Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পুজোয় বাপের বাড়িতে এসে ডেঙ্গিতে মৃত্যু

হাসপাতালের তরফে অবশ্য ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়েছে, ‘এন এস-১ পজিটিভ। ভাইরাল ফিভার উইথ শক সিন্ড্রোম।’

দিশা বর্মণ। —নিজস্ব চিত্র।

দিশা বর্মণ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৮ ০২:২৫
Share: Save:

দুই সন্তানকে নিয়ে পুজোয় বাপের বাড়ি এসেছিলেন মেয়ে। পরিকল্পনা ছিল, ছটপুজো এবং আগামী ২০ তারিখ নিজের জন্মদিন কাটিয়ে তার পরে ঝাড়খণ্ডে শ্বশুরবাড়িতে ফিরবেন। তবে তা আর হল না। যাদবপুরের প্রিন্স গোলাম হুসেন শাহ রোডে বাপের বাড়িতেই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যু হল দিশা বর্মণ (২৪) নামে ওই তরুণীর। তাঁর পরিবারের দাবি, ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন দিশা। হাসপাতালের তরফে অবশ্য ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়েছে, ‘এন এস-১ পজিটিভ। ভাইরাল ফিভার উইথ শক সিন্ড্রোম।’

দিশার স্বামী রাজেশ বর্মণ জানান, গত সপ্তাহের বুধবার থেকে জ্বরে ভুগছিলেন দিশা। আড়াই মাসের ছেলে এবং চার বছরের মেয়েকে মায়ের কাছে রেখে গত শনিবার বিজয়গড় স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। সোমবার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে কেপিসি মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই বুধবার দুপুরে মৃত্যু হয়েছে দিশার। রাজেশ বলেন, ‘‘বাচ্চাদের নিয়ে বাপের বাড়িতে ঘুরতে এসেছিল দিশা। এ ভাবে জ্বর বাঁধিয়ে এখানেই যে সব শেষ হয়ে যাবে, ভাবতেও পারিনি।’’ মেয়ের মৃত্যুতে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই মা হীরাদেবী। শুধু বললেন, ‘‘ঘুরে দেখুন আমরা কোথায় থাকি, সব বুঝে যাবেন।’’

বুধবার দিশার মৃত্যুর খবর তাঁর বাপের বা়ড়ির পা়ড়া প্রিন্স গোলাম হুসেন শাহ রোডের বস্তিতে পৌঁছতেই উত্তেজনা দেখা দেয়। এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। পুরসভার লোকজন এ দিন সকালে এলাকা সাফাইয়ে গেলে তাঁদের সঙ্গে বচসা শুরু হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁদের দাবি, গত সোমবারই ওই এলাকায় বিনোদ চৌধুরী (৪৩) নামে আরও এক জনের ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছিল। যদিও তাঁর ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়েছে, ‘এনএস-১ পজিটিভ’। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিনোদ এবং দিশার মতো এলাকার আরও আট-ন’জন জ্বরে আক্রান্ত। এক তরুণী কেপিসি মেডিক্যাল কলেজে আশঙ্কাজনক অবস্থায় এখনও চিকিৎসাধীন। ঘরে ঘরে জ্বর হলেও পুরসভা কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। বিজয় সিংহ নামে এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমরা বস্তিতে থাকি। তাই হয়তো কাউন্সিলর আসেন না।’’

বস্তিটি বন্ধ হয়ে যাওয়া বেঙ্গল ল্যাম্প কারখানার পাশেই। বস্তি লাগোয়া জলা জায়গা এক ঝলক দেখলেই মনে হয়, মশার আঁতুড়ঘর। দু’-দু’টি মৃত্যুর পরে নালায় ব্লিচিং ছড়িয়েছে পুরসভা। তাতে আদৌ কাজ হয় কি? এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ১০ নম্বর বরোর অন্তর্গত। বরো চেয়ারম্যান তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবার রাস্তা বিভাগের মেয়র পারিষদও। সব দিক দেখতে হয় তাঁকে। ওই এলাকায় কাজ হয় না, এটা মানতে পারব না।’’ স্থানীয় কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ (রাস্তা) রতন দে জানান, পুরসভার তরফে এলাকায় নিয়মিত কাজ করা হয়। এ দিনও সাফাইয়ের কাজ হয়েছে। তবে ডেঙ্গিতে মৃত্যুর খবর তিনি মানতে নারাজ। বললেন, ‘‘যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। তবু বলছি, মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে হবে। তা ছাড়া, ওঁরা তো বাইরে থেকে এসেছিলেন!’’ স্থানীয়রা অবশ্য জানালেন, বিনোদ ওই এলাকাতেই থাকতেন। আর দিশা দুর্গাপুজোয় বাপের বাড়িতে যখন আসেন, তিনি সুস্থ ছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Health Medical
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE