Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ইইসি প্রকল্প

দ্বিতীয় ইনিংসেও স্বাস্থ্যে বিশেষ নজর মমতার

প্রথম ইনিংসে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তিনি একের পর এক ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান, গুরুতর অসুস্থ সদ্যোজাতের চিকিৎসায় সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট (এসএনসিইউ) এবং সরকারি স্তরে সমস্ত চিকিৎসা ফ্রি-এর মতো প্রকল্পের ফসল তুলেছেন ভোটের ফলেও। দ্বিতীয় ইনিংসে দায়িত্ব নিয়ে তাই প্রথম থেকে স্বাস্থ্যতেই যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ নজর দিতে চাইছেন, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তাদের।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৬ ০৪:০৮
Share: Save:

প্রথম ইনিংসে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তিনি একের পর এক ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান, গুরুতর অসুস্থ সদ্যোজাতের চিকিৎসায় সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট (এসএনসিইউ) এবং সরকারি স্তরে সমস্ত চিকিৎসা ফ্রি-এর মতো প্রকল্পের ফসল তুলেছেন ভোটের ফলেও। দ্বিতীয় ইনিংসে দায়িত্ব নিয়ে তাই প্রথম থেকে স্বাস্থ্যতেই যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ নজর দিতে চাইছেন, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তাদের।

তাঁর নির্দেশে আগামী তিন মাসের মধ্যে এক বছরের কমবয়সি শিশুদের জন্য পাইলট প্রকল্প হিসেবে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, কলকাতার বি সি রায় শিশু হাসপাতাল এবং মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে চালু হতে চলেছে আর্লি ইন্টারভেনশন সেন্টার (ইইসি)। চলতি বছরের মধ্যে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা হাসপাতাল, বর্ধমান মেডিক্যাল, পুরুলিয়া জেলা হাসপাতাল, বাঁকুড়া এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ইইসি চালু করার নির্দেশ গিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন থেকে। আগামী দু’বছরের মধ্যে সব জেলায় একটি করে ইইসি তৈরি হবে বলে স্বাস্থ্য দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে ওই সব ইইসি পরিচালনা করা হবে।

এসএনসিইউ-য়ের থেকে ইইসি আলাদা কীসে?

রাজ্যে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যে নজরদারির জন্য গঠিত টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ইইসি হল এসএনসিইউ-এর পরবর্তী ধাপ। কোনও গুরুতর অসুস্থ সদ্যোজাতকে এসএনসিইউয়ে রেখে চিকিৎসা করে বাঁচানোর পরেও অনেক সময় নানা কারণে তার স্বাভাবিক বৃদ্ধি আর হয় না। রক্ত সঞ্চালনে সমস্যার জন্য বা মস্তিষ্কে কম অক্সিজেন যাওয়ার জন্য কারও মস্তিষ্কের বিকাশ হয় না। কারও মাংসপেশির বৃদ্ধি তুলনায় কম হয়। কারও চোখে রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তখন ওই সব শিশুকে পর্যবেক্ষণে রাখার জন্যই তৈরি হচ্ছে ইইসি, জানিয়েছেন ত্রিদিববাবু

স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, সমস্যা ধরা পড়ার পরে খুব তাড়াতাড়ি ঠিকঠাক চিকিৎসা দিতে পারলে পরবর্তীকালে অসুস্থ শিশু মোটামুটি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে বলে তাঁদের আশা। সেই উদ্দেশ্যেই ইইসি-র পরিকল্পনা নিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতর। এই প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা সহ-অধিকর্তা ভূষণ চক্রবর্তীর কথায়, এসএনসিইউয়ে রেখে বেঁচে যাওয়া হাই রিস্ক শিশুদের অনেকেরই ফলো-আপ চিকিৎসা ব্যাহত হতো। তাই এই সেন্টারের কথা ভাবা হয়েছে। এখানে এসএনসিইউ ছাড়া বিভিন্ন হাসপাতালে সাধারণ ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা শিশুদেরও ক্ষেত্রবিশেষে চিকিৎসা হবে এই
সব ইইসি-তে।

বাম আমলে এসএনসিইউয়ের যাত্রা শুরু হলেও, সে সময় মাত্র ৬টি কেন্দ্র তৈরি হয়েছিল। এর মধ্যে একমাত্র পুরুলিয়ারটি কার্যকর ছিল। পরবর্তী পাঁচ বছরে তৈরি হয়েছে আরও ৪৮টি এসএনসিইউ। তার সব ক’টিই কাজ করছে। মোট শয্যা রয়েছে ১৯০০। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, প্রতি বছর ৮-১০ হাজার গুরুতর অসুস্থ সদ্যোজাতের চিকিৎসা হয় ওই এসএনসিইউগুলিতে। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, কলকাতার বি সি রায় হাসপাতালে জেলা থেকে রেফারের হার অনেক কমে গিয়েছে। আগে দূর জেলা থেকে অসুস্থ বাচ্চাদের বি সি রায়-তে আনতে আনতেই তাদের অনেকে মারা যেত। বি সি রায়ের কর্তারা বলছেন, বারাসত ও বসিরহাটে এসএনসিইউ চালুর ফলে এটা সম্ভব হয়েছে। এখন অনেক সময় হাসপাতালে শয্যাও খালি পড়ে থাকে যা আগে কল্পনাও করা যেত না। গত দেড় বছরে বি সি রায়-এর ৪০ শয্যার এসএনসিউয়ে মৃত্যুহার কমেছে ৩৫ শতাংশ। শীতের শুরুতে আগে নিয়ম করে এই হাসপাতালে মূলত নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটত। গত তিন বছরে সেটাও ২৫ শতাংশ কমে গিয়েছে।

প্রথম দিকে এসএনসিইউগুলিতে চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স পাওয়া যেত না। কাজে যোগ দিয়েও চিকিৎসকেরা ঘন-ঘন চাকরি ছাড়তেন। এর পর তাঁদের অতিরিক্ত ভাতার ব্যবস্থা হয়। নতুন অনেককে নিয়োগ করা হয়। এমডি-এম-এস পরীক্ষায় বসতে এসএনসিইউয়ের চিকিৎসকদের কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়। ফলে লোকবলের অসুবিধা আগের থেকে অনেক মিটেছে। স্বাস্থ্যকর্তারাও এখন মনে করছেন, এসএনসিইউয়ে সাফল্যের পথ ধরে ইইসি প্রকল্পেও আশানুরূপ ফল মিলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee health second innings
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE