Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

তিন তালাক রদে জয় দেখছেন বহু কাজিই

অন্যতম বড় সংগঠন ‘সারা বাংলা মুসলিম ম্যারেজ রেজিস্ট্রার অ্যান্ড কাজি সোসাইটি’-র রাজ্য সম্পাদক মেহেতাবুর রহমান বলেন, ‘‘আমাদের দাবিই যেন সুপ্রিম কোর্টে মান্যতা পেল। এটা আমাদেরও জয় বলে মনে করছি।’’

নুরুল আবসার
শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৭ ০৩:২০
Share: Save:

তাৎক্ষণিক তিন তালাক প্রথাকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে, তাকে নিজেদের জয় বলেই মনে করছেন এ রাজ্যের বহু কাজি।

মুসলিম সমাজে বিয়ের নিবন্ধীকরণ এবং তালাক— দু’টি ক্ষেত্রেই কাজিদের আইনি অধিকার রয়েছে। তাঁদের নিয়োগ করে রাজ্য সরকারের আইন বিভাগ। রাজ্যের বহু কাজি জানিয়েছেন, তাঁরা তাৎক্ষণিক তিন তালাককে বেআইনি বলে আগে থেকেই মনে করতেন। এটা বাতিলের জন্য বিভিন্ন মহলে দাবিও জানিয়ে আসছিলেন। শীর্ষ আদালতের রায় তাঁদের সেই দাবিকে মর্যাদা দিল।

কাজিদের অন্যতম বড় সংগঠন ‘সারা বাংলা মুসলিম ম্যারেজ রেজিস্ট্রার অ্যান্ড কাজি সোসাইটি’-র রাজ্য সম্পাদক মেহেতাবুর রহমান বলেন, ‘‘আমাদের দাবিই যেন সুপ্রিম কোর্টে মান্যতা পেল। এটা আমাদেরও জয় বলে মনে করছি।’’

কেন তাঁরা তাৎক্ষণিক তিন তালাককে বেআইনি বলছেন?

কাজিদের বক্তব্য, শরিয়ত আইন মেনে ‘খুল্লা তালাক’ পদ্ধতি অনুসরণ করে তাঁরা স্বামী বা স্ত্রী, যে কোনও পক্ষের তালাকের ব্যবস্থা করেন। ওই পদ্ধতিতে এক পক্ষ তাঁদের কাছে আবেদন করলে অন্য পক্ষকে প্রথমে নোটিস পাঠানো হয়। এক মাসের মধ্যে সেই নোটিসের উত্তর-সহ সেই পক্ষ কাজির সঙ্গে দেখা করেন। এর পরে তাঁদের মধ্যস্থতায় উভয়পক্ষের আলোচনা ও সম্মতির ভিত্তিতে তালাক হয় এবং তালাকনামা তৈরি হয়। স্বামী যদি দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকেন, তা হলেও স্ত্রী কাজির কাছে স্বামীর থেকে বিচ্ছেদ চেয়ে আবেদন করতে পারেন। সে ক্ষেত্রেও উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে তালাক হয় বলে কাজিরা জানান।

তাঁদের কাছে তাৎক্ষণিক তিন তালাককে বৈধতা দেওয়ার আবেদন এলেও তাঁরা ফিরিয়ে দেন বলে দাবি করেছেন মেহেতাবুর। তিনি বলেন, ‘‘টেলিফোনে, হোয়াটসঅ্যাপে বা চিঠি লিখে তিন তালাক দেওয়াকে আমরা অমানবিক এবং বেআইনি কাজ বলে মনে করি।’’

তা হলে ওই প্রথা কী ভাবে এতদিন চালু ছিল?

কাজিরা দুষছেন ‘মুফতি’দের (ফতোয়া দেওয়ার অধিকারী) একাংশকে। কাজিদের দাবি, তাঁরা যখন তাৎক্ষণিক তিন তালাকের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন, তখন সেই পুরুষটি চলে যান ওই সব মুফতির কাছে। অনেক মুফতিই তাৎক্ষণিক তালাককে বৈধতা দিয়ে দেন বলে অভিযোগ। কাজিরা জানান, এমনও দেখা গিয়েছে আদালতে কোনও মহিলা তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে খোরপোশের মামলা করেছেন। মামলা চলাকালীন স্বামী আদালতে জানাচ্ছেন যে তিনি তাঁর স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন। তিন মাসের ক্ষতিপূরণ এবং ‘দেনমোহরের’ (বিয়ের সময়ে স্ত্রীকে যে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন স্বামী) টাকাও মিটিয়ে দিয়েছেন। ফলে, তাঁকে খোরপোশের মামলা থেকে রেহাই দেওয়া হোক। তালাকের প্রমাণস্বরূপ তিনি মুফতির ফতোয়া আদালতে পেশ করেন।

সেই তালাক বন্ধ হওয়ায় কাজিরা খুশি। তাঁরা মনে করছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ‘মুফতি’দের একাংশের ফতোয়া জারির ওই রীতি এ বার বন্ধ হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE