Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
গো ভ্রূণ প্রতিস্থাপন কেন্দ্রের উদ্বোধন

দুধ উৎপাদনে পিছিয়ে রাজ্য, মানলেন মন্ত্রী

গত চার বছরে ডিম- মাংস উত্‌পাদন রাজ্যে যে হারে বেড়েছে, দুধ উত্‌পাদন সে হারে বাড়েনি। ফলে, দুধ উত্‌পাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণও হতে পারেনি রাজ্য। বুধবার শালবনিতে এসে প্রকারান্তরে এ কথা মেনে নিলেন প্রাণীসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী।— নিজস্ব চিত্র।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী।— নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শালবনি শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৩৮
Share: Save:

গত চার বছরে ডিম- মাংস উত্‌পাদন রাজ্যে যে হারে বেড়েছে, দুধ উত্‌পাদন সে হারে বাড়েনি। ফলে, দুধ উত্‌পাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণও হতে পারেনি রাজ্য। বুধবার শালবনিতে এসে প্রকারান্তরে এ কথা মেনে নিলেন প্রাণীসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তাঁর কথায়, “৩৪ বছরের ভেঙে পড়া পরিকাঠামো ঠিক করতে হচ্ছে। একটু সময় লাগবেই।” স্বপনবাবু বলেন, “দুধ উত্‌পাদনের ঘাটতি পূরণে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাণীসম্পদ বিকাশ বিভাগের দীর্ঘমেয়াদি উদ্দেশ্যই হল দুধ, ডিম ও মাংসের উত্‌পাদন বৃদ্ধি। এই উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরণের কর্মকাণ্ড সমস্ত বছর ধরে সংগঠিত করা হচ্ছে।”

প্রাণীসম্পদ বিভাগের দাবি, ডিম উত্‌পাদন ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মাংস উত্‌পাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ২০ শতাংশ। দুধ উত্‌পাদন ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বুধবার শালবনিতে পশুপালন খামারে ভ্রূণ প্রতিস্থাপন পরীক্ষাগারের উদ্বোধন হয়। উদ্বোধন করেন প্রাণীসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্বপনবাবু। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সূর্য অট্ট, শালবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নেপাল সিংহ প্রমুখ।

প্রাণীসম্পদ বিভাগ সূত্রে খবর, এই রাজ্য দুধ উত্‌পাদনে দ্বাদশ স্থানে রয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্বপনবাবু বলেন, “গ্রামীণ মানুষের জীবন জীবিকা ও অর্থনৈতিক মান উন্নয়নের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার প্রাণী সম্পদ। প্রথাগত কৃষির পাশাপাশি উন্নত প্রথায় প্রাণী পালন আজও গ্রামীণ ও শহুরে বেকার যুবক-যুবতীদের স্ব-রোজগারের হাতিয়ার। পশ্চিমবঙ্গে মা-মাটি-মানুষের সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাণীসম্পদ বিকাশ বিভাগের প্রতি যথেষ্ঠ গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

তিনি বলেন, “বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন ও ব্যবহার, তার পাশাপাশি পরিকাঠামো উন্নয়ন, বিপণন ব্যবস্থার আমূল সংস্কারে এই সরকার বদ্ধপরিকর।”স্বপনবাবুর বক্তব্য, “দীর্ঘদিন ধরে শালবনিতে গো-বীজ তৈরির পরীক্ষাগার রয়েছে, পাশাপাশি এখানে বুল মাদার ফার্মও রয়েছে। এ বার এখানে ভ্রূণ প্রতিস্থাপন কেন্দ্রের উদ্বোধন হল।’’

মন্ত্রী জানান, গো- বীজ উত্‌পাদন বৃদ্ধি করার জন্য চাই প্রচুর উন্নত মানের ষাঁড়। এই উন্নত মানের ষাঁঁড়ের দ্রুত জোগানের অন্যতম প্রযুক্তি হল ভ্রূণ প্রতিস্থাপন। এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য ইতিমধ্যে হরিণঘাটা ফার্মে একটি পরীক্ষাগারে সাফল্যের সঙ্গে কাজ চলছে। যা দেশের অন্যতম পরীক্ষাগার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। দ্বিতীয়টি শালবনি ফার্মে হল।

ভ্রূণ প্রতিস্থাপন পদ্ধতির উপকারিতা কি?

স্বপনবাবু বলেন, “একটি অধিক দুধ উত্‌পাদক গাভীর সারা জীবনে স্বাভাবিক ভাবে ৬- ৭টি বাছুর হলে, এই পদ্ধতিটির মাধ্যমে ২০টিরও বেশি অধিক দুগ্ধ উত্‌পাদন সম্পন্ন বাছুর তৈরি করা যেতে পারে অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যে। এই পদ্ধতি প্রাণী পালকের বাড়িতে রক্ষিত কম দুধের গরুগুলোকে ধাই মা হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।” মন্ত্রীর বক্তব্য, “এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা দুধ উত্‌পাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারব আশা রাখছি।” প্রাণীসম্পদ বিভাগ সূত্রে খবর, চল্লিশের দশকে বিদেশি উন্নতমানের ষাঁড়ের মাধ্যমে গবাদি পশুর প্রজাতিগত উন্নতির কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তরল গো- বীজ ব্যবহার করে সঙ্করায়ণের কাজ শুরু হয়। আশির দশকে রাজ্যে গো- বীজের ব্যবহার শুরু হয়।

এখন গো- বীজের মাধ্যমেই সঙ্করায়ণ বা প্রাণীর প্রজাতিগত উন্নয়নের কাজ রাজ্যে চলছে। মন্ত্রীর দাবি, ভ্রূণ প্রতিস্থাপন কেন্দ্র স্থাপনের মধ্য দিয়ে প্রাণী উন্নয়নের নতুন দিক উন্মোচিত হল। ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে চাষিদের বাড়িতে থাকা নিম্নমানের প্রাণীকে ব্যবহার করেই এই কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছনো যাবে। প্রাণীসম্পদ বিভাগ সূত্রে খবর, চাহিদার তুলনায় রাজ্যে দুধ, ডিম, মাংসের উত্‌পাদন যথাক্রমে ৮১ শতাংশ, ৫১ শতাংশ এবং ৬৭ শতাংশ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রাণীসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী বলেন, “প্রাণীসম্পদ বিকাশ বিভাগ শুধু গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশই নয়, খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা, মহিলাদের ক্ষমতায়ন এবং বেকার যুবক- যুবতীদের স্বনিযুক্তির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বিভিন্ন জনমুখী কর্মসূচি রূপায়ণ করে চলেছে। আমাদের সরকার দুধের উত্‌পাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যেমন, কম উত্‌পাদনক্ষম দেশি প্রজাতির গরু- মহিষের সঙ্করায়ণের মাধ্যমে মানোন্নয়নের লক্ষ্যে চার বছরে ৬১.২০ লক্ষ গরু- মহিষকে কৃত্রিম প্রজননের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং ২৫.১০ লক্ষ উন্নত জাতের বকনা বাছুর তৈরি হয়েছে। ২০২১- ’২২ সালের মধ্যে ৬০ শতাংশ প্রজননক্ষম গরু- মহিষকে কৃত্রিম প্রজননের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Milk production minister cow milk
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE