Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

স্ত্রীর মৃত্যু, পরিবারকে দুষছেন স্বামী

বাপ্পার অভিযোগ, বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই আরও পণ দাবি করে প্রণতির সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করেন তাঁর মা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, বিয়ের আট মাসের মধ্যে পরিবারের বাকি লোকজন রীতিমতো মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার শুরু করেন প্রণতির উপরে।

রোষ: প্রণতির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরে এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষোভ। বুধবার, বালিটিকুরিতে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

রোষ: প্রণতির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরে এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষোভ। বুধবার, বালিটিকুরিতে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৮ ০৩:০৮
Share: Save:

স্ত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় নিজের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করলেন বাড়ির ছোট ছেলে।

বুধবার দুপুরে এই ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার দাশনগর থানা এলাকার বালিটিকুরি ঘোষপাড়ায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুরে ঘোষপাড়া এলাকার একটি বাড়ি থেকে এক গৃহবধূর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ওই গৃহবধূর স্বামী বাপ্পা ঘোষের অভিযোগ, তাঁর মা, তিন দাদা-বৌদি ও এক দাদার শ্যালিকা মিলে দিনের পর দিন তাঁর স্ত্রী প্রণতি ঘোষের (২৪) উপরে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার চালাচ্ছেন। বহু চেষ্টাতেও তাঁদের থামাতে পারেননি তিনি। এ দিনও স্ত্রীর উপরে অত্যাচার শুরু হওয়ায় পুলিশের সাহায্য চাইতে থানায় চলে গিয়েছিলেন বাপ্পা। কিন্তু তাঁর অনুপস্থিতির সুযোগে পরিবারের লোকজন প্রণতিকে খুন করে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেন বলে অভিযোগ ওই যুবকের। এই অভিযোগ শোনার পরেই গোটা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শয়ে শয়ে বাসিন্দা ঘোষেদের মুদিখানা ও বাড়িতে ভাঙচুর চালান। প্রাণের ভয়ে পালিয়ে যান অভিযুক্তেরা। অভিযোগকারী ওই যুবকের দাদার শ্যালিকা যে বাড়িতে থাকেন, সেটিও ঘেরাও করেন কয়েকশো মহিলা। পরে পুলিশ এসে লাঠি চালিয়ে ওই মহিলাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দেড়েক আগে হাওড়া পুরসভার ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের খালধার পাড়ার বাসিন্দা প্রণতির সঙ্গে পাশের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঘোষপাড়ার বাসিন্দা আনাজ বিক্রেতা বাপ্পার বিয়ে হয়। দেখাশোনা করে ছেলের বিয়ে দেন মা শঙ্করী ঘোষ। বাপ্পার পরিবারে তাঁর মা, বাবা ছাড়া রয়েছেন তিন দাদা-বৌদি। বাপ্পার অভিযোগ, বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই আরও পণ দাবি করে প্রণতির সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করেন তাঁর মা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, বিয়ের আট মাসের মধ্যে পরিবারের বাকি লোকজন রীতিমতো মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার শুরু করেন প্রণতির উপরে। এ দিন ওই যুবক বলেন, ‘‘বিয়ের সময়ে আমাকে না জানিয়ে ৫০ হাজার টাকা পণ নিয়েছিল মা ও দাদারা। পরে আরও ৬০ হাজার টাকা দাবি করেছিল। আমার শ্বশুরবাড়ির অবস্থা খুবই খারাপ। ওঁরা আর টাকা দিতে পারেননি বলে অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল। আমার স্বল্প আয়, তাই চাইলেও আলাদা হতে পারনি।’’

মৃতা তরুণীর পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর দাদা পার্থ বাগ বলেন, ‘‘ওঁরা দিনের পর দিন বোনের উপরে অত্যাচার চালিয়েছেন। গত বছর এমন মেরেছিলেন যে হাওড়া জেলা হাসপাতালে তিন দিন ভর্তি রাখতে হয়েছিল। পরে আমাদের হাত-পায়ে ধরে বোনকে ফিরিয়ে নিয়ে যান শ্বশুরবাড়ির লোকজন। জামাই খুব ভাল মানুষ বলে আমরাও পাঠিয়ে দিয়েছিলাম বোনকে।’’

বাপ্পার অভিযোগ, গত বছর এই ঘটনার পরে পরিস্থিতি কিছু দিন শান্ত ছিল। তিন দিন আগে তাঁর অনুপস্থিতির সুযোগে ফের প্রণতির উপরে অত্যাচার শুরু করেন তাঁর মা ও দাদা-বৌদিরা। প্রণতিকে এতটাই মারধর করা হয় যে, তাঁর গলায় গুরুতর আঘাত লাগে। ফের হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় ওই তরুণীকে। মঙ্গলবারই হাসপাতাল থেকে ফেরত আনা হয় প্রণতিকে। এর পরে বুধবার সকাল থেকেই ওঁকে বাড়ি থেকে তাড়ানোর জন্য বাপ্পার মা ও দাদা-বৌদিরা অশান্তি শুরু করেন বলে অভিযোগ। ওই যুবক বলেন, ‘‘একটা হেস্তনেস্ত করব ভেবে আমি সোজা দাশনগর থানায় চলে যাই। ডিউটি অফিসারকে সব খুলে বলি। অভিযোগ দায়ের করতে চাই। কিন্তু থানা থেকে কোনও সহযোগিতা না পেয়ে বাড়ি ফিরে আসি। ততক্ষণে সব শেষ। দেখি, ঘরের সিলিং থেকে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছে আমার স্ত্রীর দেহ।’’

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার বাসিন্দারা তখনও উত্তেজনায় ফুঁসছেন। ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ত্রিলোকেশ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমি চাঁদা তুলে মেয়েটির বিয়ে দিয়েছিলাম। খুবই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল। আসলে ছেলেটি ভাল হলেও ওঁর পরিবারের লোকজন চাইছিলেন মেয়েটিকে তাড়িয়ে দিয়ে অন্য কোনও পয়সাওয়ালা পরিবারের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিতে।’’

হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘দাশনগর থানা আগে ওই যুবকের অভিযোগ কেন নেয়নি, তা আমরা দেখছি। যা অভিযোগ করা হয়েছে, সেই অনুযায়ী মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তেরা খুব শীঘ্রই ধরা পড়বেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Family Police Dowry
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE