Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বন্যায় ক্ষতি নিয়ে মন্ত্রীর মন্তব্যে ধন্দ

সোমবার বিধানসভায় এই প্রশ্নের জবাবে রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ খান যে-তথ্য দিয়েছেন, তাতেই সংশয় তৈরি হয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। জাভেদ জানান, ২০ জুনের পর থেকে অতিবর্ষণের ফলে যে-বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া এবং পূর্ব বর্ধমান— এই পাঁচ জেলার ১৮ লক্ষের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত।

রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ। ছবি: সংগৃহীত

রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ। ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৭ ০৪:৪৩
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গে এ বারের বন্যাকে ‘জাতীয় বিপর্যয়’ হিসেবে ঘোষণা করার দাবি উঠেছে। কিন্তু ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ নিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী এবং প্রশাসনের দু’রকম খতিয়ানে রীতিমতো সংশয়-বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যের পাঁচ জেলায় এ বারের বন্যা পরিস্থিতির কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ঠিক কত?

সোমবার বিধানসভায় এই প্রশ্নের জবাবে রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ খান যে-তথ্য দিয়েছেন, তাতেই সংশয় তৈরি হয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। জাভেদ জানান, ২০ জুনের পর থেকে অতিবর্ষণের ফলে যে-বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া এবং পূর্ব বর্ধমান— এই পাঁচ জেলার ১৮ লক্ষের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। মৃতের সংখ্যা ২৯। দু’লক্ষ ২৭ হাজার ৯৪৪ হেক্টর কৃষিজমি বন্যার জলে ডুবে গিয়েছে। গবাদি পশু মরেছে একটি। সব মিলিয়ে টাকার অঙ্কে ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫৫ কোটি।

আরও পড়ুন: ঢাল জিএসটি, মোদীকে আক্রমণ বিধানসভায়

মন্ত্রীর দেওয়া এই তথ্য নবান্নে পৌঁছতেই শোরগোল পড়ে যায়। প্রশাসনের এক কর্তা জানান, এ দিনই কয়েক জন জেলাশাসক ক্ষয়ক্ষতির হিসেব পেশ করেছেন মুখ্যসচিবের কাছে। অন্য কয়েকটি জেলার রিপোর্ট এখনও আসেনি। তাই এখনই সার্বিক ও ঠিক তথ্য পাওয়া যাবে না। কিন্তু ক্ষতির পরিমাণ যে ৪০০-৫০০ কোটি টাকার কম হবে না, সেটা এখনই বলে দেওয়া যায়।

বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী তা হলে ওই তথ্য পেলেন কোথায়?

বিধানসভার বাইরে এই প্রশ্নের জবাব অপ্রস্তুত জাভেদ বলেন, ‘‘আসলে ওটা একেবারেই প্রাথমিক হিসেব।’’ তাঁর বক্তব্য শুনে বিরোধী বিধায়কদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘প্রাথমিক হিসেব এখন বিধানসভায় বলার অর্থ কী?’’ মন্ত্রী এই বিষয়ে সভাকে বিভ্রান্ত করেছেন বলেও অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা।

বিধায়কদের অভিযোগ আছে আরও। হাওড়ার আমতার কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র এ দিন বিধানসভায় অভিযোগ করেন, তাঁর বিধানসভা এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে পার্শ্ববর্তী অন্য কেন্দ্রের বিধায়কেরা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তাঁকে (অসিতবাবুকে) ডাকা হয়নি! ত্রাণসামগ্রী বিলি নিয়ে অভিযোগ তোলেন ওই বিধায়ক। তাঁর অভিযোগ শুনে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম মন্তব্য করেন, ওই সময় অসিতবাবুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তিনি নাকি তখন ঘুমোচ্ছিলেন!

বিরোধীরা একযোগে উঠে দাঁড়িয়ে ফিরহাদের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানান। বিধানসভার কার্যবিবরণী থেকে ‘ঘুমোচ্ছিলেন’ কথাটা বাদ দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা। এর মধ্যেই মন্ত্রী জানান, মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ থেকে ফিরেই হাওড়ায় যান। মানুষের যাতে কোনও সমস্যা না-হয়, সে-দিকে নজর রাখার নির্দেশ দেন। এর পরেও যাঁরা ত্রাণসামগ্রী বিলি নিয়ে অভিযোগ করছেন, তাঁরা অসত্য বলছেন। বন্যা নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE