নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরোধিতায় কংগ্রেস ও অন্য ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিকে এককাট্টা করার কাজে তিনি যে অন্যতম প্রধান ভূমিকাই নিতে চাইছেন, ক’দিন আগেই সেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হতে বাকি আর দু’সপ্তাহ। তার আগে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দু’টি ঘটনা ঘিরে বুধবার টুইটারে সমালোচনায় সরব হলেন তৃণমূল নেত্রী। যার নেপথ্যে মমতার বিজেপি-বিরোধিতায় প্রধান ভূমিকা নেওয়ার সেই চেষ্টাই দেখছেন কেউ কেউ।
ঘটনা এক, পেনশন নিয়ে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে আত্মঘাতী প্রাক্তন সেনাকর্মীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বুধবার দিল্লিতে রাহুল গাঁধী এবং অরবিন্দ কেজরীবালের আটক হওয়া। যার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন তৃণমূল নেত্রী। ঘটনা দুই, বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশে আট সিমি সদস্যের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনা। মমতা প্রশ্ন তুলেছেন তা নিয়েও।
কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবাল— দু’জনকেই বুধবার আটক করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে থাকা দিল্লি পুলিশ। এ ব্যাপারে কংগ্রেস বা আম আদমি পার্টি (আপ) ভাল করে প্রতিক্রিয়া জানানোর আগেই গর্জে ওঠেন মমতা। এক টুইট বার্তায় তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘হচ্ছেটা কী? মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর নিজের রাজ্যেই আটক করা হচ্ছে? এটা চলতে পারে না!’’ মৃত সেনাকর্মীর পরিবারের সঙ্গে রাহুলকে দেখা করতে না দেওয়াটা ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে কংগ্রেস ও আপ নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা হয় তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের। তার পরেই প্রতিবাদ জানান মমতা। বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেস-আপের মতোই তেড়েফুঁড়ে নামতে দলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনকে বিকেলের বিমানে দিল্লি রওনাও করিয়ে দেন তৃণমূল নেত্রী।
মধ্যপ্রদেশের জেল ভেঙে পালানো সিমি-র আট সদস্যকে ভুয়ো সংঘর্ষে হত্যা করা হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রথম দিন থেকেই প্রশ্ন উঠেছিল। প্রধানমন্ত্রী বা বিজেপির নাম মুখে না আনলেও মমতা এ দিন টুইটারে লিখেছেন, ‘‘তথাকথিত সংঘর্ষের তত্ত্ব আমরাও মানছি না। মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন উঠছে, যার কোনও সদুত্তর নেই। আসলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে এ সব ঘটানো হচ্ছে। জাতীয় সংহতি রক্ষার প্রশ্নে এ সব ঘটনা নিয়ে আমার মতো অনেকেই উদ্বেগে রয়েছেন।’’
তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, মমতা ভুয়ো সংঘর্ষের নিন্দা করেছেন ঠিকই। কিন্তু এ ব্যাপারে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন খুবই সতর্কতার সঙ্গে। কারণ তৃণমূল নেত্রী মনে করছেন, কংগ্রেস ও অন্য ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলি এ বিষয়ে মুখ খুলছে, তাই তৃণমূলেরও সমালোচনা করা উচিত। তা ছাড়া উদার হিন্দুরাও বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না।
কিন্তু মমতা এ-ও মনে করছেন, এ বিষয়ে অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক অবস্থান নিলে সেটাকেও রাজনৈতিক হাতিয়ার করে নিতে পারে বিজেপি। কারণ, বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব চান, যে কোনও উপায়ে দেশে ধর্মীয় মেরুকরণের পরিবেশ তৈরি হোক।
তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, সেই কারণেই ভুয়ো সংঘর্ষের চেয়ে কেজরীবাল-রাহুলকে আটকের ঘটনা নিয়ে এ দিন বেশি সুর চড়িয়েছেন মমতা। কারণ তাঁর লক্ষ্যই হল, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর শর্ত লঙ্ঘন, কেন্দ্রের অর্থনৈতিক ব্যর্থতার মতো বিষয়ে মোদী-বিরোধী শক্তিগুলিকে এককাট্টা করা। সূত্রের খবর, রাহুল-কেজরীবালকে আটকের প্রশ্নে ঘরোয়া আলোচনায় মমতা এ দিন বলেন, এখানে ব্যক্তি রাহুল গাঁধী বা ব্যক্তি অরবিন্দ কেজরীবাল বড় কথা নয়। বড় বিষয় হল, নিজের রাজ্যে কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে আটক করা। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্রের এই জমিদারি চলতে পারে না।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, মমতার এ দিনের তৎপরতা থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার। জাতীয় রাজনীতিতে ক্রমশই নিজেকে আরও বেশি করে মেলে ধরছেন তিনি। তাঁর অবস্থান থেকেই স্পষ্ট, সংসদের আসন্ন অধিবেশনে কেন্দ্র-বিরোধিতায় অগ্রণী ভূমিকা নিতে চাইবে তৃণমূল। এ ব্যাপারে কক্ষ সমন্বয় করে চলতে চাইবে কংগ্রেস ও অন্যান্য বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলির সঙ্গে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy