স্বজনের ঘরে ফেরার অপেক্ষায়। ব্রাহ্মণীগ্রামে। নিজস্ব চিত্র
নির্দিষ্ট তালিকা নেই, তবে বাহালনগর এবং তার গা ঘেঁষা ব্রাহ্মণীগ্রাম-শেখপাড়ার বহু মানুষই কাশ্মীরের আপেল বাগানে শ্রমিকের কাজ করতে যান। এ বছর উত্তাল ভূস্বর্গেও তাঁদের অনেকেই গিয়েছেন।
কাতরাসুর ঘটনার পরে, সরকারি হিসেবে ১২২ জন শ্রমিককে, যাঁদের অধিকাংশই মুর্শিদাবাদ জেলার, ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করছে রাজ্য সরকার। তবে বাহাল গ্রামের হিসেব বলছে, নবান্নের দেওয়া সংখ্যাটি দ্বিগুণ হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। পিছিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত বাহালনগর থেকে কাশ্মীরে পাড়ি দেওয়া সংখ্যাটিই তার কাছাকাছি।
জেলা প্রশাসনের কাছেও এ ব্যাপারে কোনও স্পষ্ট সংখ্যা নেই। তবে কাতরাসুর ঘটনার পরে সে ব্যাপারে নথি জোগাড় করা শুরু করছে স্থানীয় প্রশাসন, এমনই জানা গিয়েছে জেলাশাসকের দফতর থেকে।
সেই তালিকায় রয়েছে সাগরদিঘির বাহালনগর ও ব্রাহ্মণীগ্রামের ১২টি পরিবারের বেশ কয়েক জন। তাঁদের স্বজনেরা কাশ্মীরের কোথায় রয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়। কবে তাঁরা ঘরে ফিরবেন সে ব্যাপারেও কোনও তথ্য নেই পরিবারের কাছে। কারণ, কাশ্মীরেরে কোনও প্রান্তেই ফোনের যোগাযোগ আর সহজসাধ্য নয়। তবে বিক্ষিপ্ত ভাবে বাহালগ্রামের কয়েকজন শ্রমিক যে ফেরার প্রস্তুতি নিয়েছেন, উপত্যকা থেকে কেউ দিল্লি কেই বা জম্মুতে নেমে এসে ফোনে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানিয়েছেন।
সাগরদিঘি থেকে মাইল খানেক দূরে ব্রাহ্মণীগ্রাম। প্রতি বছর ওই গ্রাম থেকে প্রায় শ’খানেক গ্রামবাসী চুল সংগ্রহ কিংবা বিভিন্ন মণিহারি সামগ্রীর বিনিময়ে অসময়ের আয়ের খোঁজে কাস্মীর পাড়ি দেন। বছরের বেশ কয়েকটা মাস তাঁরা যে ওখানেই থাকেন গ্রাম সূত্রেই তা জানা গিয়েছে।
ব্রাহ্মণী গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য জানান, এখনও সে গ্রামের ৮টি পরিবারের বেশ কয়েক জন রয়েছেন কাশ্মীরের বিভিন্ন জায়গায়। শুককচাঁদ শেখ, জাক্কার শেখ, মক্কর শেখ, মুরসালিম শেখ, আলমগীর শেখ, জাহাহ্গির শেখ, হাবিবুর শেখ ও মনিরুল শেখের পরিবারের উদ্বেগ তাই কাটেনি।
এদের কেউ কাশ্মীরে যাচ্ছেন ১৯ বছর ধরে কারও বা ১৭ বছরের সম্পর্ক। মুরসালিম শেখ তাঁদেরই এক জন। মঙ্গলবার গভীর রাতে ব্রাহ্মনীগ্রামের সেই মুরসালিমের বাড়িতেই প্রথম ছুটে গিয়েছিল পুলিশ ও পঞ্চায়েতের কর্তারা। স্ত্রী তাঞ্জিরা বিবি বলছেন, “অত রাতে বাড়িতে পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। পরে বুঝতে পারি, বাহালনগরের মুরসালিমের সঙ্গেই গুলিয়ে ফেলেছেন তাঁরা।’’ পুলিশ ফিরতেই তাই স্বামীকে ফোন করেছিলেন তাঞ্জিরা। বলছেন, ‘‘ফোনে গলা শুনে ধড়ে প্রাণ
এল যেন!’’
সে গ্রামেরই ছেলে সাফাতুল্লা শেখ সদ্য ফিরেছেন কাশ্মীর থেকে। বছরে ছ’মাসই তাঁর ঠিকানা কাশ্মীরের লাজ্জেন এলাকা। বলছেন, ‘‘মণিহারি সামগ্রী বিক্রি করে বিনিময়ে মাথার চুল সংগ্রহ করি আমরা। সেই চুল এনে বিক্রি করি এখানে। প্রায় ত্রিশ বছর ধরে এ কাজই করছে আমাদের গ্রামের অনেকেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy