Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

৫৩ বছর পরে ভাইকে ফিরে পেলেন দাদা

৫৩ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া সেই ভাইকেই বুধবার সোদপুর থেকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন অযোধ্যা। তাঁকে বাড়ি ফেরাতে পেরে খুশি সোদপুরের যুবক অম্বরীশ নাগবিশ্বাস। তিনি হ্যাম রেডিয়ো অপারেটর।

পুনর্মিলন: অযোধ্যা (বাঁ দিকে) ও রোহিত বেসান (ডান দিকে)। রয়েছেন অম্বরীশ নাগবিশ্বাসও। নিজস্ব চিত্র

পুনর্মিলন: অযোধ্যা (বাঁ দিকে) ও রোহিত বেসান (ডান দিকে)। রয়েছেন অম্বরীশ নাগবিশ্বাসও। নিজস্ব চিত্র

সুপ্রকাশ মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ১০:৩০
Share: Save:

বাড়ি থেকে বিয়ে ঠিক করা হয়েছিল তাঁর। কিন্তু তখনও তেমন কোনও কাজকর্ম করতেন না তিনি। বিয়ের মাস কয়েক আগে ভাগ্যান্বেষণে বেরিয়েছিলেন বছর বাইশের রোহিত বেসান। আর বাড়ি ফেরেননি। এক সময়ে বাড়ির লোকেরা তাঁর ফেরার আশাই ছেড়ে দেন।

দিন কয়েক আগে ৭৭ বছরের অযোধ্যা বেসানের বাড়িতে হাজির হয়েছিল ওড়িশার ঝাড়সুগুড়া জেলার ব্রজরাজনগর থানার পুলিশ। একটি ছবি দেখিয়ে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, চিনতে পারছেন কি না। অনেকটা সময় নিয়েছিলেন বৃদ্ধ অযোধ্যা। বেশ খানিক ক্ষণ পরে মুখ তুলে বলেছিলেন, ‘‘চারু।’’ তাঁর ছোট ভাই রোহিত বেসানের ডাকনাম চারু।

৫৩ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া সেই ভাইকেই বুধবার সোদপুর থেকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন অযোধ্যা। তাঁকে বাড়ি ফেরাতে পেরে খুশি সোদপুরের যুবক অম্বরীশ নাগবিশ্বাস। তিনি হ্যাম রেডিয়ো অপারেটর।

আরও পড়়ুন: টানা বন্ধ ইন্টারনেট, ভোগান্তি জেলায় জেলায়

মাস চারেক ধরে সোদপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মই ছিল বৃদ্ধ রোহিতের ঘরবাড়ি। সম্পত্তি বলতে একটা নাইলনের ব্যাগ। রোজ সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য সোদপুর থেকে ট্রেন ধরেন অম্বরীশ। যাত্রীদের বেঞ্চে শুয়ে ছিলেন রোহিত। ছোট্ট চাদরে পা ঢাকা পড়ে না। পায়ে মশা কামড়াতে দেখে পরদিন বাড়ি থেকে একটা মশারি নিয়ে গিয়েছিলেন অম্বরীশ।

তিনি বললেন, ‘‘সে সময়ে খুব ডেঙ্গি ছড়াচ্ছিল এলাকায়। সেই জন্যই মশারি নিয়ে গিয়েছিলাম। রোজ দেখা হত। প্রথম দিকে কথা বলতে চাইতেন না। নিজের নাম বলতেন চারু। ক্রমে আলাপ বাড়তে কিছু কিছু কথা বলতেন।’’ অম্বরীশের কথায়, ‘‘বাড়ির ঠিকানা বলতে পারেননি। কেবল ওড়িশার কথা বলতেন। শেষে এক দিন বললেন, দাদার নাম অযোধ্যা। আর বাড়ির সামনে একটা কাগজের কারখানা রয়েছে।’’

আরও পড়়ুন: খুনিরা শাস্তি পেল না, ক্ষোভ তাপসীর বাবার

অম্বরীশ জানান, পুরো বিষয়টি ওড়িশার হ্যাম রেডিয়ো অপারেটর দুষ্মন্তকুমার দাসকে জানানো হয়। তিনি খোঁজ শুরু করেন। খোঁজার কাজটি মোটেও সহজ ছিল না। সূত্র বলতে ছিল শুধু ওই কাগজ কল। প্রথমে সেটির খোঁজ শুরু হয়। কিন্তু কাগজ কলের আশপাশে অযোধ্যা নামের কাউকে পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত খোঁজ থামে ওড়িশার ব্রজরাজনগরে সেখানে একটি কাগজ কলের খোঁজ মেলে। যদিও সেটি বর্তমানে বন্ধ। ব্রজরাজনগর থানার পুলিশ প্রচুর সাহায্য করে। তারাই অযোধ্যার নাম ধরে খোঁজ শুরু করে। শেষ পর্যন্ত শহরের গায়ত্রীনগরে খোঁজ মেলে তাঁর। তিনি জানান, ১৯৬৬ সালে তাঁর ভাই চারু নিখোঁজ হয়ে যান। ভাইয়ের ছবি পাঠানো হয় অযোধ্যাকে। চিনতে পারেন দাদা।

কিন্তু আগে কখনও ওড়িশার বাইরে যাননি অযোধ্যা। পুলিশকর্মীদের পাঠানো হয় তাঁর সঙ্গে। বুধবার দুপুরে ভাইকে দেখে চিনতে পারেন অযোধ্যা। চারুও নাকি দাদাকে বিলক্ষণ চিনতে পারেন। এমনকি, পুরনো অনেক ঘটনাও তিনি গড়গড় মনে করে বলতে থাকেন। এত কিছু মনে করতে পারলেও রোহিত কিছুতেই মনে করতে পারেননি, তিনি এত দিন কোথায় ছিলেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ham Radio Odisha Sodepur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE