ভোটে কার কত আসন বাড়ল বা কমলো, সেটা বলবে ১৯ মে। ওই দিনই বেরোবে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল।
ভোটের আগেই কমে গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৎপরতায় বাড়ানো মেডিক্যালের বেশ কিছু আসন।
জেলায় জেলায় ঢালাও সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল খোলার সিদ্ধান্ত কার্যত গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্য সরকারের।
কারণ? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক-সহ পরিকাঠামোর বন্দোবস্তই নেই।
রাজনৈতিক বাহবা লোটার তাগিদে ডাক্তারির আসন বাড়িয়ে নিয়ে এখন তার অনেকটাই খোয়াতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে।
কারণ? পরিকাঠামোই নেই।
ডাক্তারির আসন নিয়ে টানাপড়েন প্রায় ফি-বছরের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমবিবিএসের আসনে কোপ তো পড়ছিলই। এ বার কোপ পড়ল স্নাতকোত্তর স্তরের আসনেও।
গত পাঁচ বছরে ডাক্তারির আসন বৃদ্ধির প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতার দাবি, তাঁরা রাজ্যে মেডিক্যাল শিক্ষার ভোল বদলে দিয়েছেন। কিন্তু এ বার সেই বর্ধিত আসনেই কোপ মারল মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)। পরিকাঠামোর অভাব দেখিয়ে রাজ্যের কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজে এমডি এবং এমএস-এর কিছু আসনে ছাড়পত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছে তারা। রাজ্যের তরফে ত্রুটি শোধরানোর কোনও চেষ্টাই কাজে আসেনি। হাল ছেড়ে দিয়ে আসন ছাঁটাইয়ের কথা জানিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
ভোটের আগে স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইটে তাঁর কৃতিত্বের তালিকায় মেডিক্যালে আসন বাড়ানোর কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এখন, ভোটপর্ব চলাকালীন আসন বাতিলের বিষয়টি সরকারের মুখ পোড়াবে বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তাদের একটি বড় অংশ। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘পরিকাঠামোর ব্যবস্থা না-করে স্রেফ সংখ্যার দৌড়ে এগিয়ে থাকতে চেয়েছেন উনি। সেটার পরিণতি তো এমনই হওয়ার কথা।’’
বিরোধী শিবির সমালোচনায় ঝাঁপিয়ে পড়বে, জানা কথা। কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে এই নিয়ে নিজের দফতরেই সমালোচনার মুখে পড়ছেন, তার কারণ, পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ এর সঙ্গে জড়িয়ে। এমন সময়ে আসন ছাঁটাইয়ের ফরমান এল, ছাত্রছাত্রীরা যখন পাঠ শুরু করতে চলেছেন। ওই সব স্নাতকোত্তর আসনে ভর্তির পরীক্ষা হয় ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে। ফল বেরোনোর পরে ভর্তির কাউন্সেলিংও শুরু হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যেই স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, এমসিআইয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপাতত স্নাতকোত্তর স্তরে কিছু আসনে ছাত্র ভর্তি করা যাচ্ছে না।
স্বাস্থ্য দফতরের খবর, ছাঁটাই হওয়া আসনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিনে আটটি, নীলরতনের রেডিওলজিতে একটি, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ইএনটি-তে দু’টি, অপথ্যালমোলজিতে দু’টি এবং প্যাথোলজিতে তিনটি, বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসে সার্জারিতে একটি। তৃণমূল আমলেই ওই সব আসন বাড়ানোর ব্যবস্থা হয়েছিল বলে জানান কর্তারা।
সাধারণত এমবিবিএসেই বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে আসন বাতিলের ফরমান আসে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মুচলেকায় সই করে পার পেয়ে যায় স্বাস্থ্য দফতর। এ বার স্নাতকোত্তরের আসনে এমসিআইয়ের এই কোপ সরকারের কাছে বড় ধাক্কা। সিদ্ধান্ত বদলানোর জন্য অনুরোধ-উপরোধ করা বা মুচলেকা দেওয়ার তৎপরতা তেমন দেখা যায়নি।
এমসিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিকাঠামোর সমস্যা থাকায় ওই সব আসন থেকে অনুমোদন প্রত্যাহারের কথা মাস চারেক আগেই রাজ্যকে জানিয়েছিল তারা। কিন্তু তার পরেও পরিকাঠামোর ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা হয়নি। তাদেরও কিছু করার নেই।
ওই কলেজগুলির সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসকদের বড় অংশের অভিযোগ, সরকারের তরফে অনুমোদন অটুট রাখার চেষ্টাও এ বার সে-ভাবে হয়নি। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে মেডিসিনের এক শিক্ষক-চিকিৎসক বলেন, ‘‘সরকারের তরফে যে-ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে আসন ছাঁটাই আটকানো এবং ওই সব আসনে পঠনপাঠনের অনুমোদন আদায়ের চেষ্টা করা উচিত ছিল, সেটা দেখা যাচ্ছে না। সরকার এ বার প্রায় নির্বিকার। এটাই আমাদের ভাবাচ্ছে।’’
গত পাঁচ বছরে এ রাজ্যে পরপর নতুন মেডিক্যাল কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। খুলেছে একের পর এক সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে সেখানে পঠনপাঠন এবং কাজকর্ম শিকেয়। এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির প্রক্রিয়া এ ভাবে ধাক্কা খাওয়ায় সরকারের ওই সব প্রকল্পে জোড়াতালির মাত্রা ক্রমশ বাড়তেই থাকবে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট শিবিরের বৃহত্তর অংশ।
কী বলছে সরকার?
রাজ্যের স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় এমসিআইয়ের বিরুদ্ধে খামখেয়ালিপনার অভিযোগ এনে সেটাকেই ঢাল করতে চাইছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এ ভাবে চলতে থাকলে রাজ্য থেকে তো পড়াশোনার পাটই চুকে যাবে! আমরা বারবার চিঠি লিখছি দিল্লিতে। তবু সমস্যা মিটছে না। এমসিআইয়ের খামখেয়ালিপনার কাছে আমরাও অসহায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy