Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in West bengal

নিজেরাই টিকিট কেটে ভিন্ রাজ্যমুখী শ্রমিকেরা

সোমবার লকডাউন থাকায় এই শ্রমিকেরা প্রায় সকলেই বিমানবন্দরে পৌঁছে গিয়েছিলেন রবিবার রাতে।

অপেক্ষা: কাজের খোঁজে ভিন্‌ রাজ্যে যেতে কলকাতা বিমানবন্দরে শ্রমিকেরা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

অপেক্ষা: কাজের খোঁজে ভিন্‌ রাজ্যে যেতে কলকাতা বিমানবন্দরে শ্রমিকেরা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৪৫
Share: Save:

ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতেন তাঁরা। মার্চে লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পরে ফিরে আসেন পশ্চিমবঙ্গে। প্রথম দিকে সবই ছিল বন্ধ। সঞ্চিত টাকা খরচ করে সংসার চালাচ্ছিলেন। লকডাউন শিথিল হতে ফের কাজ খুঁজতে থাকেন। কিন্তু গত ছ’মাসে মাথা খুঁড়েও গ্রামে বা জেলায় কাজ জোটেনি। জমানো পুঁজিও ফুরিয়ে আসায় না-খেতে পেয়ে মারা যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল।

ফলে আবার সেই পঞ্জাব, বেঙ্গালুরু, কেরলে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গবাসী শ্রমিকেরা। সোমবার লকডাউনের দিন কলকাতা বিমানবন্দরে বসে সকলেই জানালেন, কাজের তেমন সুযোগ নেই এখানে। টানা ছ’মাস চেষ্টা করেও কাজ না-পেয়ে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।

স্ত্রী ও ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে বিমানবন্দরের টার্মিনালের বাইরে বসেছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপি থানার বেলপুকুরের বাসিন্দা রাজাউদ্দিন ফকির, বাবলু পিয়াদারা। সঙ্গে প্রতিবেশী মোসলেম শাহ ও সৈফুদ্দিন খান। সকলেই এক সময়ে আমদাবাদে প্লাইউড কারখানায় কাজ করতেন। এক-এক জনের আয় ছিল বছরে প্রায় ২০ হাজার টাকা। বছর দুয়েক আগে ভিটেতে ফিরে ডায়মন্ড হারবারে দর্জির কাজ শুরু করেন। স্বামী-স্ত্রী কাজ করলে পরিবারপিছু রোজগার প্রায় একই হচ্ছিল।

বাবলু বলেন, ‘‘আমদাবাদে থাকা-খাওয়ার অতিরিক্ত খরচ ছিল। তার চেয়ে বাড়িতে থেকে দর্জির কাজ ভালই চলছিল। কিন্তু লকডাউন শুরু হওয়ার পরে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অনেক খুঁজেও কাজ পাইনি। বাধ্য হয়ে আবার আমদাবাদে প্লাইউড কারখানায় ফিরছি।’’ আজ, মঙ্গলবার ভোরের উড়ান ধরবেন বলে রবিবার রাতেই বাবলুরা পৌঁছে গিয়েছেন বিমানবন্দরে। সোমবার লকডাউনে গাড়ি না-পাওয়ার আশঙ্কা ছিল।

মালদহের হবিবপুরের বাসিন্দা তিন যুবক প্রশান্ত মণ্ডল, রবি রায় এবং বিশ্বজিৎ রায়ও রবিবার রাতে পৌঁছে গিয়েছিলেন বিমানবন্দরে। আজ ভোরে তাঁদের বেঙ্গালুরু যাওয়ার কথা। বিশ্বজিতের কথায়, ‘‘চার বছর ধরে বেঙ্গালুরুতে প্রথমে জোগাড়ে ও পরে রাজমিস্ত্রির কাজ করছি। আমাদের জেলায় জোগাড়ের কাজ করলে দিনে ২৫০ টাকা দেয়। রাজমিস্ত্রির কাজ করলে মেলে দৈনিক ৩৫০ টাকা। কলকাতায় কাজ কোথায়?’’

তাঁর দাবি, বেঙ্গালুরুতে জোগাড়ের কাজ করলে দিনে ৪২০ টাকা এবং রাজমিস্ত্রির কাজ করলে রোজ ৮০০ টাকা পাওয়া যায়। রবি বলেন, ‘‘লকডাউনের পরে জেলায় ফিরে কাজের প্রচুর চেষ্টা করেছি। কোথাও কিছু পাইনি। বাধ্য হয়ে নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে বিমানের টিকিট কেটে বেঙ্গালুরু যাচ্ছি। আবার সেখানে রাজমিস্ত্রি বা জোগাড়ের কাজ করব। ফোনে কথা হয়েছে।’’

মুর্শিদাবাদের সোলেমান শেখ, দুখু শেখরাও গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে যাচ্ছেন চেন্নাই। দীর্ঘ দু’মাস বন্ধ থাকার পরে কলকাতা-চেন্নাই সরাসরি উড়ান শুরু হচ্ছে আজ, মঙ্গলবার। দুখু বলেন, ‘‘না-খেতে পেয়ে মরতে বসেছিলাম। চেন্নাইয়ে পুরোদস্তুর নির্মাণকাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। ফোন করায় চলে আসতে বলল।’’ পঞ্জাবের পথে মুর্শিদাবাদেরই বসির বিশ্বাসের দাবি, এ রাজ্যে যদি বা কাজ পান, মজুরি অনেক কম।

সোমবার লকডাউন থাকায় এই শ্রমিকেরা প্রায় সকলেই বিমানবন্দরে পৌঁছে গিয়েছিলেন রবিবার রাতে। টার্মিনালের বাইরে যাতে রাত কাটাতে না-হয়, সে জন্য দোতলায় ৩সি গেটের ভিতরের লাউঞ্জে ঢুকিয়ে নেওয়া হয় তাঁদের। সকালে আবার বাইরে থাকতে বলা হয়। বিমানবন্দরের অধিকর্তা কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অনেকেই মঙ্গলবার বিকেলের উড়ান ধরবেন। অনেকের সঙ্গে বাচ্চা আছে। সোমবার রাতে ওঁদের আবার বিমানবন্দরের ভিতরে থাকতে দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE