Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

পিংলা নিয়ে কোর্টের জোড়া তোপে প্রশাসন

রাজ্যের কোথায় কী হচ্ছে, সেই ব্যাপারে প্রশাসনের কেউ নজরই রাখছে না বলে মন্তব্য করলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর। পিংলার বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের মামলায় মঙ্গলবার মূলত দু’দিক থেকে তোপ দেগে রাজ্য প্রশাসনকে দুরমুশ করেছে আদালত। প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন দু’টি:

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৫ ০৪:০৩
Share: Save:

রাজ্যের কোথায় কী হচ্ছে, সেই ব্যাপারে প্রশাসনের কেউ নজরই রাখছে না বলে মন্তব্য করলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর। পিংলার বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের মামলায় মঙ্গলবার মূলত দু’দিক থেকে তোপ দেগে রাজ্য প্রশাসনকে দুরমুশ করেছে আদালত।

প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন দু’টি:

• কোনও ভাবেই তো শিশুদের দিয়ে কারখানা বা অন্যত্র কাজ করানো যায় না। তা হলে ওই বাজি কারখানায় শিশুদের বিপজ্জনক কাজে লাগানো হচ্ছিল কী ভাবে?

• কারখানাটি যে অবৈধ ভাবে চলছে, সেটাই বা প্রশাসনের নজর এড়িয়ে গেল কী করে?

৬ মে পিংলার ওই কারখানায় বড় মাপের বিস্ফোরণ হয়। তাতে ছ’টি শিশু শ্রমিক-সহ ১২ জন মারা যান। কারখানাটির কোনও লাইসেন্সই ছিল না বলে অভিযোগ। সিআইডি তদন্ত করছে। কিন্তু জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-কে ওই তদন্তের ভার দেওয়ার জন্য আর্জি জানানো হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। পিংলা কাণ্ডে জনস্বার্থ মামলার আবেদনকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে অভিযোগ করেন, ওই অবৈধ কারখানায় শিশু শ্রমিকদের দিয়েও কাজ করানো হত। শুনেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন প্রধান বিচারপতি। পরের পর প্রশ্ন তোলেন, এই ধরনের কারখানায় শিশুদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছিল কেন? তারা মারাই বা গেল কী ভাবে? ক’টি শিশু শ্রমিক মারা গিয়েছে? তাদের বয়সই বা কত?

বিকাশবাবু জানান, মৃত্যু হয়েছে মোট ১২ জনের। তাঁদের মধ্যে ছ’জনই শিশু শ্রমিক। তাদের বয়স ১১ থেকে ১২ বছর।

তার পরেই রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে তোপ দাগে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘বাজি তৈরিতে তো সালফার ব্যবহার করা হয়। সালফার শুধু বিপজ্জনকই নয়, তা ফুসফুসের পক্ষে মারাত্মক। এত বড় কারখানা চলছিল। সেটা কারও নজরে এল না?’’ তাঁর মন্তব্য, এই ধরনের কারখানা কোথাও চলছে কি না, তা জানতে প্রশাসনের তরফে আচমকা পরিদর্শন চালিয়ে যাওয়া উচিত।

রাজ্যের জিপি (গভর্নমেন্ট প্লিডার) এ দিন আদালতে হাজির ছিলেন। প্রধান বিচারপতি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে কি? জিপি জানান, যে-বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটেছে, তার মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘এটা প্রশাসনিক গাফিলতিতেই হয়েছে।’’ পিংলার পুরো ঘটনার ব্যাপারে রাজ্য সরকারকে ৫ জুনের মধ্যে সবিস্তার হলফনামা পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।

পিংলার বাজি কারখানার বিস্ফোরণ নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও। ৬ মে ওই বিস্ফোরণের পরে পরেই হাইকোর্টের আইনজীবী রবিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানান, আদালতের উচিত, স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এই বিষয়ে মামলা দায়ের করা। প্রধান বিচারপতি জানিয়েছিলেন, কেউ এই ব্যাপারে দ্রুত মামলা দায়ের করলে তিনি সেটি শুনবেন। এ দিন ছিল সেই মামলারই শুনানি।

আইনজীবী বিকাশবাবু জানান, ওই কারখানার লাইসেন্স ছিল কি না, ক’টি শিশু শ্রমিককে দিয়ে কাজ করানো হত, যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে যথাযথ ধারায় মামলা করা হয়েছে কি না, কার গাফিলতিতে বিস্ফোরণ হয়েছে— আদালতে হলফনামা দাখিল করে সবই জানাতে হবে রাজ্য সরকারকে।

পিংলা বিস্ফোরণ মামলায় ৩০২ ধারা এবং জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্টের (কেয়ার অ্যান্ড প্রোটেকশন অব চিলন্ড্রেন) ২৬ নম্বর ধারা যুক্ত করতে চেয়ে এ দিন মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে আবেদন জানায় সিআইডি। সরকার পক্ষের আইনজীবী সৈয়দ নাজিম হাবিব বলেন, “ওই মামলায় এ দিন নতুন করে আরও দু’টি ধারা যুক্ত হয়েছে।” সিআইডি সূত্রের খবর, আইপিসি-র ৩০২ অর্থাত্‌ খুনের ধারা যুক্ত হওয়ায় মামলাটি আরও জোরালো হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। বিস্ফোরণে মৃতদের মধ্যে বেশ কয়েক জন কিশোর আছে। তাই জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্টের ধারা যুক্ত করা হয়েছে। পিংলা কাণ্ডে প্রথমে আইপিসি-র ২৮৫, ২৮৬, ৩২৬, ৩০৪(২), ৩৪ এবং ইন্ডিয়ান এক্সপ্লোসিভ অ্যাক্টের ৯বি, এক্সপ্লোসিভ সাবস্ট্যান্স অ্যাক্টের ৪-৫ ধারায় মামলা রুজু করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE