Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

খাদ্য, নির্জনতা কমলেও ফিরছে শীতের পাখিরা

প্রশাসনিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বক্রেশ্বরের নীল নির্জন, তিলপাড়া জলাধারের মতো জেলার বিভিন্ন প্রান্তে গ্রামগঞ্জের জলাশয়গুলিতেও এক সময় সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, তিব্বত থেকে উড়ে আসত পরিযায়ী পাখির দল। পাশাপাশি আসত দেশীয় পাখিও।

আকাশের-গায়ে: আসছে পরিযায়ীর দল। নিজস্ব চিত্র

আকাশের-গায়ে: আসছে পরিযায়ীর দল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৮ ০২:২৫
Share: Save:

আগের মতো সেই বিচরণক্ষেত্র নেই। নেই অফুরন্ত খাবার। তবুও মুখ ফিরিয়ে নেয়নি শীতের সেই অতিথিরা। জেলার বিভিন্ন জলাশয়ে ভিড় জমাতে শুরু করেছে তারা। তবে তাদের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে কমে যাচ্ছে বলে পক্ষীপ্রেমীদের দাবি।

তাঁদের বক্তব্য, বছর কুড়ি আগেও শীতের মরসুমে গ্রামের খাল-বিলে পরিযায়ী পাখীর মেলা বসত। সেই সংখ্যা এখন হাতেগোনা। তাতে হতাশ এলাকার প্রবীণ বাসিন্দারা।

প্রশাসনিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বক্রেশ্বরের নীল নির্জন, তিলপাড়া জলাধারের মতো জেলার বিভিন্ন প্রান্তে গ্রামগঞ্জের জলাশয়গুলিতেও এক সময় সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, তিব্বত থেকে উড়ে আসত পরিযায়ী পাখির দল। পাশাপাশি আসত দেশীয় পাখিও। ওই সব জলাশয়গুলির মধ্যে ছিল লাভপুরের লাঙলহাটা, জামনা, ময়ূরেশ্বরের কামারহাটি বিল। ময়ূরেশ্বর থানা এলাকার ঢেকার রাজা রামজীবনের খনন করা রামসায়র, রানিভবানী, বুড়োদীঘি, চেঁচূড়েদীঘি, সরাগ সহ বিভিন্ন জলাশয়ে দেখা মিলত ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখির।

স্থানীয় সূত্রে খবর, এ বারও ওই সব জলাশয়ে পাখিরা আসতে শুরু করেছে । কিন্তু সংখ্যায় তারা অনেক কম। আগের মতো রকমারি প্রজাতির পাখিও দেখা যায় না।

নানুরের আলিগ্রামের বানু মেটে, কীর্ণাহারের যাটোর্ধ্ব শ্যামল সাহা জানান, এক সময় শীতের মরসুমে ঝাকেঁ ঝাঁকে গ্রামের বড় বড় জলাশয়ে উড়ে আসত পরিযায়ী পাখির দল। তাদের ডাকে ভরে থাকত গ্রাম। অন্য গ্রাম থেকেও লোকজন আসত পাখি দেখতে।

পরিযায়ী পাখিদের কথা বলতেই ‘নস্ট্যালজিক’ হয়ে পড়েন ঢেকা গ্রামের জগন্নাথ বাগদি, রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল, কার্তিক মণ্ডল। তাঁরা জানান, ছোটবেলায় জলাশয়ের ধারে বসে ওই পাখীদের দেখতে দেখতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যেত। শীতের শেষে পাখিদের ফেরার সময় মনখারাপ হতো সকলেরই। ফের পরের বছর তাদের ফেরার অপেক্ষায় দিন কাটত ।

পাখিদের আনাগোনা কেন কমে গেল? স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এক সময় ওই সব জলাশয় ঘিরে থাকত প্রচুর গাছ। এখন অনেকটাই কমেছে সে সব গাছ। জলাশয়েও আগের মতো দেখা মেলে না পদ্ম, শাপলা, শালুকের মতো জলজ উদ্ভিদ। ব্যাপক হারে মাছচাষের ফলে জলাশয় থেকে হারিয়ে গিয়েছে সে সব জলজ উদ্ভিদও। মৎস্য ও কৃষিকাজের জন্য জলাশয়গুলিতে প্রায় সব সময় মানুষের ভিড় থাকে। তাতে হারিয়েছে নির্জনতা। সে সবের খোঁজে তাই ঠিকানা বদলাচ্ছে পরিযায়ী পাখিরা।

ওয়াইল্ড লাইফের জেলা ওয়ার্ডেন উর্মিলা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নির্জনতা তো একটা বিষয় বটেই, পাশাপাশি খাদ্যাভাব ও চোরাশিকারিদের উৎপাতও পরিযায়ী পাখিদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার অন্যতম কারণ।’’

তাঁর মতে, পাখিদের মধ্যেও আমিষ ও নিরামিষভোজী প্রজাতি রয়েছে। আমিষভোজীরা ছোট ছোট মাছ, সাপ, ব্যাঙ, গুগলি খায়। কৃষি ও মাছচাষের জন্যে ব্যাপক হারে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পরিযায়ী পাখিদের ওই সব খাবার উধাও হয়েছে। জলজ উদ্ভিদ নষ্ট হওয়ায় নিরমিষভোজী পাখিদেরও খাদ্যসঙ্কট দেখা দিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Migratory Bird Food Migration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE