রামপ্রসাদ সাহা
পুলিশের সন্দেহ ছিল চেনা কেউ-ই মেরেছে মহম্মদবাজারে দুই বোনকে। জোড়া খুনে শেষমেশ তাদেরই মামাকে ধরল পুলিশ।
শনিবার সিউড়ি সদর হাসপাতালের মর্গের সামনে থেকে নিহত সুস্মিতা ও পুষ্পিতা সাধুর মামা রামপ্রসাদ সাহাকে মহম্মদবাজার থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। দফায় দফায় জেরা করা হয়। রবিবার নিহত দুই বোনের বাবা দেবাশিস সাধু তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি খুনের অভিযোগ করার পরে রাতে রামপ্রসাদ গ্রেফতার হয়। বীরভূমের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারের দাবি, ‘‘এই খুনের নেপথ্যে আছে সম্পত্তির বিবাদ।’’ যদিও ভাগ্নিদের সম্পত্তির জন্য মামা কেন তাদের খুন করবেন, সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘আপাতত আমরা খুনের কারণ বললাম। কী ভাবে কী হয়েছে, তদন্তের স্বার্থে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’’
বৃহস্পতিবার মহম্মদবাজারের পানাগড়-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বাসস্টপ লাগোয়া বাড়িতে গলা কেটে খুন করা হয় সুস্মিতা (১৫) ও পুষ্পিতাকে (১৩)। তাদের মা অপর্ণা সাধুর দাবি, ঘটনার সময় তিনি পাশের গ্রামে পুজো দিতে গিয়েছিলেন। ফিরে দেখেন, রক্তে ভেসে যাচ্ছে ছোট মেয়ের ক্ষতবিক্ষত দেহ। তিনি ফোন করে ডাকেন ভাই রামপ্রসাদকে। তিনি এসে খোঁজ করতে গিয়ে দেখেন দোতলায় যাওয়ার সিঁড়িতে পড়ে রয়েছে বড় ভাগ্নির দেহ। তার গলায় তখনও আটকে বঁটি। প্রথম থেকেই খুনের মোটিভ নিয়ে ধন্দে ছিল পুলিশ।
পুলিশের দাবি, শুরু থেকেই তাদের মনে হয়েছিল, ওই পরিবারের ঘনিষ্ঠ কেউ খুনের ঘটনায় জড়িত। তদন্তে এ-ও জানা গিয়েছে, অপর্ণাদেবীদের পরিবারের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে তাঁর দেওরের পরিবার এবং বাপের বাড়ির সম্পত্তি নিয়ে ভাইয়ের (রামপ্রসাদ) পরিবারের সঙ্গে বিরোধ ছিল। পুলিশের দাবি, আরও তিনটি তথ্যও গিয়েছে ধৃতের বিরুদ্ধে। এক, খুনের সময়, অর্থাৎ বিকেল ৫টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত অভিযুক্তের মোবাইল বন্ধ ছিল। দুই, ঘটনাস্থল থেকে রামপ্রসাদের একপাটি চটি মিলেছে। তিন, জিজ্ঞাসাবাদে অসঙ্গতিপূর্ণ দাবি করেছেন রামপ্রসাদ।
সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের তত্ত্ব পুলিশ প্রকাশ্যে বললেও পরিবারের ‘সম্মানরক্ষা’র অজুহাতে দুই বোনকে খুন করার সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দিচ্ছে না জেলা পুলিশের একাংশ। এই অংশের দাবি, জেরায় তাদের কাছে রামপ্রসাদ জানিয়েছেন, তাঁর বড় ভাগ্নির সঙ্গে ‘নিম্নবর্ণের’ একটি ছেলের সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্ক তিনি মানতে পারেননি। ভাগ্নিকে সরে আসার জন্য একাধিকবার বলেওছেন। ঘটনার দিন বিকেলে সুস্মিতাদের বাড়ি গিয়ে ফের এ বিষয়ে আপত্তির কথা জানান রামপ্রসাদ। সুস্মিতার সঙ্গে তাঁর এ নিয়ে বচসা বাধে। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃত জানিয়েছেন, রাগের মাথায় বঁটি নিয়ে সুস্মিতার গলায় তিনি কোপ বসিয়ে দেন। সেই ঘটনা দেখে ফেলায় খুন হতে হয় পুষ্পিতাকেও। যে স্কুলছাত্রের সঙ্গে সুস্মিতার সম্পর্ক ছিল, এ দিন সে-ও দাবি করেছে, তাদের সম্পর্কে আপত্তি থাকায় অপর্ণাদেবী ও রামপ্রসাদ সুস্মিতাকে মারধর করতেন।
এ দিন দুপুর একটা নাগাদ কড়া পুলিশ পাহারায় রামপ্রসাদকে সিউড়ি আদালতের এসিজেএম রিনা তালুকদারের এজলাসে তোলা হয়। পুলিশ সাত দিনের হেফাজত চাইলেও চার দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেন বিচারক। অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি লোপামুদ্রা দাশ জানান, নিহতদের বাবা দেবাশিস সাধুর এফআইআরে নাম রয়েছে অভিযুক্তের। ধৃতের স্ত্রী চুমকি সাহার অবশ্য দাবি, ‘‘এই অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। আমার স্বামী নিজের ছেলের চেয়েও বেশি ভালবাসত ভাগ্নিদের। এমন কাণ্ড তিনি করতেই পারেন না!’’
আগেই জিজ্ঞাসাবাদের পরে নিহতদের কাকা, কাকিমা, ঠাকুমা এক সহপাঠী, খুড়তুতো দাদা ও গৃহশিক্ষককে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। এখন পুলিশ দফা দফায় জেরা করা যাচ্ছে সুস্মিতাদের মা অপর্ণা সাধু এবং তাঁর ‘বিশেষ’ পরিচিত স্কুলশিক্ষক সুবল মণ্ডলকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy