Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

জল মাপতেই আজ রাজধানীতে মমতা

কোন পথে এগোবেন, তা বুঝতেই সোমবার আবার দিল্লি আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার তাঁর থাকার কথা চার দিন। রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাঁর এই সফরকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিজেপি ও কংগ্রেসের হাইকম্যান্ড।

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৬
Share: Save:

কোন পথে এগোবেন, তা বুঝতেই সোমবার আবার দিল্লি আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার তাঁর থাকার কথা চার দিন। রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাঁর এই সফরকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিজেপি ও কংগ্রেসের হাইকম্যান্ড। কেননা, সকলেই বুঝছেন, সর্বভারতীয় রাজনীতির জল মাপতেই দিল্লিতে পা রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী মার্চ-এপ্রিলে পশ্চিমবঙ্গে ভোট হলে তার আগে সম্ভবত এটাই হবে মুখ্যমন্ত্রীর শেষ দিল্লি সফর।

তৃণমূল সূত্র বলছে, এখন মমতার প্রতিটি পদক্ষেপই সুপরিকল্পিত। তাঁর রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলিও যেন একটি সুতোয় গাঁথা। তিনি নিয়মিত ভাবে জেলা সফর করে চলেছেন, প্রত্যন্ত গ্রামে যাচ্ছেন। সিদ্দিকুল্লার সভায় যাচ্ছেন, আবার ফুরফুরা শরিফেও তাঁর যাওয়ার কথা। নীতীশ কুমারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে পটনায় গিয়েছিলেন। সেখানে নীতীশ কুমারের বাড়ির চা-চক্রের পাশাপাশি লালুপ্রসাদের বাড়িতে গিয়েও অনেকটা সময় কাটান তৃণমূল নেত্রী। ডিএমকে নেতা এম কে স্ট্যালিন এবং টি আর বালুর পাশাপাশি অরবিন্দ কেজরীবালের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন তিনি। এমনকী পটনার হোটেলে গুজরাতের হার্দিক পটেলের প্রতিনিধি এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করে ডিসেম্বরের পটেল জন্মোৎসবে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে গিয়েছেন।

এ বার দিল্লি সফরের সঙ্গে পটনা সফরের কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি?

দিল্লির রাজনীতির কুশীলবেরা বলছেন, বিভিন্ন দলের নেতারা এখন একে অপরের সঙ্গে দেখা করছেন। প্রত্যেকেই জল মাপছেন। দেখতে চাইছেন ঘটনাপ্রবাহ কোন দিকে যায়। চার দিনের সফরে আগামিকাল সন্ধ্যায় দু’নম্বর কৃষ্ণ মেনন মার্গে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির মেয়ে সোনালির বিয়ের অনুষ্ঠানে মমতা যোগ দেবেন। সেখানে সরকার পক্ষের রথী-মহারথীরা তো থাকছেনই, থাকার কথা রয়েছে সনিয়া গাঁধীরও। বিহার নির্বাচনের পরে মমতার কাছে এটা স্পষ্ট যে, দেশ জুড়ে মোদীর বিরুদ্ধে এখন অসন্তোষ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস ও সিপিএম কাছাকাছি আসছে। শুধু লালু-নীতীশ নয়, মুলায়ম সিংহ যাদবও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। সিপিএমকে বাদ দিয়ে মোদী-বিরোধী মঞ্চ গড়ার সম্ভাবনা কতটা, এই সফরে তা-ও বোঝার চেষ্টা করবেন তৃণমূল নেত্রী। কিছু দিন আগে পটনা থেকে ফিরছিলেন যখন, রাহুল গাঁধী তাঁকে বলেছিলেন, দিল্লি এলে জানাবেন। কেজরীবালও দেখা করতে চেয়েছিলেন মমতার সঙ্গে। ফলে সনিয়া-রাহুল বা আলাদা ভাবে কেজরীবালের সঙ্গে এ বার মমতার কোনও বৈঠক হয় কিনা, সেটা দেখার।

সর্বোপরি ৮ ডিসেম্বর বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও মমতার বৈঠক হওয়ার কথা। শীতকালীন অধিবেশনের গোড়া থেকেই মমতা রাজ্যের আর্থিক দাবিদাওয়াকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। তাই তৃণমূলের সাংসদদের প্রতি তাঁর প্রস্তাব ছিল, কথায়-কথায় সংসদ অচল না করাই শ্রেয়। প্রতিবাদ জানাতে হবে। কিন্তু সংসদ অচল করে রাখলে বিরোধিতার কথাগুলি সংসদের কার্যবিবরণীতে নথিভুক্ত করা যায় না। তাতে লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ বিজেপির সুবিধেই হয়ে যায়। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে এই রণকৌশলই এখনও পর্যন্ত মেনে চলেছে তৃণমূল।

তবে এই ঘটনাপ্রবাহের মধ্যেই তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক শঙ্কুদেব পণ্ডাকে ফের জেরা করেছে সিবিআই। সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআইয়ের চূড়ান্ত চার্জশিট দেওয়ার কথা ছিল ডিসেম্বরে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই মার্চ মাস পর্যন্ত সময় চেয়েছে। তৃণমূল সূত্রের প্রশ্ন, তবে কি ভোটের মুখে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অমিত শাহ-কৈলাস বিজয়বর্গীয়-সিদ্ধার্থনাথ সিংহ— এই ত্রয়ী ফের সারদা কেলেঙ্কারিকে রাজনৈতিক মূলধন করার লাইন ধরেই এগোচ্ছেন? কেনই বা সারদা তদন্ত দৃশ্যত নতুন করে গতি পেল— তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী কলকাতায় প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছেন, বিজেপি রাজনৈতিক স্বার্থে সিবিআইকে ব্যবহার করছে।

এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শুধু নন, মমতা সংসদে এসে কংগ্রেস-সহ সব দলের নেতাদের সঙ্গেই ঘরোয়া ভাবে কথাবার্তা বলে বিজেপির রাজনীতিটা বুঝতে চাইবেন। বিজেপি যদি এই রাজনৈতিক কৌশল ধরেই এগোয়, তবে পাল্টা রণকৌশল তৈরির জন্যও তিনি প্রস্তুত হবেন। প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার ও তৃণমূলের প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করেই এগোতে চান তিনি। ঠিক যেমনটা করছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার সঙ্গে। তামিলনাড়ুতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরে তিনি চেন্নাই সফর করে আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্র বলছে, মমতার সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক দাবিদাওয়ার বিষয়টি অনেকাংশেই মেনে নিতে প্রস্তুত। অনেকেই মনে করছেন, মমতার সফরের আগে রাজ্যের মুখ্যসচিবের দিল্লি আসার নির্দেশে সই করা ও মন্ত্রিসভার বৈঠকে ছিটমহলের জন্য আর্থিক সাহায্য বরাদ্দ করা—এই দু’টি সিদ্ধান্ত বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তবে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী কী অবস্থান নিচ্ছেন বা মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি কী বলবেন, তা আমরা জানি না। তবে এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে সিবিআইকে বিজেপি রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে।’’

এই সফরে সংসদের সেন্ট্রাল হলে সব দলের নেতাদের সঙ্গে দেখা ও কথা বলার পাশাপাশি দলীয় সাংসদদের সঙ্গেও বৈঠকে বসবেন মমতা। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দীপাবলি মিলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে নতুন বঙ্গভবনে। পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের আইএএস-আইপিএসদের সঙ্গে দেখা করারও কর্মসূচি নিয়েছেন মমতা। দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে আগামী ১০ ডিসেম্বর শরদ পওয়ারের ৭৫তম জন্মদিন পালন করা হচ্ছে ধুমধাম করে। নরেন্দ্র মোদী থেকে সনিয়া গাঁধী-দেশের তাবড় তাবড় নেতার উপস্থিত থাকার কথা ওই অনুষ্ঠানে। মমতাকে থাকার জন্য বিশেষ ভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন পওয়ার। যদিও ওই দিনই বিকেলের বিমানে মমতার কলকাতা ফেরার কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE