প্রতিদিন কোথায় কত টাকার কোন ওষুধ বিক্রি হল, কত ওষুধ ভাঁড়ারে রইল, তার সমস্ত হিসেব রোজ তুলে দিতে হবে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দিষ্ট ই-পোর্টালে। সেই সঙ্গে সারা দিনের ওষুধ বিক্রির টাকার একটা অংশ ‘ট্রান্স্যাকশন ফি’ হিসেবে রোজ অনলাইনে জমা দিতে হবে কেন্দ্রের ঝুলিতে। ওষুধ বিক্রি সংক্রান্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এই নতুন খসড়া প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে তাঁদের ব্যবসাই বন্ধ করে দিতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন অধিকাংশ ওষুধ উৎপাদক, বণ্টনকারী, স্টকিস্ট, পাইকারি ও খুচরো বিক্রেতারা।
ওষুধের মান ও জোগানের উপরে নজর রাখার যুক্তি দিয়ে কেন্দ্র এই নতুন বিধি আনতে চাইলেও এর ফলে আখেরে সাধারণ
মানুষই নাস্তানাবুদ হবেন বলে অভিযোগ ওষুধ শিল্পমহলের। গত মাসের শেষেই এ রাজ্যের খুচরো ও পাইকারি ওষুধ বিক্রেতাদের একাধিক সংগঠন স্বাস্থ্য মন্ত্রকে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। তারা বলেছে, জিএসটি-র পরে এই নতুন বিধি এলে রাজ্যের অর্ধেক ওষুধের দোকানই বন্ধ হয়ে যাবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সরকারি ই-পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করে সমস্ত ওষুধ বেচা-কেনা করতে হবে। যে চিকিৎসক প্রেসক্রিপশন লিখেছেন, তাঁর রেজিস্ট্রেশন নম্বর পোস্ট করতে হবে। কেমিস্টের নামও দিতে হবে। বিল বা প্রেসক্রিপশন-পিছু ২০০ টাকা অথবা প্রতিটি বিল বা প্রেসক্রিপশনে যত ওষুধ বিক্রি হল সেই টাকার ১ শতাংশ— এই দুইয়ের মধ্যে যে অঙ্কটি বেশি হবে, তা ‘ট্রান্স্যাকশন ফি’ হিসেবে দিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। এবং দিনের শেষে ব্যবসায় ঝাঁপ ফেলার পরেই এই দু’টো কাজ সেরে ফেলতে হবে ব্যবসায়ীদের।
রাজ্যের ওষুধ শিল্পমহল কেন্দ্রকে জানিয়েছে, গোটা প্রস্তাবটাই ‘অবাস্তব’। ‘বেঙ্গল কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি শঙ্খ রায়চৌধুরীর কথায়, ‘‘গ্রামাঞ্চলে ওষুধ বিক্রেতারা কম্পিউটারের ব্যবস্থা করবেন কী করে? অনেক জায়গায় ইন্টারনেট সংযোগই নেই। তাঁরা কি প্রতি রাতে শহরে এসে ই-পোর্টালে বিক্রির বিস্তারিত তথ্য তুলতে বসবেন?’’ ফার্মাসিউটিক্যালস অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি অলোক দে-র বক্তব্য, ‘‘প্রতিযোগিতার বাজারে পাইকারি ওষুধ বিক্রেতাদের ১-২ শতাংশ ও খুচরো ব্যবসায়ীদের ৫-৬ শতাংশের বেশি লাভ থাকে না। এর থেকে ১ শতাংশ সরকারকে দেওয়া অসম্ভব। ছোট ব্যবসায়ীরা পথে বসবেন।’’ অনেকে এ-ও বলছেন, কেউ দু’টো অ্যান্টাসিড বা প্যারাসিটামল ট্যাবলেট কিনলে এ বার ১০ টাকার বিল করতে হবে। তার পর সেই বিল বাবদ ২০০ টাকার ‘ট্রান্স্যাকশন ফি’ গুনতে হবে। এ কি সম্ভব?
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তারা জানাচ্ছেন, বিক্রি কম দেখিয়ে কর ফাঁকি দেওয়া, ভুয়ো ওষুধ বিক্রি করা, ওষুধ স্টকে থাকলেও সরকার দাম বেঁধে দেওয়ায় ইচ্ছাকৃত ভাবে তা বিক্রি না-করা, বিনা প্রেসক্রিপশনে ওষুধ বিক্রির মতো অসংখ্য কারসাজি ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে অনেক ওষুধ বিক্রেতা খসড়া প্রস্তাবের বিরোধিতা করছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব রাকেশ কুমার বৎসের কথায়, ‘‘প্রত্যেককে লিখিত ভাবে মত জানানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সকলের মতামত পাওয়া গেলে তা খতিয়ে দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy