Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Krishna Bose

মায়ের ঘরোয়া গল্পেই ইতিহাসের ছায়া

গত অগস্টে প্রকাশিত ‘ঈশ্বরের সন্ধানে’তে যিনি বলছেন, ‘‘ধর্মে মতি থাকা বাঞ্ছনীয় কিন্তু মানুষ ধর্মান্ধ হলে তা ইতিহাসের সঙ্কট।’’

কৃষ্ণা বসুর স্মরণসভায় ‘নেতাজি মিউজিয়াম’ বইটি প্রকাশ করলেন সুগত ও সুমন্ত্র বসু। বুধবার নেতাজি ভবনে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

কৃষ্ণা বসুর স্মরণসভায় ‘নেতাজি মিউজিয়াম’ বইটি প্রকাশ করলেন সুগত ও সুমন্ত্র বসু। বুধবার নেতাজি ভবনে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২০ ১১:০০
Share: Save:

তাঁর জীবনের অভিযাত্রার শেষ ফ্রেমটিতে একাকার এ দেশের ইতিহাসের শৌর্যমণ্ডিত এক স্মরণীয় যাত্রাপথ। এলগিন রোডের বাড়িতে সুভাষচন্দ্র বসুর ঐতিহাসিক নিষ্ক্রমণের ‘ড্রাইভওয়েতে’ চেয়ার পেতে শীতের রোদে পিঠ দিয়ে বসে আছেন কৃষ্ণা বসু। তাঁর ৮৯ বছরের দীর্ঘ জীবনের শেষ আলোকচিত্র এটাই। বুধবার সন্ধ্যায় নেতাজি-ভবনে কৃষ্ণার স্মরণসভায় ওই ছবির এক প্রতীকী ব্যঞ্জনা উঠে এল। সুভাষচন্দ্র বসুর পরিবারের বধূ কৃষ্ণার জীবনও তো নিছক ব্যক্তির জীবন নয়। তাঁর স্মৃতিতর্পণ তাই একাধারে একটা যুগ বা ইতিহাসেরও উদ্‌যাপন হয়ে ওঠে।

আমৃত্যু পড়াশোনা-গবেষণা-লেখালেখি তথা নেতাজি রিসার্চ ব্যুরোর কাজে সজাগ-সচল প্রাক্তন সাংসদ, শিক্ষাবিদ কৃষ্ণা তাঁর শেষ বইয়ের ব্যক্তিগত অনুভবেও সমকালের ইতিহাসকে পড়তে চেয়েছেন। দাঙ্গা-দেশভাগ দেখা বৃদ্ধা দেশের বর্তমান রাজনীতি নিয়ে অস্থির ছিলেন। গত অগস্টে প্রকাশিত ‘ঈশ্বরের সন্ধানে’তে যিনি বলছেন, ‘‘ধর্মে মতি থাকা বাঞ্ছনীয় কিন্তু মানুষ ধর্মান্ধ হলে তা ইতিহাসের সঙ্কট।’’ সীমার মাঝে অসীম, মানুষের মাঝে ঈশ্বরকে খোঁজার কথা কৃষ্ণা তাঁর শেষ বইটিতে লিখলেও দৃঢ় স্বরে বলেন, দুর্জনের মধ্যে ঈশ্বর থাকলেও আমি তাঁকে দেখতে পাই না!

এই অনুষ্ঠানের গোড়ায় কৃষ্ণার দুই পুত্র সুগত-সুমন্ত্রকে লেখা গাঁধী পৌত্র গোপালকৃষ্ণ গাঁধীর চিঠিটিও ‘কৃষ্ণাদি’র মধ্যে ইতিহাসের এক বহতা ধারাকে তুলে ধরেছে। কৃষ্ণার স্নেহভাজন গোপাল লিখেছেন, এক অদ্ভুত সমাপতনের কথা। ২২ ফেব্রুয়ারি কৃষ্ণার প্রয়াণ তারিখটি গাঁধীপত্নী কস্তুরবা গাঁধী এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াকু গাঁধীবাদী কিশোরী থিল্লাইয়াডি ভাল্লিয়াম্মাইয়েরও প্রয়াণ তারিখ। সুগত বলছিলেন, ‘‘দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, নেতাজিদের পরম্পরা বয়ে মা তাঁর জীবন-রাজনীতিতে সবাইকে কাছে টানার ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের আদর্শই বহন করেছেন।’’ শরৎচন্দ্র বসুর পুত্রবধূ, শিশিরকুমার বসুর স্ত্রী, তিন কৃতী সন্তান সুগত, শর্মিলা, সুমন্ত্রদের মা কৃষ্ণার জীবনের নানা টুকরো এ দিন উঠে আসে গানে-স্মৃতিচারণে। কৃষ্ণার গীত বিদ্যাপতির ভজন বা প্রমিতা মল্লিকের পাঠে কৃষ্ণার ছোট ছেলে বুম্বার (সুমন্ত্র) আদলে দুষ্টু ছেলে বুম্বিটোর অ্যাডভেঞ্চারের সরস গল্প শোনাও সন্ধ্যার প্রাপ্তিই!

কৃষ্ণার নানা বই থেকে পড়া হল। দেখা গেল, কৃষ্ণা তথা বসু পরিবারের কিছু দুর্লভ আলোকচিত্র। আর কৃষ্ণার সঙ্গে-সঙ্গেই উঠে এলেন, তাঁর খুব কাছ থেকে দেখা সুভাষচন্দ্র-জায়া এমিলি শেঙ্কেল, আজাদ হিন্দ ফৌজ়ের বীর সেনানী সুভাষ-অনুচর বর্গ কিংবা লক্ষ্মী সেহগলদের গল্পও। সুগত-সুমন্ত্রদের গ্রন্থনায় উজ্জ্বল আদরের মায়ের ঘরোয়া গল্পও তখন ইতিহাসের গল্প হয়ে ওঠে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE