Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মন্দির গড়তে জমিতে ‘না’, বন্ধ ধোপা-মুদি

সাত সকালে গোয়ালা এসে দু-পোয়া দুধ দিয়ে যেত বাড়িতে। মাস খানেক ধরে তার দেখা নেই। কী ব্যাপার? সাইকেল থেকে নেমে গ্রামের গোয়ালা বুলু মণ্ডল হাত জোড় করে জানিয়ে গিয়েছে, ‘‘মাফ করবেন দাদা, মোড়লদের নিষেধ আছে!’’

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
নওদা শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৬ ০৪:১৬
Share: Save:

সাত সকালে গোয়ালা এসে দু-পোয়া দুধ দিয়ে যেত বাড়িতে। মাস খানেক ধরে তার দেখা নেই।

কী ব্যাপার? সাইকেল থেকে নেমে গ্রামের গোয়ালা বুলু মণ্ডল হাত জোড় করে জানিয়ে গিয়েছে, ‘‘মাফ করবেন দাদা, মোড়লদের নিষেধ আছে!’’

দুধের সঙ্গেই বন্ধ হয়েছে, গ্রামের মুদিখানার চাল-তেল-নুন, ধোপার সপ্তাহান্তে আসা-যাওয়া কিংবা বিকেলে তাঁর বৌমার কাছে টিউশন নিতে আসা পড়ুয়াদের আনাগোনা।

গাঁয়ের পুজো-আচ্চা, বিয়ে, পৈতের আসরে বিভূতি প্রামাণিকের চুল-দাড়ি কামানোর পেশার উপরেও পড়েছে দাঁড়ি। নওদার আলমপুরের বিভূতি এখন ‘এক ঘরে।’ কেন? মা মারা যাওয়ার আগে, সাকুল্যে তিন বিঘা জমি, দুই ছেলে, বিভূতি আর জয়দেবের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছিলেন। গ্রামের মন্দির কমিটির চোখ পড়েছিল, দুই ভাইয়ের সেই এক টুকরো জমির উপরে। ‘ঝামেলা এড়াতে’ জয়দেব ১৬ শতক জমি ছেড়ে গ্রামীণ জীবন বেছে নিলেও বেঁকে বসেন বিভূতি। জানান, ওই তো সামান্য জমি, তার ভাগ কীসের? মন্দির কমিটির সামাজিক বয়কটের ফতোয়া এসেছিল তার পরেই।

সে চোখ রাঙানিতে আমল দেননি বিভূতি। বলেন, ‘‘গ্রামের মোড়লদের (মন্দির কমিটির তাঁরাই মাথা) হাতে-পায়ে না ধরে চালিয়ে নিচ্ছিলাম। কিন্তু মাস খানেক ধরে একেবারে ধোপা-মুদিই বন্ধ করে দেওয়া হল।’’

অম্বুবাচির পুজো দিতে গ্রামের ওই মন্দিরে পা রাখলে বিভূতির পরিবারকে একরকম গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

গ্রামের মোড়লদের অন্যতম সুখদেব বাজপেয়ী রাখঢাক না রেখেই বলছেন, ‘‘মন্দির তো সকলের, সে জন্য সামান্য জমি ছাড়তে পারল না! ভাল ব্যবহার আশা করে কী করে বিভূতি?’’ জেলা প্রশাসনের কানে গিয়েছে কথাটা। বহরমপুরের মহকুমাশাসক দিব্যনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় জানান, জমি দেওয়া না-দেওয়া ওই গ্রামবাসীর মর্জি। তিনি বলেন, ‘‘সে জন্য এমন জোর খাটানো যায় নাকি! দু’পক্ষকেই ডাকা হয়েছে। ব্যাপারটা মেটানোর জন্য।’’

সে দায়িত্ব বর্তেছে স্থানীয় নওদা থানার ওসি উৎপল দাসের উপরে। তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের বেয়াদপি বরদাস্ত করার প্রশ্ন নেই। শুক্রবার, দু’পক্ষকেই বৈঠকে ডাকা হয়েছে। না মানতে চাইলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

গ্রামের কীর্ত্তণের আসরে সাড়ে সাতশো টাকা চাঁদা দিতে না পারায় দিন কয়েক আগে একই শাস্তির মুখে পড়েন গোবিন্দপুরের নিতাই বিশ্বাস। সে গ্রাম আলমপুর থেকে মেরেকেটে চার কিলোমিটার দূরে।

মন্দির আর তার মাথায় থাকা মাতব্বরদের এমন ঘন ঘন জুলুমবাজি সত্ত্বেও স্থানীয় পঞ্চায়েতগুলির সাড়া নেই কেন, গ্রামবাসীদের প্রশ্ন সেটাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

temple ill treatment society
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE