Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মিড-ডে মিলের করুণ ছবি রিপোর্টে

রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, বহু স্কুলে রান্নার আগে ও পরে রান্নাঘর পরিষ্কার করা হয় না। দেওয়া থাকে না সাপ্তাহিক খাবারের তালিকা।

সুপ্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৮ ০৩:০৭
Share: Save:

রাজ্যের প্রতিটি সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুলে প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের জন্য চালু রয়েছে মিড-ডে মিল প্রকল্প। কিন্তু সেই প্রকল্পে কখনও দুর্নীতি, কখনও স্কুলের রান্নাঘরের অপরিচ্ছন্নতা, কখনও আবার নিম্ন মানের খাবার দেওয়া— একের পর এক অভিযোগে জেরবার স্কুলশিক্ষা দফতর। অবস্থা প্রতিকারে কড়া হাতে হাল ধরতে উদ্যোগী হয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু প্রকল্পের হাল যে সর্বত্র ফেরেনি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কিছু স্কুলে অভিযান চালিয়ে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি ওই জেলায় ‘মহাপরিদর্শন অভিযান’ চালায় জেলাশাসকের দফতর। স্কুলশিক্ষা দফতরই মানছে, ওই সব স্কুলে মিড-ডে মিলের যে ছবি উঠে এসেছে তা মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়।

রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, বহু স্কুলে রান্নার আগে ও পরে রান্নাঘর পরিষ্কার করা হয় না। দেওয়া থাকে না সাপ্তাহিক খাবারের তালিকা। প্রতি দিন রান্নার খরচ কত, সেই পরিসংখ্যানও দেওয়া থাকে না। এমনকী, যথাযথ মানের খাবার দেওয়া হয় না বলেও রিপোর্টে বলা হয়েছে। বহু স্কুলে পৃথক
খাওয়ার ঘর নেই।

২০০৯ সালের শিক্ষার অধিকার আইন অনুসারে মিড-ডে মিলে সপ্তাহের কোন দিন কী খাবার দিতে হবে, সেই তালিকা দেওয়া আছে। তালিকায় রয়েছে ভাত, ডাল, তরকারি, মাংস, ডিম ও খিচুড়ি। কিন্তু অভিযোগ উঠছে, বহু জায়গায় সেই তালিকা অনুযায়ী খাবার দেওয়া হয় না। মাংস-ডিম তো দূর, ডাল-আলুও জোটে না পড়ুয়াদের। বিধানসভার এক অধিবেশনে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, মিড-ডে মিলে নজরদারির জন্য একটি দল তৈরি করা হবে। তাঁরাই সব জায়গায় নজরদারি চালাবেন। সেই প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে বিকাশ ভবন।

স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, যে সমস্ত ক্ষেত্রে দুর্নীতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, সেই জায়গাগুলিতে নজরদারি বাড়াতে সরকার উদ্যোগী হয়েছিল। স্কুলে পৃথক খাওয়ার ঘর এবং টেবিল তৈরির জন্য টাকাও দিয়েছিল তারা। মিড-ডে মিলে প্রতি দিনের হিসেব স্কুলশিক্ষা দফতরের ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার নীতি চালু হয়েছে। কিন্তু সর্বত্র যে এই নিয়ম মানা হচ্ছে না, তা মানছেন দফতরের কর্তারাই। সারা রাজ্য জুড়েই মিড-ডে মিলের এমন শোচনীয় অবস্থা।

দিন কয়েক আগে দমদমের পূর্ব সিঁথির একটি স্কুলে পড়ুয়ারা অভিযোগ করে, সেখানে রান্নায় অপরিচ্ছন্ন জলাধার থেকে জল ব্যবহার করা হত। কিন্তু নিয়ম মতে পরিস্রুত জলে রান্না করার নির্দেশ রয়েছে। হাসনাবাদের পূর্ব খেজুরবেড়িয়া এম সি ইনস্টিটিউশনেও মিড-ডে মিল নিয়ে দুর্নীতির
অভিযোগ উঠেছিল।

ক্ষুব্ধ রাজ্য সরকারের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বাজেটে মিড-ডে মিল খাতে বরাদ্দ বাড়েনি। উপরন্তু পড়ুয়া পিছু যে টাকা বরাদ্দ, তা দিয়ে ভাল মানের খাবার দেওয়া কষ্টকর। কিন্তু তাই বলে খাবারের মানের সঙ্গে কখনওই আপস করা হবে না বলে জানান এক কর্তা।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, মিড-ডে মিল নিয়ে দুর্নীতি ঠেকাতে পদক্ষেপ করা হয়। সাসপেন্ডও করা হয়েছে কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে। ‘‘তবুও এই পরিষেবা নিয়ে একের পর এক অভিযোগ উঠছে। সব থেকে বড় কথা, টাকা ও খাবারের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা প্রায় কোথাও মানা হচ্ছে না’’— বলেন তিনি। শিক্ষা মহলের অভিযোগ, শক্ত হাতে হাল না ধরলে পড়ুয়াদের খাবার নিয়ে এমন অভিযোগ উঠতেই থাকবে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘ত্রুটি ধরার জন্য আমরা অভিযান চালিয়েছিলাম। কিছু ক্ষেত্রে ত্রুটি ধরা পড়েছে। দ্রুত তা সংশোধন করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Miserable picture Midday Meal School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE