Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বন্দুক ছেড়ে কলম, জেল থেকেই ‘সেট’ দিয়ে ছাত্র পড়াতে চান এই মাওবাদী

কাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত প্রথমার্ধ। আর দ্বিতীয়ার্ধ সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত।

অর্ণব দাম। —ফাইল চিত্র।

অর্ণব দাম। —ফাইল চিত্র।

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ 
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৫৯
Share: Save:

আগ্নেয়াস্ত্র অতীত! কলম বর্তমান।

আগামী ২ ডিসেম্বর, রবিবার রাজ্যের ‘স্টেট এলিজিবিটি টেস্ট’ ‘সেট’ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত প্রথমার্ধ। আর দ্বিতীয়ার্ধ সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। সেই ‘সেট’-এ উত্তীর্ণ হতে উত্তর-মধ্য কলকাতার এক কলেজে কলম নিয়ে লড়াই করবেন একদা মাওবাদীদের বাংলা-ঝাড়খণ্ড-ওড়িশার আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক অর্ণব দাম। রাজনীতিতে তিনি বিক্রম নামেই পরিচিত। বর্তমানে প্রেসিডেন্সি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার রয়েছেন তিনি।

২০১২ সালের জুলাইয়ের মাঝামাঝি পুরুলিয়ার বিরামডি রেল স্টেশনের কাছ থেকে গ্রেফতার হন সুভাষগ্রামের অর্ণব। জেলেও পড়াশোনায় বুঁদ খড়্গপুর আইআইটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়া অসমাপ্ত রেখে অতি বাম রাজনীতিতে নাম লেখানো অর্ণব। ইন্দিরা গাঁধী জাতীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক স্তরে ৬৫% নম্বর পান তিনি। সেখান থেকেই ৬৬.৪% নম্বর পেয়ে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হন অর্ণব। এ বার ‘সেট’-এ বসে কলেজ অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছেন তিনি। তাঁর ঘনিষ্ঠদের দাবি, সংশোধনাগারে থেকে কোনও বন্দি এই প্রথম ‘সেট’-এ বসছেন। অ্যাডমিট কার্ড পেয়েছেন চল্লিশ ছুঁইছুঁই অর্ণব। ভবিষ্যতে পিএইচডি’ও করতে চান তিনি। নেট-এ বসার প্রস্তুতিও শুরু করেছেন।

আরও পড়ুন: যোগীর ছোঁয়াচ এ রাজ্যের স্কুলে, ইসলামপুর নাম বদলে হল ‘ঈশ্বরপুর’!

শুধুমাত্র নিজের পড়াশোনা নয়, বরং সংশোধনাগারে থাকা অন্যরাও যাতে লেখাপড়া ভাল করে করতে পারেন, সে দিকেও সজাগ দৃষ্টি রয়েছে তাঁর। তাঁদের পড়ানও। এক সময়ে তাঁকে কেউ কেউ মাস্টারদা বলেও ডাকতেন। পাশাপাশি, বন্দিদের খাবারের মান বৃদ্ধি, জেল হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নতি-সহ একাধিক বিষয়ে কারা দফতরের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠিও লিখেছেন অর্ণব। আগামী ১৫ নভেম্বর মেদিনীপুর আদালতে অর্ণবের জামিনের আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা, জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী অজয় ঘোষ। পাশাপাশি, ৩১টি মামলার মধ্যে ৩০টি’তে জামিন হয়েছে। তবে শিলদায় ইএফআর ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় এখনও জামিন পাননি অর্ণব।

ছেলের সাফল্যে খুশি অর্ণবের মা কল্যাণী সরকার দাম। তাঁর কথায়, ‘‘সম্পূর্ণ ওর কৃতিত্ব। অতীত নিয়ে কোন বাবা-মা বসে থাকতে চান!’’ এডিপিআরের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রঞ্জিত শূরের বক্তব্য, ‘‘জেলের বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে লেখাপড়ার প্রতি অনুরাগ প্রমাণ করেছে অর্ণব। বাকিটাও যাতে তিনি করতে পারেন, তা সরকারের দেখা উচিত।’’ অন্য দিকে, শিলদা মামলার ‘দীর্ঘসূত্রতা’ নিয়ে ‘ক্ষোভ’ প্রকাশ করেছেন রঞ্জিত। তাঁর মতে, ‘‘শিলদা মামলায় আট বছর কাটতে চলল। মামলা শেষ হতে হতে বন্দিদের জীবনও শেষ হয়ে যাবে! ’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

State Eligibity Test Jail Maoist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE