, গরিব মানুষদের দিকেও বিজেপি সরকারের কোনও নজর নেই বলে আক্রমণের সুর চড়িয়েছেন মমতা। তিনি দাবি করেন, বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র-সহ বিভিন্ন রাজ্যে একের পর এক কৃষক আত্মহত্যা করলেও কেন্দ্র উদাসীন। সবমিলিয়ে ১২ হাজার ৬০০ কৃষক মারা গিয়েছেন।

তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি ভয় পাই না। যতক্ষণ বাঁচব, সব ধর্মের জন্য লড়ে যাব। বিজেপির বিরুদ্ধে বলব।’’ বিজেপি এ রাজ্যে কোনও ভাবে যাতে বিচ্ছিন্নতা তৈরি করতে না পারে, সে জন্য কর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে মমতা বললেন, ‘‘ধর্ম, বর্ণ, জাতি নিয়ে খালি সুড়সুড়ি দিচ্ছে। আপনারা(কেন্দ্র) উঁচু নীচু, সাদা-কালো দেখেন। ধর্ম-বর্ণ নিয়ে ভাগ করেন। আমরা করি না। কেউ যাতে পয়সা ছড়িয়ে কোনও অশান্তি বাঁধাতে না পারে, সে দিকে খেয়াল রাখবেন। পুলিশকে জানাবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE