খুনের অভিযোগে ২০০৪ সালে নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল তাঁর। কলকাতা হাইকোর্ট তাঁকে খালাস করে দেয় চলতি অগস্টে। ১৪ বছর জেল খাটার পরে তাঁর মুক্তি পাওয়ার কথা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বছর দুয়েক আগেই মারা গিয়েছেন বাঁকুড়ার বিমলেন্দু মণ্ডল।
বিমলেন্দুর তো তবু নিম্ন আদালতে সাজা হয়েছিল। এ দেশে দণ্ডাজ্ঞা ঘোষণার আগেই, পাঁচ বছরের বেশি জেলবন্দি হয়ে রয়েছেন অন্তত ৩৫৯৯ জন অভিযুক্ত। বিচারাধীন অবস্থায় তিন থেকে পাঁচ বছর লৌহকপাটের আড়ালে আটকে আছেন ১১ হাজার ৪৫১ জন। তাঁদের কারও বা বিচার প্রক্রিয়া চলছে ঢিমেতালে, অনেকের বিচার এখনও শুরুই হয়নি! দোষী না নির্দোষ, সেই বিচার ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে বন্দিশালায় থাকতে হচ্ছে তাঁদের। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, ওই সব বন্দির অনেকে এমন সব ঘটনায় অভিযুক্ত যে, সাজা পেলেও পাঁচ বছর জেলে কাটাতে হত না। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়ায় বিলম্বের দরুন জেলই আপাতত তাঁদের ঠিকানা।
সারা দেশের সঙ্গে বিশেষ ফারাক নেই পশ্চিমবঙ্গের জেলগুলিরও। কারা দফতর সূত্রের খবর, এ রাজ্যের জেলগুলিতে সব মিলিয়ে সাড়ে ১৭ হাজার বন্দি রাখার পরিকাঠামো রয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলে এখন গাদাগাদি করে রয়েছেন প্রায় ২২ হাজার অভিযুক্ত। তাঁদের অন্তত ৬৫ শতাংশ বিচারাধীন বন্দি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এ রাজ্যে পাঁচ বছরের বেশি জেলে কাটানো বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা ছিল ২৯৪। তিন থেকে পাঁচ বছর জেলে আটকে আছেন ৬০৭ জন অভিযুক্ত।
বিনা বিচারে এত অভিযুক্তকে দীর্ঘদিন জেলে থাকতে হচ্ছে কেন?
এক কারাকর্তা বলেন, ‘‘বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা যে রয়েছে, তা অস্বীকার করা যায় না। এ রাজ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত থাকায় কয়েক হাজার বাংলাদেশিকে প্রায় সব সময়েই পাওয়া যায় বন্দিশালায়। জানখালাস (সাজার মেয়াদ পূর্ণ করা অপরাধী)-এর পরেও তাঁদের অনেককে নিজেদের দেশে ফেরানো যায় না। ফলে তাঁরাও জেলে থেকে যান।’’ ওই কর্তার যুক্তি, কিছু ক্ষেত্রে তদন্তকারী সংস্থা অভিযুক্তদের জেলে আটকে রেখেই বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে চায়। সেই সব অভিযুক্তকে দীর্ঘদিন জেলে রেখে বিচার পর্ব চলে।
তদন্তকারী সংস্থা যদি সময়মতো চার্জ গঠন করতে না-পারে, তা হলে তো অভিযুক্তদের জামিন পাওয়ার কথা। তাঁদের আটকে রাখা হচ্ছে কী ভাবে? ‘‘এ দেশের বিচার ব্যবস্থায় জামিন দেওয়ার প্রবণতা বা পদ্ধতি ব্রিটেন বা আমেরিকার মতো নয়। ফলে সারা দেশেই বিচার চলাকালীন অভিযুক্তদের দীর্ঘদিন জেলে আটকে রাখতে দেখা যায়,’’ ব্যাখ্যা আইন দফতরের এক আধিকারিকের।
কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, অন্যান্য রাজ্যেও বিচার চলাকালীন অনেক অভিযুক্তের ঠাঁই হয় বন্দিশালায়। বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা সব থেকে বেশি উত্তরপ্রদেশে। তার পরে রয়েছে বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড...।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy