Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

টাকা ফেরালেন মিঠুন, নারাজ শুভা-শতাব্দীরা

কথা দিয়েছিলেন, সারদা গোষ্ঠীর কাছ থেকে নেওয়া টাকার পুরোটা ফিরিয়ে দেবেন। সে খবর আনন্দবাজারে প্রকাশিতও হয়েছিল। প্রতিশ্রুতি মতো মঙ্গলবার ইডি-কে ১ কোটি ১৯ লক্ষ টাকা ফেরত দিলেন অভিনেতা তথা তৃণমূলের রাজ্যসভা সদস্য মিঠুন চক্রবর্তী। এ দিন ব্যাঙ্ক ড্রাফ্ট মারফত ইডি’কে টাকা ফেরত পাঠিয়েছেন মিঠুন। সঙ্গে পাঠিয়েছেন একটি চিঠিও।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৫ ০৩:৩৪
Share: Save:

কথা দিয়েছিলেন, সারদা গোষ্ঠীর কাছ থেকে নেওয়া টাকার পুরোটা ফিরিয়ে দেবেন। সে খবর আনন্দবাজারে প্রকাশিতও হয়েছিল। প্রতিশ্রুতি মতো মঙ্গলবার ইডি-কে ১ কোটি ১৯ লক্ষ টাকা ফেরত দিলেন অভিনেতা তথা তৃণমূলের রাজ্যসভা সদস্য মিঠুন চক্রবর্তী।

এ দিন ব্যাঙ্ক ড্রাফ্‌ট মারফত ইডি’কে টাকা ফেরত পাঠিয়েছেন মিঠুন। সঙ্গে পাঠিয়েছেন একটি চিঠিও। যাতে লিখেছেন, ‘গরিবের কাছ থেকে আত্মসাৎ করা টাকা আমার পরিবারের জন্য খরচ করতে পারব না।’ ঘটনাচক্রে এ দিনই ছিল মিঠুন চক্রবর্তীর জন্মদিন।

সন্দেহ নেই, সারদার টাকা ফেরত দিয়ে মিঠুন নিজের ‘গরিবের মসিহা’ ভাবমূর্তিতে লাগা কালি মুছে ফেলতে চেয়েছেন। লগ্নিসংস্থার আর্থিক কেলেঙ্কারিতে কোনও না কোনও ভাবে নাম জড়িয়েছে তাঁর মতো আর যে সব ‘সেলিব্রিটি’র, তাঁরাও কি এ বার একই পথে হাঁটবেন? এ দিন ওঁদের অনেককেই প্রশ্নটা করা হয়েছিল। অধিকাংশই জানিয়েছেন, এর পক্ষপাতী তাঁরা নন।

সারদা-কেলেঙ্কারির তদন্তে বেশ কিছু শিল্পী-অভিনেতার নাম উঠে এসেছে। কেউ সারদার চ্যানেলে চাকরি করে টাকা নিয়েছেন, কেউ বা পরামর্শ দিয়ে। কেউ চালু না-হওয়া চ্যানেল সারদাকে বেচেছেন বাজারদরের বেশি টাকায়, কেউ আবার মিঠুনের মতো চ্যানেলে অনুষ্ঠান করে টাকা নিয়েছেন। পাশাপাশি প্রভাবশালী কিছু নেতা-মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও সারদা থেকে নানা ভাবে টাকা বা সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগেরই ভিত্তিতে সারদার মিডিয়া-প্রধান তথা তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষ এখন জেলে। মন্ত্রী মদন মিত্রও তা-ই। তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ সৃঞ্জয় বসু ও প্রাক্তন আইপিএস রজত মজুমদার গ্রেফতার হয়ে জামিন পেয়েছেন। সারদার পাশাপাশি সিবিআই-ইডি’র তদন্তের আওতায় পড়েছে রোজ ভ্যালি সংস্থাও, যেখান থেকে নানা সময়ে নানা ভাবে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কয়েক জন ‘সেলিব্রিটি’ ও প্রভাবশালী বিরুদ্ধে। ওঁরা টাকা ফেরত দেবেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

অনেকে এই পথে হাঁটতে রাজি না-হলেও ব্যতিক্রম অর্পিতা ঘোষ। তৃণমূলের এই সাংসদ তথা নাট্যকর্মী মিঠুনের মতোই ‘বিবেকের ডাক’ শুনে ভাবমূর্তি ফেরাতে আগ্রহী। অর্পিতা একদা চালু না-হওয়া সারদা-চ্যানেলে চাকরি করেছেন। এবং জানাচ্ছেন, ‘‘আমি চার মাস বেতন পেয়েছিলাম। সেই টাকা হাতে নিয়ে বসে আছি। ইডি-র অনুমতি পেলে ফেরত দেব।’’ মিঠুনের মতো অর্পিতারও বক্তব্য, তাঁরা আদতে অন্য জগতের লোক, পাকে-চক্রে সারদার মিডিয়ায় এসে পড়েছিলেন। ‘‘যখন জানতে পারলাম যে, গরিবের থেকে আত্মসাৎ করা টাকা নিয়ে বসে আছি, গ্লানি বেড়েছে।’’— বলছেন তিনি।

ইডি’র খবর: অভিনেত্রী শতাব্দী রায়ও এক সময়ে সারদার কিছু টাকা নিয়েছিলেন, যদিও অঙ্কটা সামান্য। তাঁর কিন্তু পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘আমি কয়েকটা অনুষ্ঠান করেছি। তার জন্য পাওয়া টাকা ফেরত দেব কেন?’’ চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন একটি চ্যানেল সারদা-কর্ণধারকে বেচে টাকা পেয়েছেন। তা ফেরত দেবেন?

এ দিন ফোনে শুভাপ্রসন্ন বলেন, ‘‘আমি তো চ্যানেল বিক্রির বিনিময়ে টাকা পেয়েছি। তা-ও পুরোটা পাইনি। সমস্ত কাগজপত্র তদন্তকারীদের জমা দিয়েছি। টাকা ফেরতের প্রশ্ন আসছে কোথায়?’’ রোজ ভ্যালি-র সঙ্গে তৃণমূলের যে সাংসদ-অভিনেতার নাম জড়িয়েছে, সেই তাপস পালের আবার দাবি, ‘‘আমার সঙ্গে রোজ ভ্যালির কোনও সম্পর্ক ছিল না। তাই টাকা ফেরতের প্রশ্ন ওঠে না।’’

ইডি-সূত্রের খবর, অপর্ণা সেন-ও সারদা থেকে টাকা নিয়েছেন। তিনি সারদার সংস্থায় প্রায় ২১ মাস চাকরি করেছিলেন, তখন মাসে কয়েক লক্ষ টাকা করে বেতন পেয়েছেন। টাকা ফেরতের ব্যাপারে অপর্ণা কী ভাবছেন, তা অবশ্য জানা যায়নি। এ দিন তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি, এসএমএস করে জবাব মেলেনি।

তবে মিঠুনের পদক্ষেপ প্রসঙ্গে বাক্যবাণ হেনেছেন কুণাল ঘোষ। ইডি-সূত্রের খবর: তদন্তকারীদের কাছে কুণাল দাবি করেছেন, তিনিই সারদার চ্যানেলে নিয়ে এসেছিলেন মিঠুনকে, যিনি মাত্র কয়েকটা এপিসোড করে পুরো টাকা নিয়ে গিয়েছেন। ‘‘এত দিন উনি কেন টাকা ফেরত দিলেন না?’’— প্রশ্ন তুলেছেন কুণাল। ইডি’কে চিঠি দিয়ে তিনি এ-ও জানতে চেয়েছেন, আর এক অর্থলগ্নি সংস্থা অ্যালকেমিস্টের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে এখনও কী ভাবে কাজ করছেন মিঠুন?

মিঠুনের কী বক্তব্য?

এ দিন মুম্বই থেকে ফোনে ওঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘জানি না, কুণাল কেন আমার সম্পর্কে এমন কথা বলছে। ওকে আমি স্নেহ করি। কোনও দিন ওর সম্পর্কে খারাপ কথা বলিনি। বরং ইডি যখন জানতে চেয়েছিল, বলেছিলাম, কোনও চিটফান্ডের সঙ্গে কুণাল জড়িত বলে আমি বিশ্বাস করি না।’’

এমতাবস্থায় কুণালের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করতে পারবেন না বলে জানান মিঠুন। তবে ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা যাচ্ছে, মিঠুনের দাবি অনুযায়ী ২০০৯-এর পরে অ্যালকেমিস্টের সঙ্গে তাঁর সংশ্রব নেই। আর এত দিন টাকা নেওয়া নিয়ে তদন্ত চলছিল বলেই তিনি টাকা ফেরাতে পারেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE