Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

পড়তে চাই, ফোনে আর্তি কিশোরীর

ফোন পেয়ে শুক্রবার ব্লক সমাজকল্যাণ আধিকারিক সৌম্য দাস ও চাইল্ড লাইনের দুই প্রতিনিধি মেয়েটিকে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার খাজুরডিহির বাপেরবাড়ি থেকে উদ্ধার করেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৭ ১৩:৩৩
Share: Save:

বা়ড়ির লোক মোবাইল ছুঁতে দিচ্ছিল না। লুকিয়ে পড়শির ফোন থেকে তিন-চার দিন ধরে চাইল্ড লাইনে যোগাযোগের চেষ্টা করছিল নাবালিকা বধূ। শুক্রবার যোগাযোগ হতেই তার আর্তি, ‘‘আমায় বাঁচান। শ্বশুরবাড়ি মারধর করে! বাপেরবাড়ি বোঝে না! আমি এখনই সংসার করতে চাই না। আগে পড়তে চাই।’’

ফোন পেয়ে শুক্রবার ব্লক সমাজকল্যাণ আধিকারিক সৌম্য দাস ও চাইল্ড লাইনের দুই প্রতিনিধি মেয়েটিকে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার খাজুরডিহির বাপেরবাড়ি থেকে উদ্ধার করেন। সে হোমে থাকবে। রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখন অনেক মেয়েই পড়তে চেয়ে বাধা পেলে ভেঙে পড়ে না। বাড়ি ছাড়তেও দ্বিধা করে না। এই মানসিকতার প্রশংসা না করে উপায় নেই।’’ তিনি জানান, নাবালিকার বিয়ে বেআইনি। মেয়েটি চাইলে স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা হতে পারে। তরুণীর পড়াশোনা, নিরাপত্তার দায়িত্ব জেলা সমাজকল্যাণ দফতর ও চাইল্ড লাইনের।

সংখ্যালঘু পরিবারের বছর সতেরোর মেয়েটি এ বার মাধ্যমিক দিয়েছে। পূর্বস্থলীর পাঠান গ্রামে তার বিয়ে হয়েছে মাস দেড়েক। তরুণীর অভিযোগ, শ্বশুরবাড়িতে নানা ছুতোয় তাকে মারধর করতেন স্বামী, শাশুড়ি। বিয়ের দশ দিনের মাথায় বাপেরবাড়ি চলে আসে সে। কিন্তু ‘সংসারে এমন হয়’ বুঝিয়ে বাপেরবাড়ির লোকেরা তাঁকে শ্বশুরবাড়িতে ফেরত পাঠান।

২৭ মে মাধ্যমিকের ফল বেরোয়। মেয়েটির অভিজ্ঞতা, ‘‘ওই দিন স্কুল থেকে বেরিয়ে মার্কশিট ফটোকপি করে বাড়ি ফিরতে দেরি হওয়ায় রাস্তাতেই মারধর করে স্বামী। কষ্ট করে পাশ করার আনন্দ সেখানেই মাটি।’’ তবে সে দিনই সে ঠিক করে ফেলে, ‘অনেক হয়েছে। আর নয়’। এক রাত বান্ধবীর বাড়িতে কাটিয়ে ফের বাপেরবাড়িতে ফেরে। ছাত্রীটির কথায়, ‘‘স্কুলে ১০৯৮ নম্বরটি (চাইল্ড লাইন) পেয়েছিলাম। জানতাম, পড়াশোনা করে বাঁচতে হলে এখানেই ফোন করতে হবে।’’

কাটোয়ার কাশেশ্বরী বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী ওই মেয়েটি। এ দিন সে জানায়, ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের সুবাদে খরচ চললেও নিম্নবিত্ত বাপের বাড়ি দীর্ঘদিন ধরেই পড়াশোনা বন্ধ করতে চাইছিল। মাস দেড়েক আগে দিদিমার অসুস্থতার ভুয়ো খবর দিয়ে তাকে পাঠানো হয় পূর্বস্থলীর মামবাড়িতে। সেখানে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয় দূর সম্পর্কের আত্মীয় আব্দুল আলিম শেখের সঙ্গে।

মেয়েকে জোর করে শ্বশুরবাড়িতে ফেরত পাঠাতে চাইছিলেন কেন? নাবালিকার মা তড়পে ওঠেন, ‘‘ও যখন শ্বশুরবাড়ির সুখের ভাত খেতে পারেনি, তখন যা খুশি করুক।’’ মেয়েটির ‘স্বামী’র দাবি, ‘‘রোজ তো নয়, এক দিন চড় মেরেছিলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE