প্রতীকী ছবি
একেবারে সর্বহারা হবেন জেনেও যে মনের জোর অটুট রেখে মৃতা স্ত্রীর উপরে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পেরেছেন এক জন যুবক, তা-ই তো খুব প্রশংসার। হাওড়ার বাপ্পা ঘোষ সমাজের সামনে ন্যায়-বোধের একটা বড় উদাহরণ স্থাপন করলেন। স্ত্রী বিয়োগের দিনে নিজের পরিবারের সকলের বিরুদ্ধে থানায় গিয়ে অভিযোগ করা সহজ নয়। অনেক মনের জোর প্রয়োজন। যে মানুষটাকে ভরসা করে বাপ্পার স্ত্রী, প্রণতি ঘোষ জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই ভরসাটুকু যে ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন এই যুবক, এটা বিরল।
এমন মানবিকতা যে দেখাই যায় না। স্ত্রীর পাশে দাঁড়াতে নিজের মা ও দাদাদের বিরুদ্ধেও যে রুখে দাঁড়ানো যায়, তা প্রায় দেখেই না এই সমাজ। কারণ, স্বাভাবিক মূল্যবোধকে মর্যাদা দেওয়ার চল নেই চারপাশে। তাই তো দিন দিন বধূহত্যা, নির্যাতন বাড়ছে। বাপ্পার বাড়ির লোকেরাও হয়তো ভাবতে পারেননি যে, পণের জন্য
স্ত্রীকে অত্যাচার করা হচ্ছে বলে ওই যুবক থানায় চলে যেতে পারেন। ভাবেন কী করে? সাধারণত তো উল্টোটাই হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা দেখতে পাই, বাড়ির লোকজনের সঙ্গে স্ত্রীর উপরে নির্যাতন চালান স্বামীও। একা সবটা বন্ধ না করতে পারলেও বাপ্পা প্রকৃত জীবনসঙ্গীর মতো পদক্ষেপ করেছেন।
তবে ভাবতে খারাপ লাগছে যে, এমন এক জন মানুষ এ ভাবে সবটা হারালেন। পরিবারের অর্থ সাহায্য ছাড়া চালাতে পারবেন না বলে তিনি প্রণতিকে নিয়ে আলাদা সংসার পাতার ব্যবস্থা করতে পারলেন না। কিন্তু এ বার কি আর তাঁর পরিবার বাপ্পার পাশে থাকবে! সময়ের সঙ্গে বেশির ভাগ ক্ষতই পূরণ হয় হয়তো, কিন্তু আপাতত ওই যুবক একেবারেই একা হয়ে গেলেন। এই সময়টা তাঁর জন্য খুব কঠিন। তাঁর প্রতি সমবেদনা। তবে থানায় যাওয়ার আগে নিশ্চয় এই নিঃসঙ্গতার কথা ভেবেছিলেন তিনি। ন্যায়ের পথ বাছলে যে কেউই তাঁর পাশে দাঁড়ানোর থাকবেন না, তা তো তাঁর জানাই ছিল। তার পরেও যে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস দেখিয়েছেন, তার জন্য বাপ্পাকে কুর্নিশ। আশা করছি, পণপ্রথার বিরুদ্ধে লড়াই করা উদাহরণযোগ্য একটি চরিত্র হিসেবে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকেও স্বীকৃতি পাবেন বাপ্পা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy