Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Purulia

রণক্ষেত্র পুরুলিয়া, ব্যাপক বোমাবাজি, পুলিশের গুলিতে দুই কর্মীর মৃত্যু, দাবি বিজেপির

রাজ্য বিজেপি-ও পুরুলিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছে। দলের মুখপাত্র সায়ন্তন বসু বলেছেন, ‘‘পুরুলিয়ায় একের পর এক পঞ্চায়েত জোর করে বিজেপি-র হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে সকাল থেকে। সর্বত্র বোমা-গুলির উৎসব চলছে। পুলিশ হয় নীরব দর্শক।”

ঘটনার দিন। —নিজস্ব চিত্র।

ঘটনার দিন। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৮ ১৭:০৩
Share: Save:

গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন ঘিরে কার্যত রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে পুরুলিয়া। সোমবার সকাল থেকেই জেলার নানা প্রান্ত থেকে তুমুল অশান্তির খবর আসতে শুরু করেছে। জয়পুর ব্লকে পুলিশের গুলিতে অন্তত ২ জন বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ রাজ্য বিজেপি-র। রঘুনাথপুর-১ এবং রঘুনাথপুর-২ ব্লকের বিভিন্ন এলাকা থেকেও ব্যাপক গুলি এবং বোমাবাজির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অভিযোগের আঙুল তৃণমূলের দিকেই। তৃণমূল অবশ্য বিজেপির বিরুদ্ধে অশান্তি পাকানোর পাল্টা অভিযোগ তুলেছে।

এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে পুরুলিয়ায়তেই সবচেয়ে ভাল ফল করেছে বিজেপি। গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার নিরিখে বিজেপি এবং তৃণমূল প্রায় সমান সে জেলায়।

বিজেপি-র জেলা নেতৃত্ব জানাচ্ছে, শান্তিপূর্ণ ভাবে বোর্ড গঠন হলে অন্তত ৫৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড বিজেপির দখলে আসবে। ত্রিশঙ্কু বোর্ডগুলির বেশ কয়েকটিতেও বিজেপি জয়ী হবে বলে জেলা নেতাদের দাবি। কিন্তু বোর্ড গঠন শান্তিপূর্ণ ভাবে হওয়ার কোনও লক্ষণই নেই। আজ, সোমবার থেকেই পুরুলিয়ায় গ্রাম পঞ্চায়েত গঠন শুরু হয়েছে। আর আজ সকাল থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে বোমা-গুলির লড়াই।

আরও পড়ুন: ফের বোমা উত্তরে,যদুবংশ ধ্বংস হবে, কটাক্ষ বিরোধীর

জেলা বিজেপি-র সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জয়পুর ব্লকের ঘাগরা গ্রাম পঞ্চায়েত জোর করে দখল করতে এলাকায় ব্যাপক সন্ত্রাস কায়েম করেছে তৃণমূল। সকাল থেকে মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়ছে, গুলি চলছে। আমাদের কর্মীরাও রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। তখন পুলিশ তৃণমূলের হয়ে মাঠে নেমেছে। বিজেপি কর্মীদের লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি চালিয়েছে। তাতে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাচ্ছি। এক জনের নাম নারায়ণ গোপ। আর একজনের বিষয়ে বিশদ খবর এখনও পাইনি।’’ অনেক বিজেপি কর্মী গুলি-বোমায় জখম হয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

পুরুলিয়ার অশান্তির ভিডিয়ো দেখুন

একই ছবি রঘুনাথপুর-১ এবং রঘুনাথপুর-২ ব্লকে। রঘুনাথপুর-১ ব্লকের খাজুরা গ্রাম পঞ্চায়েত এবং চোরপাহাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত জোর করে দখল করতে সকাল থেকে তৃণমূল দুষ্কৃতীদের রাস্তায় নামিয়েছে বলে বিজেপি-র দাবি। বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘খাজুরা গ্রাম পঞ্চায়েতে একটাও আসন পায়নি তৃণমূল। সেই গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ডও তৃণমূল দখল করতে চাইছে। আমাদের নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যদের পৌঁছতেই দেওয়া হয়নি পঞ্চায়েত দফতরে। সকাল থেকে ব্যাপক বোমা পড়ছে, গুলি চালাচ্ছে। চোরপাহাড়িতেও আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। সেখানেও একই ভাবে সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে।’’ পুলিশ সর্বত্রই তৃণমূলের হয়ে ময়দানে নেমেছে বলে বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর অভিযোগ।

আরও পড়ুন: কে প্রধান, নাম যাবে বন্ধ খামে

রাজ্য বিজেপি-ও পুরুলিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছে। দলের মুখপাত্র সায়ন্তন বসু বলেছেন, ‘‘পুরুলিয়ায় একের পর এক পঞ্চায়েত জোর করে বিজেপি-র হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে সকাল থেকে। সর্বত্র বোমা-গুলির উৎসব চলছে। পুলিশ হয় নীরব দর্শক। না হলে তৃণমূলের মস্তান বাহিনীর পাশে দাঁড়িয়ে গুলি চালাচ্ছে। ইতিমধ্যেই আমাদের অন্তত ২ জন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পেয়েছি।’’

পুলিশ অবশ্য গুলি চালানোর বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া বলেছেন, ‘‘পুলিশের দিকেই বোমা-গুলি ছোড়া হয়েছে। আমাদের অন্তত চার-পাঁচ জন জখম হয়েছেন।’’ তবে রাতে এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শূন্যে দু’রাউন্ড গুলি চালিয়েছে।

আরও পড়ুন: দিল্লিতে অসুস্থ লকেট চট্টোপাধ্যায়, রাখা হয়েছে আইসিইউ-তে

যদিও শাসকদল তৃণমূল সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘তৃণমূলের কেউ কোথাও বোমাও ছোড়েননি, গুলিও চালাননি। বিজেপির অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। পুলিশ গুলি চালিয়েছে বলেও কোনও খবর নেই। বিজেপি-ই অশান্তি তৈরি করছে। ঝাড়খণ্ড থেকে লোকজন এনে বোর্ড দখলের চেষ্টা করছে ওরা। আর ঝাড়খণ্ডের সংস্কৃতিটাই হল বোমা-গুলির। ওখান থেকে আসা লোকজনই বোমা ছুড়ছে। গুলি চালাচ্ছে।’’

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে অবশ্য হিংসার সমালোচনাই শোনা গিয়েছে। সোমবার তিনি বলেন, ‘‘জয়পুরে ২ জন মারা গিয়েছেন বলে শুনছি। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আমাদের দলের হোক বা অন্য দলের, কারও মৃত্যুই কাম্য নয়। আমার কাছে যে কোনও মৃত্যুই দুঃখের। এত বড় রাজ্য, কিন্তু কোথাও একটা ঘটনা ঘটলেই আমার খারাপ লাগে।’’ বোর্ড গঠন নিয়ে যাতে আর উত্তেজনা না বাড়ে বা রক্তপাত না হয়, তা নিশ্চিত করতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান। নবান্নে মিডিয়ার সামনে এ কথা বলার আগে ক্যাবিনেট বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করেন বলে জানা গিয়েছে। আপাতত নিজের নিজের জেলায় থেকে শান্তিপূর্ণ ভাবে বোর্ড গঠন করার জন্য মন্ত্রীদের তিনি নির্দেশ দিয়েছেন বলে খবর।

(দুই বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল, পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া সহ দক্ষিণবঙ্গের খবর, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা খবর, 'বাংলার' খবর পড়ুন আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE