Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

নজর রাখছে কমিশন, সংঘাত এড়াতে দলকে নির্দেশ মমতার

এর আগে বামেদের জাঠা বা বিরোধীদের কর্মসূচির উপর হামলা না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। এ বার নির্বাচন কমিশনের কথা মাথায় রেখে দলীয় কর্মীদের বিরোধীদের সঙ্গে সংঘাত এড়ানোর নির্দেশ দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীর। কালীঘাটে নিজের বাড়িতে। ছবি: প্রদীপ আদক।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীর। কালীঘাটে নিজের বাড়িতে। ছবি: প্রদীপ আদক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:০৩
Share: Save:

এর আগে বামেদের জাঠা বা বিরোধীদের কর্মসূচির উপর হামলা না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। এ বার নির্বাচন কমিশনের কথা মাথায় রেখে দলীয় কর্মীদের বিরোধীদের সঙ্গে সংঘাত এড়ানোর নির্দেশ দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ভোটের আগে দলীয় সংগঠনকে আরও মজবুত করার লক্ষ্যে ইদানীং ফি শনিবার দলের এক একটি জেলা নেতৃত্বকে নিয়ে কালীঘাটে বৈঠক করছেন তৃণমূল নেত্রী। এই শনিবার তিনি উত্তর ২৪ পরগনার দলীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের বৈঠক ডেকেছিলেন। দলীয় সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে দলনেত্রী তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিরোধীদের সঙ্গে সংঘাতে যেতে নিষেধ করে দিয়েছেন। কারণ, নির্বাচন কমিশন রাজ্যের পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, বিরোধীরা সরকার বিরোধী ‘অপপ্রচার’ করে একটা সভা করলে, শাসক দল ১০টা পাল্টা সভায় তার জবাব দিক। কিন্তু কোথাও কোনও প্ররোচনায় যেন দলের কেউ পা না দেন। তবে বিরোধী নেতাদের একাংশ বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেননি। তাঁদের কারও কারও মতে, ‘‘এর আগেও তৃণমূল নেত্রী কর্মীদের সতর্ক করেছেন। কিন্তু আমাদের উপর হামলা হয়েই চলেছে!’’

মমতা কর্মীদের বিরোধীদের সঙ্গে সংঘাতে না জড়ানোর নির্দেশ এর আগেও দিয়েছেন। তবে এ বার প্রথম তিনি নির্বাচন কমিশনের নজরদারির কথা কর্মীদের মনে করিয়ে দিয়েছেন। বিশেষত, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার দলীয় বৈঠকে ওই প্রসঙ্গ টানা তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, ওই জেলারই বিধাননগরের পুরভোটে শাসক দলের গা-জোয়ারি এবং জবরদস্তির অভিযোগ রয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটেও ওই জেলায় শাসক দলের দাপিয়ে ভোট করার অভিযোগ আছে। কলকাতার পুরভোটেও তৃণমূল কর্মীদের হাতে পুলিশি নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু পঞ্চায়েত বা পুরভোটে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের কোনও ভূমিকা থাকে না। সামনে বিধানসভা ভোট। সেটা পরিচালনা করবে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। ফলে, পঞ্চায়েত বা পুরভোটে যা হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি বিধানসভা ভোটে করা সহজ হবে না। এটা বুঝতে পেরেই মমতা দলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক করেছেন বলে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার ধারণা।

মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদীর নেতৃত্বাধীন ফুল বেঞ্চ কলকাতায় এসেছিল গত ১০ ডিসেম্বর। কলকাতা ও বিধাননগরে পুরভোট-সহ এ রাজ্যের নানা ঘটনায় পুলিশ-প্রশাসনও যে আক্রান্ত হয়, তার প্রমাণ হিসাবে তথ্য, ছবি এবং ভিডিও ক্লিপিংস ফুল বেঞ্চকে দিয়েছিল বিরোধীরা। এর পরে জৈদী রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে গিয়েছেন, বিধানসভায় কেউ ভোট দিতে না পারলে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের দায়ী করা হবে। উত্তর ২৪ পরগনায় ভোটের সময়ে গোলমাল তো হয়ই, অন্য সময়েও ভেড়ি, সিন্ডিকেট ব্যবসা ইত্যাদি নিয়ে শাসক দলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে প্রায়ই ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সে জন্যই এ দিন ওই জেলার বৈঠকে দলীয় নেতৃত্বকে সতর্ক করেছেন মমতা।

দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং তোলাবাজি ও দুর্নীতি যে তিনি বরদাস্ত করবেন না তা এর আগে হুগলি, বর্ধমান এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে মমতা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। দলীয় এক সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনের বৈঠকেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও তোলাবাজি বন্ধ করতে তিনি উত্তর ২৪ পরগনার জেলা নেতৃত্বকে নির্দেশ দিয়েছেন। জেলায় হিঙ্গলগঞ্জ, হাড়োয়া এলাকায় ভেড়ি নিয়ে গোলমালের অভিযোগ তাঁর কাছে আছে বলে মমতা বৈঠকে জানান। ভেড়ি নিয়ে গোলমালে দলের কেউ জড়ালে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তবে রাজারহাট-নিউটাউনের সিন্ডিকেট ব্যবসা নিয়ে দলে যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রায়ই হয়, তা নিয়ে এ দিনের বৈঠকে কোনও কথা হয়নি। কিন্তু নোয়াপাড়ায় একটি কমিউনিটি সেন্টার গড়া নিয়ে দলের দুই জনপ্রতিনিধির বিরোধ অবিলম্বে তিনি মেটাতে বলেছেন। বসিরহাট এবং বনগাঁর জনপ্রতিনিধিদের কয়েক জনকে কোন্দল মেটাতেও মমতা নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে উন্নয়নের বকেয়া কাজ দ্রুত শেষ করতে জনপ্রতিনিধিদের বলেছেন দলনেত্রী।

বৈঠকের শেষে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য জানান, সংগঠনকে আরও মজবুত করা এবং মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে উন্নয়নের কথা আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াই ছিল এ দিনের আলোচনার বিষয়বস্তু। তাঁর কথায়, ‘‘উন্নয়নের কথা যে সব মানুষের কাছে পৌঁছয়নি, তাঁদের কাছেও কর্মীদের যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষত, যাঁরা আমাদের এখনও সমর্থন করেননি, তাঁদের কাছে আমাদের কথা দলীয় কর্মীদের পৌঁছে দেওয়ার জন্যে বলা হয়েছে। আর সংগঠনকে আরও মজবুত করতেও বৈঠকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ বৈঠকে অবশ্য উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা সাংসদ মুকুল রায় আমন্ত্রিত ছিলেন না। তবে তাঁর পুত্র বীজপুরের বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় ছিলেন। বৈঠক শেষে বেরিয়ে আসার সময় শুভ্রাংশু নেত্রীকে প্রণাম করেন। নেত্রীকে তাঁর সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে দেখা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

state news Mamata Banerjee election commission
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE