বিশেষ ট্রেনের সামনে দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। মঙ্গলবার শেওড়াফুলি স্টেশনে। ছবি: প্রকাশ পাল
আমার তখন ২২ বছর বয়স। যে দিন ইএমইউ লোকাল চালু হয়েছিল, সে দিন স্টেশন চত্বরে সাজো সাজো রব। প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, রেলমন্ত্রী জগজীবন রামকে দেখতে গিয়েছিলাম। ৩-৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মেই ছিল ছাউনি। অনুষ্ঠান সেখানেই হয়েছিল। খুব ভিড় ছিল। সামনে যেতে পারিনি। ওভারব্রিজের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠান দেখেছিলাম। পতাকা নেড়ে ইএমইউ লোকাল চালু করেছিলেন নেহরু।
অনুষ্ঠান যে খুব জাঁকজমকপূর্ণ ছিল, তা কিন্তু নয়। তবে অনুষ্ঠানের জায়গায় কার্পেট পাতা ছিল। সেখানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলে কথা! জায়গাটা পুলিশ ঘিরে রেখেছিল। অনুষ্ঠানে এত ভিড় হয়েছিল যে, প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা ভাল করে শোনাই যায়নি।
কাঠের রেলগাড়ি থেকে ক্রমে বর্তমান সময়ের ট্রেনের পরিকাঠামোয় বিবর্তন দেখেছি আমরা। তখন শেওড়াফুলি স্টেশন এমন ছিল না। যেখানে এখন রিজার্ভেশন টিকিট কাউন্টার, সেখানে ছিল ঝোপে ঘেরা একটা পুকুর। স্টিম ইঞ্জিনের জন্য সেখান থেকে জল নেওয়া হতো। ৫-৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মের পাশে অর্থাৎ ছাতুগঞ্জের দিকে বড় জায়গা ছিল ইঞ্জিন ঘোরানোর জন্য।
তখন স্টিম ইঞ্জিনে শেওড়াফুলি থেকে হাওড়া যেতে ঘণ্টাখানেক লাগত। আর ইএমইউতে তা কমে দাঁড়াল মিনিট চল্লিশে। পরের কিছু ইএমইউ লোকালে ভালই ভিড় হয়েছিল। তবে একসঙ্গে সব ট্রেন কিন্তু ইএমইউ হয়ে যায়নি। কয়েকটা ইএমইউ লোকাল। বাকি স্টিম ইঞ্জিনের রেলগাড়ি। ধীরে ধীরে সব ট্রেন ইএমইউ হয়। শেওড়াফুলি-হাওড়া শাখা থেকে বিদায় নেয় স্টিম ইঞ্জিন।
আমিও কলেজ ও চাকরি সূত্রে রেলের নিত্যযাত্রী ছিলাম। শেওড়াফুলি থেকে পরের স্টেশন শ্রীরামপুরের ট্রেন ভাড়া ছিল এক অথবা দুই আনা। শেওড়াফুলি-হাওড়া মান্থলি সম্ভবত পাঁচ টাকা। এখন আমার ৮২ বছর বয়স। ইএমইউ লোকালের ৬০ বছর পূর্তিতে বিশেষ ট্রেন আসছে শুনে এই বয়সেও লাঠি হাতে এক সঙ্গীকে নিয়ে স্টেশনে চলে এলাম। চোখের সামনে সে দিনের ছবিটা স্পষ্ট ভেসে উঠল।
(অনুলিখন: প্রকাশ পাল)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy