Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Corporation Election

পুর-আসন সংরক্ষণ, বিপাকে বহু নেতাই

এ দিন সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলায় সংশ্লিষ্ট পুরসভাগুলির খসড়া সংরক্ষণ তালিকা প্রকাশের পরে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো হয়।

সংরক্ষের কোপে পড়তে পারেন বহু হেভিয়েট নেতা। ফাইল চিত্র।

সংরক্ষের কোপে পড়তে পারেন বহু হেভিয়েট নেতা। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২০ ০২:৫৪
Share: Save:

রাজ্যের ৯৩টি পুরসভার আসন সংরক্ষণের খসড়া তালিকা প্রকাশ হল শুক্রবার। এই তালিকাই চূড়ান্ত হলে সংরক্ষণের গেরোয় পড়তে পারেন বিভিন্ন পুরসভার চেয়ারম্যান থেকে মেয়র পারিষদদের অনেকেই। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি এই সংক্রান্ত চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে ১৪ দিন এই খসড়া নিয়ে দাবি এবং আপত্তি জানানো যাবে।

এ দিন সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলায় সংশ্লিষ্ট পুরসভাগুলির খসড়া সংরক্ষণ তালিকা প্রকাশের পরে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো হয়। তবে কলকাতা-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনার ছ’টি পুরসভার তালিকা কমিশনে আসে সন্ধ্যার পরে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাশাসক-সহ পদস্থ কর্তারা গঙ্গাসাগর মেলায় ব্যস্ত থাকায় এই দেরি বলে জেলা প্রশাসনের দাবি।

খসড়া তালিকা অনুযায়ী, কলকাতা পুরসভার ২১ জন কাউন্সিলরের বর্তমান ওয়ার্ড সংরক্ষিত হয়েছে। চার জন মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার, রতন দে, বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় এবং স্বপন সমাদ্দারের ওয়ার্ড সাধারণ মহিলা হিসেবে সংরক্ষিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে দেবব্রতের বক্তব্য, ‘‘দল যা ভাল মনে করবে, তাই হবে। আমি তো দলের সৈনিক।’’ স্বপনের কথায়, ‘‘দল যে দায়িত্ব দেবে, তা মাথা পেতে নেব।’’ বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ সুধীর সাহার আসন সরংক্ষণের আওতায় পড়েছে। বরো চেয়ারম্যান বাণীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও ৮ জন কাউন্সিলরের ওয়ার্ড সংরক্ষিত হয়েছে।

খসড়ায় আসানসোল পুরসভার মেয়র তথা পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারির ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডটি তফসিলি জনজাতির মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান দুলাল দাসের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যান আবু তাহের মোল্লার ৮ নম্বর ওয়ার্ডটিও সংরক্ষিত হয়েছে। দুলালের বক্তব্য, ‘‘দল যদি অন্য কোনও ওয়ার্ডে প্রার্থী হতে নির্দেশ দেয়, তাই হবে।’’

ব্যারাকপুর মহকুমার অন্তত ছ’জন পুর চেয়ারম্যানের আসন সংরক্ষণের গেরোয় পড়ছে। কাঁচরাপাড়া, হালিশহর, নৈহাটি, গারুলিয়া, টিটাগড় ও দমদমের চেয়ারম্যানদের আসন হয় মহিলা, নয় তফসিলি জাতি-উপজাতি প্রার্থীর জন্য সংরক্ষিত রাখার কথা এ দিনের প্রকাশিত খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। উপ-পুরপ্রধানের আসন সংরক্ষণ হয়েছে ব্যারাকপুরে।

পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরের চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকারের ২০ নম্বর ওয়ার্ডটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। একই ভাবে সংরক্ষিত হয়েছে আরও তিন চেয়ারম্যানের ওয়ার্ড। ঘাটালের বিভাসচন্দ্র ঘোষ, খড়ারের উত্তম মুখোপাধ্যায় এবং রামজীবনপুরের নির্মল চৌধুরী গত বারের জয়ী আসন থেকে সম্ভবত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।

আসন সংরক্ষণের গেরোয় পড়তে পারেন উত্তরপাড়ার চেয়ারম্যান দিলীপ যাদব, আরামবাগের চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী, ওই পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান আলমগির ওরফে রাজেশ চৌধুরী, বৈদ্যবাটীর চেয়ারম্যান অরিন্দম গুঁইন এবং ডানকুনির ভাইস চেয়ারম্যান দেবাশিস মুখোপাধ্যায়, বৈদ্যবাটির ভাইস চেয়ারম্যান ব্রক্ষ্মদাস বিশ্বাস এবং ভদ্রেশ্বরের ভাইস চেয়ারম্যান প্রকাশ গোস্বামী। এগরার চেয়ারম্যান শঙ্কর বেরার ওয়ার্ডটি তফসিলি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। কাঁথির ভাইস চেয়ারম্যান সত্যেন্দ্রনাথ জানা ও তমলুকের ভাইস চেয়ারম্যান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়ের ওয়ার্ডও সংরক্ষিত হয়েছে।

সংরক্ষণের জেরে নিজেদের ওয়ার্ড হারাতে পারেন পুরুলিয়ার চেয়ারম্যান শামিম দাদ খান, রঘুনাথপুরের চেয়ারম্যান মদন বরাট এবং ঝালদার ভাইস চেয়ারম্যান কাঞ্চন পাঠক।

পূর্ব বর্ধমানের দাঁইহাটের চেয়ারম্যান শিশির মণ্ডলের ১২ নম্বর ওয়ার্ডটি খসড়া অনুযায়ী সংরক্ষিত হয়েছে। একই কারণে মেমারির দু’বারের পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ীকে তাঁর বর্তমান ওয়ার্ডটি হারাতে হতে পারে।

সংরক্ষণের গেরোয় পড়তে পারেন রামপুরহাটের চেয়ারম্যান অশ্বিনী তিওয়ারী ও ভাইস চেয়ারম্যান সুকান্ত সরকার। সংরক্ষণের কারণে সরতে হতে পারে সাঁইথিয়ার চেয়ারম্যান বিপ্লব দত্তকে। বীরভূমের বিজেপির জেলা সহ সভাপতি শুভাশিস চৌধুরীও নিজের ওয়ার্ড হারাতে পারেন।

খসড়া অনুযায়ী, নদিয়ার নবদ্বীপের চেয়ারম্যান বিমানকৃষ্ণ সাহার ৪ নম্বর ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হয়েছে। সরংক্ষণের কারণে চাকদহের ভাইস চেয়ারম্যান সুকুমার রায় তাঁর বর্তমান ওয়ার্ড থেকে সম্ভবত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। রানাঘাটের ভাইস চেয়ারম্যান বিজয়প্রসাদ মল্লিকের ওয়ার্ডটি সংরক্ষণের আওতায় পড়ছে। তাহেরপুরের ভাইস চেয়ারম্যান বঙ্কিম চক্রবর্তীর ওয়ার্ড সংরক্ষিত হয়েছে।

সংরক্ষণের আওতায় পড়েছেন মুর্শিদাবাদের চেয়ারম্যান বিপ্লব চক্রবর্তী ও জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জের চেয়ারম্যান প্রসেনজিৎ ঘোষ। সংরক্ষণের কারণে নিজেদের বর্তমান ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ হারাতে পারেন জঙ্গিপুরের চেয়ারম্যান মোজাহারুল ইসলাম এবং ধূলিয়ান পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুবল সাহা।

ওয়ার্ড সংরক্ষণের জেরে নিজেদের আসনে লড়া নাও হতে পারে ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান নীহাররঞ্জন ঘোষ, গঙ্গারামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান অমল সরকার এবং কালিয়াগঞ্জের চেয়ারম্যান কার্তিকচন্দ্র পালের।

তুফানগঞ্জের চেয়ারম্যান অনন্তকুমার বর্মা, মালবাজারের পুরপ্রধান স্বপন সাহার বর্তমান ওয়ার্ড সংরক্ষণের গেরোয় পড়তে চলেছে। মাথাভাঙার ভাইস চেয়ারম্যান চন্দনা দাস, দিনহাটার ভাইস চেয়ারম্যান শুভময় চক্রবর্তী নিজের আসনে ভোটে লড়ার সুযোগ হারাতে পারেন।

খসড়া অনুযায়ী শিলিগুড়ি পুরসভায় নিজেদের ওয়ার্ডে দাঁড়াতে পারবেন না একাধিক বাম কাউন্সিলর। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ডেপুটি মেয়র রামভজন মাহাত, চেয়ারম্যান দিলীপ সিংহ, মেয়র পারিষদ কমল আগরওয়াল, শঙ্কর ঘোষ এবং নুরুল ইসলাম। খসড়া তালিকা অনুযায়ী জলপাইগুড়ি পুরসভাতেও সংরক্ষণের গেরোয় পড়তে চলেছেন তৃণমূলের উপ পুরপ্রধান পাপিয়া পাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Corporation Election TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE